ত্রিশের কোঠায় জরুরি স্বাস্থ্য পরীক্ষা

বৃদ্ধ বয়সে যথাসম্ভব সুস্থ্য থাকার প্রয়াস শুরু করতে হবে মধ্যবয়স থেকেই।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Dec 2019, 08:39 AM
Updated : 21 Dec 2019, 08:39 AM

রোগ প্রতিষেধনের চাইতে প্রতিরোধ সর্বদাই ভালো। আর স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় প্রতিটি ধাপ গুরুত্বপূর্ণ। তাই শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে আগেভাগেই জানার জন্য ‘চেক-আপ’ করানো, সুস্থ্যতা ধরে রাখার জন্য সদা সতর্ক থাকা, নিজের যত্ন নেওয়াকে হেলাফেলা করা উচিত নয়। কারণ এই অভ্যাসের মাধ্যমেই হয়ত ভবিষ্যতের প্রানঘাতি রোগ প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়বে এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে মুক্তি পাবেন নিশ্চিত অকাল মৃত্যুর কবল থেকে।

মাঝবয়সে পৌছানোর পর এই অভ্যাসটি বিশেষ গুরুত্ব পায়। কারণ, এই বয়সেই শরীর দুর্বল হতে শুরু করে, শরীরে রোগের বাসা বাধা সহজ হতে থাকে। অনেকেই শুধু রক্তে শর্করার মাত্রা আর ‘কোলেস্টেরল’য়ের মাত্রা দেখেই ক্ষান্ত দেন, তবে শরীর প্রকৃত অবস্থা জানতে প্রয়োজন আরও কয়েকটি স্বাস্থ্য পরীক্ষা। স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইটের প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হলো জরুরি এই স্বাস্থ্য পরীক্ষাগুলো সম্পর্কে।

ইসিজি টেস্ট: হৃদরোগ বয়সের অপেক্ষা করে না, হানা দিতে পারে যেকোনো সময়। তাই যাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার বিন্দুমাত্র আশঙ্কা আছে তাদের উচিত হবে ৩০ বছর বয়সের পর থেকেই ‘ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইসিজি)’ করানো। এর মাধ্যমে হৃদযন্ত্রের অবস্থা এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারবেন এবং নিতে পারবেন তা মোকাবেলা করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

জেনেটিক টেস্ট: জিনগত বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা বা ‘জেনেটিক টেস্ট’য়ের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগের উপসর্গ ও তার ভবিষ্যত ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে পারবেন। পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে রোগের ঝুঁকি মোকাবেলা করার আদর্শ উপায়ও উদ্ধার করতে পারবেন পরীক্ষার ফলাফল থেকেই। কিছু প্রতিরোধক জিনগত বৈশিষ্ট্যের পরীক্ষা ‘ডিএনএ’য়ের পরিবর্তন, ক্যান্সারের সম্ভাবনা ইত্যাদি জানাতে পারে। ভবিষ্যত সন্তান যাতে সুস্থ্য সবল হয় সে সুরক্ষা নিশ্চিত করার উপায়ও জানতে পারবেন এই ধরনের পরীক্ষার সাহায্যে।

লিপিড প্রোফাইল: স্বাস্থ্যকর ও অস্বাস্থ্যকর ‘কোলেস্টেরল’য়ের মাত্রার চুলচেরা বিশ্লেষণ এবং হৃদযন্ত্রের অবস্থা জানা যাবে ‘লিপিড প্রোফাইল টেস্ট’য়ের মাধ্যমে। বয়স ৩০ পেরোনোর পর প্রতি দুই বছরে একবার এই পরীক্ষা করানো উচিত প্রতিটি মানুষের। হৃদরোগ, ‘অবেসিটি’, ডায়াবেটিস ইত্যাদির বংশগত ঝুঁকি থাকলে এই পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ এড়ানোর উপায় সম্পর্কে জানতে পারবেন। ‘এলডিএল’ বা অস্বাস্থ্যকর ‘কোলেস্টেরল থাকতে হবে ১৩০ এর নিচে আর ‘এইচডিএল’ বা স্বাস্থ্যকর ‘কোলেস্টেরল’ থাকতে হবে ৬০ এর উপরে।  

লিভার ফাংশন টেস্ট: ‘লিভার কেমিস্ট্রি টেস্ট’ নামেও পরিচিত এই ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা। এই পরীক্ষাতে শরীরের বিভিন্ন ‘এনজাইম’, ‘প্রোটিন’, ‘ট্রাইগ্লিসেরাইড’ ইত্যাদির মাত্রা নির্ণয় করা হয়। এর মাধ্যমে যকৃতের স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং ‘হেপাটাইটিস’ ও অন্যান্য সংক্রমনের ঝুঁকি সম্পর্কে জানা যায়। রোগের সংক্রমন ছড়ানোর গতি, রোগের তীব্রতা এবং চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে চিকিৎসকদের সাহায্য করবে এই পরীক্ষা। ৩০ বছর বয়সের পর প্রতিবছর একবার এই পরীক্ষা করানো উচিত।  

প্যাপ স্মিয়ার ও কোলোনোস্কোপি টেস্ট: ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার পর থেকেই নারীদের জন্য নিয়মিত ‘প্যাপ স্মিয়ার’ আবশ্যক। আর বয়স ৩০ পেরোলে পরীক্ষা করানোর পরিমাণ বাড়াতে হবে এবং সেই সঙ্গে ‘এইচপিভি টেস্ট’ করাতে হবে। স্ত্রী জননাঙ্গের ‘সারভিক্স’য়ের ক্ষুদ্র পরিবর্তন সনাক্ত করা যাবে এই পরীক্ষায় এবং ‘সারভাইকাল ক্যান্সার’ ও অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি সম্পর্কে জানা যাবে ও প্রতিরোধের পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।

অপরদিকে ‘কোলোনোস্কোপি টেস্ট’ পুরুষদের জন্য জরুরি। এই পরীক্ষাগুলো সাধারণত ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সে করানো শুরু হয়। তবে চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন ৩০ বছর বয়সের পর থেকেই পরীক্ষা করানো শুরু করতে, যাতে রোগ প্রাথমিক অবস্থাতেই ধরা পড়ে। বিশেষ করে যাদের এই রোগে বংশগত ঝুঁকি আছে তাদের বেশি সতর্ক হতে হবে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে অন্ত্রের বিভিন্ন রোগ, রক্তপাত এবং অন্ত্রে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকির পূর্বাভাস পাওয়া যাবে।