তবে এর সঠিক ব্যবহার না জানলে, পর্যাপ্ত দক্ষতা না থাকলে প্রসাধনী যতই ভালো হোক না কেনো, সাজ বা ‘মেইকআপ’ হতে পারে জঘন্য।
ক্যানভাসে ছবি আকার মতো ‘মেইকআপ’ও শিল্পের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। যেখানে ক্যানভাস হল একজন নারীর চেহারা। আর এখানেও জানার আছে, শেখার আছে অনেক কিছু। যার জন্য দেশ বিদেশের বিভিন্ন ‘মেইকআপ’ শিল্পীকে অনুসরণ করেন নারীরা।
আমাদের দেশের এমনই একজন ‘মেইকআপ’ শিল্পী ফারহানা চৈতি। আজকে জানানো তারই শিল্পী হয়ে ওঠার গল্প।
ফারহানা চৈতি দেশের একজন স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সাজসজ্জা বিশেষজ্ঞ এবং ভিন্নধর্মী ‘মেইকআপ’ শিল্পী। তার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা বাংলাদেশেই। বরাবরই তার মেইকাআপের প্রতি ছিল প্রবল আগ্রহ। আর স্বামীর কাজের সুবাদে কোরিয়া গিয়ে ‘মেইকআপ’য়ের জগতে প্রবেশের অনুপ্রেরণায় হাওয়া লাগে। তাই নিজের পছন্দের বিষয়টিতে আরও দক্ষ হতে এবং ভিন্নধর্মী ‘মেইকআপ’ বিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিতে পাড়ি জমান এশিয়ার ফ্যাশন, ‘মেইকআপ’ এবং ‘স্টাইল’য়ের প্রাণকেন্দ্র সিউলের এমবিসি বিউটি একাডেমিতে, শুরু করেন এক বছরের ডিপ্লোমা কোর্স।
ফারহানা চৈতির বিশ্বাস একাধারে পেশাদারিত্ব, উন্নত প্রযুক্তি, সৃজনশীলতার প্রয়োগের মাধ্যমে ‘মেইকআপ’ এবং ‘হেয়ারস্টাইলিং’য়ের ক্ষেত্রে শক্তিশালী ভিত্তি তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশের সৌন্দর্য শিল্পে বড় ধরনের অবদান রাখা সম্ভব। বর্তমানে তার লক্ষ্য হল, নিজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ‘মেইকআপ’য়ে উৎসাহীদের মধ্যে সঠিক দক্ষতা এবং মানসিকতা তৈরি করার মাধ্যমে বাংলাদেশের সৌন্দর্য শিল্পের বিকাশে সহায়তা করা। আর বাংলাদেশের ‘মেইকআপ’ শিল্পের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া।
“নিজেই নিজের ‘মেইকআপ’ করা আর অন্যের ‘মেইকআপ’ করিয়ে দেওয়া এক নয়। অন্যকে ‘মেইকআপ’ করিয়ে দেওয়া বেশ কঠিন। কারণ, মানুষের চেহারার বৈশিষ্ট্যের তারতম্য। অন্যকে মেইকআপ করিয়ে দেওয়ার আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ত্বকের ধরণ এবং তাতে থাকা বিভিন্ন সমস্যা বিবেচনা করা, কোন ত্বকের জন্য কোন ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করতে হবে এবং কেমন সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে সেটা জেনে রাখা প্রয়োজন। আর অবশ্যই ‘মেইকআপ’কে পেশা হিসেবে নিতে হবে ভালোবেসে, অন্য কিছুর জন্য নয়।”
‘ফারহানা চৈতি'স মেকওভার ফিনেস’ নামে নিজস্ব ‘মেইকআপ স্টুডিও’ প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা করছেন ফারহানা। সামনের দিনগুলিতে এই শিল্প আরও উন্নতি করবে তা আশা করে যায়।
