অতিরিক্ত ভোজ্য আঁশ শরীরে ফোলাভাব আনতে পারে

ভোজ্য আঁশের সঙ্গে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকলে শরীরে ফোলাভাব আসতে পারে।

লাইফস্টাইল ডেস্কআইএএনএস/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Feb 2020, 07:29 AM
Updated : 6 Feb 2020, 07:29 AM

গবেষণা বলছে, যারা প্রচুর পরিমাণে ভোজ্য আঁশ গ্রহণ করেন তাদের খাদ্যাভ্যাসে ‘কার্বোহাইড্রেইট’ বেশি থাকার পরিবর্তে যদি ‘প্রোটিন’ বেশি থাকে তবে তাদের শরীরে ফোলাভাব দেখা দেওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

‘ক্লিনিকাল অ্যান্ড ট্রান্সলেশনাল গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি’ শীর্ষক জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণার জন্য উচ্চমাত্রায় ভোজ্য আঁশ সমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাস অনুসরণকারীদের ‘ক্লিনিকাল ট্রায়াল’ পর্যবেক্ষণ করেন গবেষকরা।

গবেষণার সহযোগী জ্যেষ্ঠ লেখক এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক নোয়েল মিউলার বলেন, “এটা সম্ভাব্য যে আমাদের গবেষণায় ‘প্রোটিন’ বেশি এমন খাদ্যাভ্যাস অনুসরণকারীদের শরীর ফুলে যাওয়ার শিকার হওয়ার কারণ ওই ‘প্রোটিন’ তাদের ‘মাইক্রোবায়োম’য়ের যৌগকে বাড়তি স্বাস্থ্যকর পর্যায়ে রূপান্তরিত করেছে। এখানে উল্লেখ্য যে, এই খাদ্যাভ্যাসে থাকা ‘প্রোটিন’য়ের বেশিরভাগই এসেছে বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ উৎস যেমন- মটরশুঁটি, শিমের দানা ও বাদাম থেকে।”

উচ্চমাত্রায় ভোজ্য আঁশ সমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাস শরীরে ফোলাভাব বয়ে আনার কারণ হল, ভোজ্য আঁশ হজমে সহায়ক কিছু প্রজাতির ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়, যা উপজাত হিসেবে তৈরি করে গ্যাস। এই ফলাফল ইঙ্গিত দেয় যে ‘মাইক্রোবায়োম’ বা অন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা পরিবর্তনে ‘কার্বোহাইড্রেইট’ ও ‘প্রোটিন’য়ের মতো পুষ্টি উপাদান ভূমিকা পালন করে।

এই গবেষণার জন্য ২০০৩ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে বস্টনে হওয়া ‘ডায়েটারি ক্লিনিকাল ট্রায়াল’য়ের ফলাফল বিশ্লেষণ করা হয়। এছাড়াও ব্যবহার হয় হৃদরোগ প্রতিরোধের জন্য ব্যবহৃত ‘অপটিমাল ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট ইন্টেক ট্রায়াল(ওমনিহার্ট)’ যাতে অংশ নেন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি রক্তচাপ আছে এমন ১৬৪ জন।

একটানা ছয় সপ্তাহের সময়সীমায় অংশগ্রহণকারীদের তিন ধরনের খাদ্যাভ্যাস দেওয়া হয়। স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাসে ফেরত আসার জন্য সময় দেওয়া হয় দুই সপ্তাহ।

প্রতিটি খাদ্যাভ্যাসই ছিল উচ্চমাত্রায় ভোজ্য আঁশ ও অল্প ‘সোডিয়াম’ সমৃদ্ধ। ‘ক্যালরি’র পরিমাণ সব খাদ্যাভ্যাসেই ছিল সমান। তবে পার্থক্য ছিল ‘ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট’য়ে। ‘কার্বোহাইড্রেইট’ বেশি এমন খাদ্যাভ্যাসে ক্যালরির বিবেচনায় ‘কার্বোহাইড্রেইট’ ছিল ৫৮ শতাংশ, ‘প্রোটিন’ ছিল ১৫ শতাংশ আর চর্বি ছিল ২৭ শতাংশ।

উদ্ভিজ্জ ‘প্রোটিন’ সমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাসে ছিল ‘কার্বোহাইড্রেইট’ ৪৮ শতাংশ, ‘প্রোটিন’ ২৫ শতাংশ আর চর্বি ২৫ শতাংশ।

আর চর্বি বেশি খাদ্যাভ্যাসে ছিল ‘কার্বোহাইড্রেইট’ ৪৮ শতাংশ, ‘প্রোটিন’ ১৫ শতাংশ এবং চর্বি ৩৭ শতাংশ।

২০০৫ সালে ‘ওমনিহার্ট ট্রায়াল’য়ের প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যায়, রক্তচাপ ও রক্তে ‘কোলেস্টেরল’য়ের মাত্রা কমাতে সবচাইতে কার্যকর ছিল উদ্ভিজ্জ ‘প্রোটিন’ ও উচ্চমাত্রায় চর্বি সমৃ্দ্ধ খাদ্যাভ্যাস। নতুন পর্যবেক্ষণে গবেষকরা, তিনধরনের খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ থেকে অংশগ্রহণকারীদের শরীরের ফোলাভাবের মধ্যে কী ধরনের পার্থক্য দেখা দিয়েছে তার ওপর মনযোগ দেন। 

গবেষণার প্রধান আবিষ্কার হল, প্রাথমিক অবস্থায় শরীরের ফোলাভাব ছিল ১৮ শতাংশ যা ‘কার্বোহাইড্রেইট’ বেশি খাদ্যাভ্যাস থেকে হয়েছে ২৪ শতাংশ। ‘প্রোটিন’ বেশি খাদ্যাভ্যাসে পৌঁছেছে ৩৩ শতাংশে আর চর্বি বেশি খাদ্যাভ্যাসে দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশে।

অর্থাৎ, উচ্চমাত্রায় ভোজ্য আঁশ গ্রহণ করার কারণে শরীর ফোলে একথা নিশ্চিত।

অন্যান্য খাদ্যাভ্যাস অনুসরণের ফলাফল নিয়েও পর্যবেক্ষণ করেন গবেষকরা। দেখা যায়, ‘প্রোটিন’ বেশি এমন খাদ্যাভ্যাসেই শরীর ফুলে যাওয়ার ‘কার্বোহাইড্রেইট’ বেশি খাদ্যাভ্যাসের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, “প্রোটিন সমৃদ্ধ ক্যালরির বদলে ‘কার্বোহাইড্রেট’ সমৃদ্ধ ক্যালরি যেমন পূর্ণ-শষ্য বা ‘হোল গ্রেইন’ খাবার বেছে নেওয়া এক্ষেত্রে শরীরের ফোলাভাব কমাতে সহায়ক হবে।”

আরও পড়ুন