বিশেষ করে কন্যা সন্তানকে প্রথমবার ঋতুস্রাব সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে অনেকেই উপায় খুঁজে পাননা কীভাবে বললে বিষয়টা সহজ হবে।
তবে কন্যা সন্তানকে ঋতুস্রাবের সঙ্গে পরিচয় করানো এবং তা সামলানোর উপায় শিখিয়ে দেওয়ার দায়িত্বও তো মা-বাবারই। সে যত বেশি বুঝতে শিখবে ততই এর সঙ্গে মোকাবিলা করতে তৈরি হয়ে উঠবে।
ঋতুস্রাব শুরু হওয়া বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা। তবে সঠিক শব্দচয়নের মাধ্যমে বিষয়টি সম্পর্কে সহজে পরিচিতি দেওয়া সম্ভব।
মানসিকস্বাস্থ্য-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে জানানো হল বিস্তারিত।
রক্তপাতটা সমস্যা নয়, এটাই স্বাভাবিক: ঋতুস্রাব সম্পর্কে জানা না থাকলে হঠাৎই জামা-কাপড়ে রক্ত আবিষ্কার করার অভিজ্ঞতা একজন কিশোরীর জন্য হতে পারে ভয়ঙ্কর। মনে হতে পারে তার সঙ্গে অস্বাভাবিক কিছু একটা ঘটছে, যা ঠিক নয়। বাবা-মা হিসেবে তার এই ধারণা পাল্টানোর দায়িত্ব আপনারই। তাকে বোঝাতে হবে তার খারাপ কিছু হয়নি, বরং যা হচ্ছে সেটাই স্বাভাবিক। তাকে এটাও বোঝাতে হবে যে ঋতুস্রাব হলেই যে প্রতিমাসে তার স্বাভাবিক জীবন থমকে যাবে তা নয়। এটা কোনো রোগ নয় এবং প্রতিটি নারী একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক জীবন চালিয়ে যাচ্ছেন অবিরত। সন্তানের রক্তপাতের ভয় দূর করতে হবে, ঋতুস্রাবকে সাধারণ আলোচনাকে সাধারণ বিষয়ে পরিণত করতে হবে যতটা সম্ভব।
ব্যথা ও অন্যান্য সমস্যা: ঋতুস্রাব মানে শুধুই রক্তপাত নয়, সঙ্গে আছে ব্যথা, যন্ত্রণা, শারীরিক মানসিক অস্বস্তি ইত্যাদি অনেক কিছু। কি হতে যাচ্ছে এবং তা কীভাবে সামাল দিতে হবে তা জানা থাকলে ঋতুস্রাবের দিনগুলো পার করা আরও সহজ হবে আপনার সন্তানের জন্য।
ঋতুস্রাবের ব্যাপারে জানানোর পাশাপাশি তাকে ‘প্রিমেন্সট্রুয়াল সিনড্রোম (পিএমএস) সম্পর্কেও জানাতে হবে। হরমোনের তারতম্যের কারণে হওয়া অবসাদ, ব্যথা, ফোলাভাব, মেজাজের তারতম্য, ব্রণ ইত্যাদি নিয়েও আলোচনা করা জরুরি। এই বিষয়গুলোর মধ্য যাওয়া যে স্বাভাবিক তা সন্তানকে বোঝাতে হবে এবং তাদের সঙ্গে মোকাবেলা করার সাহস যোগাতে হবে বাবা-মাকেই।
লজ্জা পেলে চলবে না: সভ্যতার এতযুগ পরও ঋতুস্রাব নিয়ে আলাপ করতে গিয়ে মানুষ লজ্জা পায়, ফিসফিসিয়ে কথা বলে। বড়রাই যদি এমন করে তবে যাদের প্রথমবারের মতো ঋতুস্রাবের ঘটনা ঘটছে তাদের মনবল ভেঙে যায়, এবিষয়ে মানসিক অস্বস্তি বাড়ে, বাড়ে ভয়ও।
ঋতুস্রাব নিয়ে আলোচনা করতে হবে খোলামেলাভাবে, যাতে আপনার সন্তান নিঃসঙ্কচে আপনার সঙ্গে আলাপ করতে পারে, তার সমস্যার কথা জানাতে পারে। শুধু মা নয়, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও উচিত এই বিষয়ে সাধারণ আলোচনার বিষয়ে পরিণত করার চেষ্টা করা। সবকিছুই আপনার হাতে, বাবা-মা ব্যাপারটাকে সহজভাবে নিতে পারলে সন্তানও সেই ধাঁচই অনুসরণ করবে।
এক্ষেত্রে আলোচনা ইতিবাচকভাবে শুরু করাটাই ভালো। ঋতুস্রাব শুরুর পর থেকেই নারীর শরীরের ব্যাপক পরিবর্তন আসে, এই ব্যাপারটা যে ভালো ব্যাপার সেটা আপনার কথার ধাঁচেই বোঝাতে হবে সন্তানকে। কোনো প্রতীকী উদাহরণ নয়, সরাসরি জানাতে পারেন কী হয়, কীভাবে হয়, কেন হয় এবং তার কী করণীয়। দুর্ঘটনা থেকে রক্তপাত আর ঋতুস্রাবের রক্তপাতের পার্থক্যটা সন্তানকে বোঝাতে হবে।
নেতিবাচক কোনো শব্দ ব্যবহার করা যাবে না এবং ঋতুস্রাব সম্পর্কে নিজের অভিমত সন্তানের উপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত হবে না। আপনি ঋতুস্রাবকে যত সহজভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন ততই মঙ্গল।
প্রস্তুতি: নির্দিষ্ট বয়সসীমায় পৌঁছানোর পর যেকোনো সময় আপনার সন্তানের ঋতুস্রাব শুরু হতে পারে। তাই ঋতুস্রাব নিয়ে আলোচনার প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি তা সামাল দেওয়ার রসদও যোগান দিতে হবে। ঋতুস্রাবের সময় ব্যবহৃত উপকরণগুলো সঙ্গে পরিচয় করানো, ব্যবহার করতে শেখানো, তাদের ভালোমন্দ, সেসময়কার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সবকিছু সম্পর্কে দীক্ষা দিতে হবে আগেভাগেই। আর ঘরের বাইরে যাওয়ার সময় তার কাছে কিছু উপকরণ থাকাটাও নিশ্চিত করতে হবে।
ছবি: রয়টার্স।
আরও পড়ুন