তিনি বলেন, “একজন ব্যক্তির সৌন্দর্য তার আত্মবিশ্বাস এবং ইতিবাচক মনোভাব দিয়ে শুরু হয়। আবেগ, পরিপূর্ণতা এবং সৃজনশীলতার সাথে চেহারাটিকে ফুটিয়ে তোলাই ‘মেইকআপ’ শিল্পীর কাজ।”
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের বেশ কিছু ‘মেইকআপ’ আর্টিস্টদের হাত ধরে বাংলাদেশের ‘মেইকআপ’ শিল্পে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় ‘মেইকআপ’ বিষয়ক লেখালেখি করেছেন। ২০১৮ এর ‘ওয়ার্ল্ড কটন ডে ফ্যাশন শো’তে কাজ করেছেন।
এছাড়াও সিউলে থাকার সময় ‘গ্লোবাল বিউটি এক্সপো ২০১৭’-তে অংশ নিয়ে বিয়ের ‘মেইকআপ’য়ে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক বিউটি এক্সপোতেও অংশ নেন। যেখানে বিভিন্ন ‘হেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’সহ কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া ও এশিয়া প্যাসিফিকের শীর্ষস্থানীয় বারোটি দেশের হেয়ারস্টাইলিস্টরা অংশ নিয়েছিলেন।
অভিজ্ঞতা, কাজের প্রতি আবেগ এবং স্টাইল সেন্সের কারণে ব্যক্তিগত এবং পেশাদার দুই ক্ষেত্রেই মাইকেল পোহ তার কাছে অনুপ্রেরণা। মাইকেল পোহ এশিয়ার একজন বিখ্যাত হেয়ার স্টাইলিস্ট এবং মালয়েশিয়ার হেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট।
মালয়েশিয়ায় থাকাকালীন ফারহানা চৈতি নিয়মিত ফেমিনাইন ম্যাগাজিন, অ্যাস্ট্রো টিভি এবং প্রবাসী বাঙালিদের কমিউনিটি কুয়ালালামপুর-এর ‘মেইকআপ’ এবং ‘হেয়ারস্টাইলিস্ট’ হিসাবে পার্টি ‘মেইকআপ’, বিয়ের ‘মেইকআপ’ থেকে ‘থিম মেইকআপ’ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরণের ‘মেইকআপ’যের উপর কাজ করেছেন।
একজন ‘মেইকআপ আর্টিস্ট’য়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল তার ক্লায়েন্ট কী চায় এবং তার পোশাকের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা। অনুষ্ঠানের পোশাক এবং ক্লায়েন্টের মুখের বৈশিষ্ট্যগুলি বিবেচনা করেই ঠিক করতে হয় কি ধরনের ‘মেইকআপ’ এই ক্লায়েন্টটির জন্য উপযুক্ত। যদিও ক্লায়েন্টেরও কিছু নির্দিষ্ট চাওয়া থাকে। সেই চাওয়াগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে তার পছন্দমতো ‘লুক’ দেওয়াটাই একজন মেইকআপর আর্টিস্টের প্রধান কাজ।
তার মতে, “সবার উচিত নিজের ত্বকের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ‘মেইকআপ’য়ের পণ্য বাছাই করা। ত্বকে কী ধরনের পণ্য মানানসই হবে সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা করে নেওয়া ভালো।”
‘বিউটি এক্সপার্ট’দের পরামর্শের পাশাপাশি ভিডিও ‘টিউটোরিয়াল’ এবং ‘মেইকআপ’ সংক্রান্ত ব্লগগুলো পড়া সবসময় সহায়তা করে সঠিক পণ্য বাছাই করতে। ভালো পণ্যগুলো দামি হলেও সেগুলোই বাছাই করে ব্যবহার করা ভালো।
ফেইসবুকে ফারহানা চৈতি ও তার মেইকআপ কৌশল সম্পর্কে আরও জানা যাবে ‘ফারহানা চৈতি'স মেকওভার ফিনেস’ পেইজ থেকে।