শীতকালে শীত লাগবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে সব মানুষের শীতের অনুভূতি একরকম নয়। কেউ বেশি শীত সহ্য করতে পারেন কেউ পারেন না।
আবার বিপাকক্রিয়া গতিতে পার্থক্য থাকায় নারী-পুরুষের শীত সহ্য করার ক্ষমতা ভিন্ন।
তবে শীতের সময় কিংবা গরমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে অন্যদের চাইতেও বেশি শীত অনুভূত হওয়ার নানান স্বাস্থ্যগত কারণ থাকতে পারে।
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হল সব ঋতুতেই বাড়তি শীত অনুভূত হওয়ার সম্ভাব্য কিছু কারণ।
রক্তশূন্যতা: শরীরে লোহিত রক্তকণিকার অভাব হওয়াকে বলা হয় ‘অ্যানিমিয়া’ বা রক্তশূন্যতা। যে কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির বেশি শীত অনুভূত হতে পারে। লোহিত রক্তকণিকার কাজ হল পুরো শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করা। তাই কোনো কারণে শরীরে এর অভাব দেখা দিলে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেবে। ফলে শীত লাগবে বেশি।
‘অ্যানিমিয়া’ হওয়ার একটি বড় কারণ হল শরীরে লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ লৌহ নেই। অথবা লোহিত রক্তকণিকা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যার কারণ হতে পারে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ‘ইনফ্লামেইটরি বাওয়েল ডিজিজ’, রক্তক্ষরণ, গর্ভধারণ ইত্যাদি।
এক্ষেত্রে শরীরে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়, তাই ঠাণ্ডা লাগে বেশি।
হাইপোথাইরয়েডিজম: এই রোগে ‘থাইরয়েড’ গ্রন্থি পর্যাপ্ত পরিমাণ ‘থাইরয়েড’ হরমোন তৈরি করতে পারে না। এই হরমোন শরীরের হজমক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। ‘থাইরয়েড’ হরমোনের অভাব থাকলে শরীরের অভ্যন্তরীন তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়। ফলে শীত বেশি অনুভূত হয়। ‘হাইপোথাইরয়েডিজম’য়ের অন্যান্য উপসর্গের মাঝে আছে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা, হতাশা, শুষ্ক ত্বক, অবসাদ ও অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি।
ঘুম ঘুমভাব: শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ঘুম বেশ বড় ভূমিকা পালন করে। ঘুমের অভাব থাকলে তা শরীরের ‘সার্কাডিয়ান রিদম’ বা ২৪ ঘণ্টার স্বাভাবিক নিয়মে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। যে কারণে দৈনন্দিন স্বাভাবিক কার্যকলাপে বাধা সৃষ্টি হয়। তাই সবসময় যদি শীত অনুভূত হয় তবে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।
সম্প্রতি ওজন কমা: অভ্যন্তরিন তাপমাত্রা বজায় রাখতে শরীর ব্যবহার করে চর্বি। তাই সাম্প্রতিক সময়ে যারা অনেকটা ওজন কমিয়েছেন তাদের এসময় বেশি শীত অনুভব হতে পারে। তবে সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। খাদ্যাভ্যাসে ক্যালরির পরিমাণ কম হলে বিপাকক্রিয়া মন্থর হয় এবং শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সমস্যা দেখা দেয়। খাওয়াজনীত যে কোনো জটিলতা থাকলে তাদেরও বেশি শীত লাগার সমস্যা হতে পারে।
‘রেইনাড’স ডিজিজ’: এটি একটি দুর্লভ রক্তনালীজনীত রোগ, যে কারণে তাপমাত্রা কমে গেলে রক্তনালী সরু হয়ে যায়। স্বভাবতই, এতে আক্রান্ত ব্যক্তির ঠাণ্ডা লাগবে বেশি। অনেকসময় আক্রান্ত ব্যক্তির হাত-পা ঠাণ্ডায় নীলবর্ণ হয়ে যায়, সেখানে রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়ায় বোধশক্তি হারিয়ে যায়। শুধু আবহাওয়া নয়, মানসিক চাপের কারণেও একই সমস্যা দেখা দিতে পারে আক্রান্ত ব্যক্তির। দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার মাধ্যমেই বেশিরভাগ সময় এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ছবির মডেল: আরিয়ানা জামান এলমা। মেইকআপ: আরিফ। ফটোগ্রাফার: তানভির খান। ছবি সৌজন্যে: ত্রয়ী ফটোগ্রাফি স্টুডিও।
আরও পড়ুন