‘নাইট-শিফট’য়ের কর্মীদের হৃদরোগের ঝুঁকি

পালা বদলের চাকরি যারা করেন তাদের ঘুমের সমস্যা থেকে নানান শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিতে পারে।

লাইফস্টাইল ডেস্কআইএএনএস/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2020, 10:51 AM
Updated : 5 Feb 2020, 10:51 AM

গবেষকরা বলছেন, যারা ‘শিফট’ ভিত্তিক চাকরি করেন তাদের ঘুম ও বিপাকক্রিয়াজনীত সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা উল্লেখযোগ্য হারে বেশি। আর এই সমস্যাগুলো একজন মানুষকে ক্রমেই ঠেলে দিতে থাকে হৃদরোগ, ‘স্ট্রোক’ এবং ‘টাইপ টু ডায়াবেটিস’য়ের দিকে।

বিশেষত যারা রাতের ‘শিফট’য়ে কাজ করেন তাদের এই ঝুঁকির মাত্রা বেশি। আবার যাদের ‘শিফট’য়ের সময় নিয়ত পরিবর্তনশীল তাদের ঘুম ও বিপাকক্রিয়াজনীত সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা আরও বেশি।

গবেষণার প্রধান লেখক, যুক্তরাষ্ট্রের ‘তৌরো ইউনিভার্সিটি’র ভারতীয় বংশদ্ভুত গবেষক শামা কুলকার্নি বলেন, “সমাজের নিরাপত্তা ও আর্থসামাজিক অবস্থা অনেকাংশে রাতের ‘শিফট’য়ে কর্মরত কর্মীদের উপর নির্ভরশীল। তাই তাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা জরুরি একটি বিষয়। এক গবেষণায় আমরা জানতে পারি রাতের ‘শিফট’য়ে কাজ করেন এমন নার্সদের নয় শতাংশ আক্রান্ত হন বিপাকক্রিয়াজনীত বিভিন্ন সমস্যায়। তবে দিনের ‘শিফট’য়ে কাজ করা নার্সদের মধ্যে এই সমস্যায় আক্রান্ত হয় মাত্র ১.৮ শতাংশ। অন্যান্য গবেষণা বলে, যত বেশি সময় এই ‘শিফট’ ভিত্তিক কাজ করা হয়, ততই ঝুঁকির মাত্রা বাড়ে।”

গবেষকরা বলেন, “রাতের ‘শিফট’য়ে কাজ করার কারণে শরীরের স্বাভাবিক চক্র, যাকে বলা হয় ‘সার্কাডিয়ান রিদম’, তাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এই চক্রই নিয়ন্ত্রণ করে স্নায়ু ও হরমোনজনীত ইঙ্গিত। ‘সার্কাডিয়ান রিদম’য়ে বিশৃঙ্খলার কারণে ঘুম ও জেগে থাকার চক্র তাল হারালে নষ্ট হয় হরমোনের ভারসাম্য, বেড়ে যায় ‘কর্টিসল’, ‘ঘ্রেলিন’ ও ‘ইন্সুলিন’। আর কমে যায় ‘সেরোটনিন’ ও অন্যান্য হরমোন।”

হরমোনের এই ভারসাম্যহীনতাই বিপাকক্রিয়াজনীত সমস্যা তৈরি করে এবং ডেকে আনে একাধিক দীর্ঘমেয়াদী রোগ। তাই ‘শিফট’ ভিত্তিক কর্মীদের উচিত হবে প্রতিদিন একই সময়ে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো এবং ঘুমানোর সময়টা সন্ধ্যা কিংবা রাতের যতটা সম্ভব কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করা। এতে ‘সার্কাডিয়ান রিদম’য়ে বিশৃঙ্খলার মাত্রা কমবে।

এর বাইরে বাড়তি ২০ থেকে ১২০ মিনিট ঘুমানোর অভ্যাস করতে পারেন অবসাদ কাটাতে। আলোর সংস্পর্শে থাকলে জেগে থাকা সহজ হয়। তাই রাতের কর্মীদের যত বেশি সম্ভব আলোতে থাকার পরামর্শ দেন গবেষকরা।

কুলকার্নি বলেন, “অন্যান জরিপে দেখা গেছে ‘শিফট’ ভিত্তিক কর্মীদের খাওয়া স্ন্যাকস’য়ে ‘স্যাচুরেইটেড ফ্যাট’ ও চিনির মাত্রা তুলনামুলক বেশি থাকে। আর প্রোটিন ও সবজি থাকে কম। কোনো এক বেলার খাবার না খাওয়ার মাত্রাও তাদেরই বেশি। এটা ঠিক যে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পর্যাপ্ত ঘুম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং শরীরচর্চা সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে ‘শিফট’ ভিত্তিক কর্মীদের কাজের সময়ের কারণে সেগুলো মেনে চলা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তাই সবার উচিত হবে তাদের নিজস্ব স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা মেনে চলতে সাহায্য করা।”

‘দ্য জার্নাল অফ দ্য আমেরিকান অস্টিওপ্যাথিক অ্যাসোসিয়েশন’য়ে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন