রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দ্বিতীয়বারের মতো এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এই মেলা।
পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা, পোশাক-পরিচ্ছদ, সংস্কৃতি, খাবার ইত্যাদির সঙ্গে শহরের মানুষকে পরিচয় করিয়ে দিতেই এই মেলার আয়োজন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
এবারের মেলায় প্রায় ১০০টি স্টল বসেছে, যার মধ্যে সিংহভাগই বিভিন্ন পাহাড়ি খাবারের দোকান। এমনই একটি স্টল সিএইচটি এক্সপ্রেস।
পাহাড়ি পিঠার পাশাপাশি নকশি পিঠা, চাপটি, তেলের পিঠা, মালপোয়া ইত্যাদি দেশীয় পিঠার স্বাদ নিতে পারবেন যো তৈরি হচ্ছে পাহাড়িদের হাতে পাহাড়ি কায়দায়। মেলার দর্শণার্থীদের মাঝে খাবারের প্রতি প্রবল আগ্রহ চোখে পড়ার মতো।
তৈরি খাবারের পাশাপাশি জুম পদ্ধতিতে চাষ করা বিভিন্ন শাকসবজি, ফল, কাঁচা তরকারি, মশলা, ভেষজ উপকরণ, চাল, ডাল ইত্যাদি সবকিছুর পসরা সেজেছে মেলায়।
‘জুম ফুড’ নামক স্টলটি এ্মনই একটি স্টল। তুলনামূলক বড় এই স্টলে পাহাড়ি, কমলা, মাল্টা, ভূট্টা, আনারস, কলা, পেঁপে ইত্যাদি বিভিন্ন ফল মিলবে। এছাড়াও বিশেষ পাহাড়ি ফল তো আছেই। বিন্নি চাল, নানানপদের মসলা, ডাল- কি নেই এখানে। মেলা ঘুরতে এসে মাসের বাজার সেরে ফেলতে পারবেন অনায়াসে।
শান্তিময় চাকমা বলেন, “জুম ঘরের সিঁড়িকে বলা হয় ‘হবাক’, বীজ বোনার জন্য মাটি খুড়তে যে দা ব্যবহার হয় তার নাম ‘চুচ্চাং তাগল’, আরকটি ছোট কাস্তেও থাকে যার নাম ‘চাঁড়ি’, পানি পানের পাত্রের নাম ‘ঘুত্তি’, সেটা যে শিকেয় রাখা হয় তার নাম ‘জুরি’।”
এছাড়াও জানা যাবে কীভাবে পাহাড়ি মানুষ চাষের কাজ করেন। ফসল ওঠানোর পর জমি ফাঁকা না রেখে কীভাবে সেখানে স্বল্প সময়ে ফলের চাষ করা যাবে ইত্যাদি।
তিনি বলেন, “শুরুটা টিশার্ট দিয়ে হলেও বর্তমানে কাজের পরিধি বেড়েছে। পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহি কোমর তাঁতে বোনা রেয়ন সুতার কাপড় দিয়ে তৈরি করছি পাঞ্জাবি। ‘রেয়ন’ কাপড় হিসেবেই এই কাপড় আমাদের সমাজে পরিচিত। এছাড়াও বান্দরদনের বম সম্প্রদায়ের হাতে বোনা মাফলার নিয়ে এসেছি আমরা। আরও আছে গায়ের চাদর, যার পাহাড়ি নাম ‘বর্গী।”
ঢাকার কাজিপাড়ায় তাদের একটি দোকান আছে।
খাবার আর পোশাকের দোকানে ফাঁকে কিছু অলঙ্কার ও ঘর সাজানোর অনুষঙ্গের দোকানও চোখে পড়বে। ঋতিশা চাকমার ‘বক্স অফ অর্নামেন্টস’ এমনই একটি দোকান যারা কাজ করেন রুপা নিয়ে।
পাহাড় আর সমতলের মানুষের ব্যবহার করা অলঙ্কারের ঐতিহ্য আর নকশাকে একত্রিত করে আধুনিক ধাঁচের গহনা তৈরিই তার উদ্দেশ্য। ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে সেই লক্ষ্য অর্জনেই তিন বছর ধরে কাজ করছেন ঋতিশা।
স্টল ছাড়াও মেলায় মাঝখানে প্রতিদিন থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। যেখানে বাঙালি গান তো থাকবেই, সঙ্গে থাকবে পাহাড়িদের লোকজ সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনা। দেশের পার্বত্য অঞ্চলগুলো থেকে প্রতিদিনই বিভিন্ন শিল্পি গোষ্ঠী আসবেন তাদের পরিবেশনা নিয়ে।