স্থূলতা থেকে মস্তিষ্কের ক্ষয়

স্থূলতা থেকে সক্রিয় হতে পারে স্নায়ুতন্ত্রের সংক্রমণ। যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মস্তিষ্কের একাধিক গুরুত্বপুর্ণ অংশ।

লাইফস্টাইল ডেস্কআইএএনএস/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Nov 2019, 11:21 AM
Updated : 27 Nov 2019, 11:21 AM

এরকম ফলাফল পাওয়া গিয়েছে ব্রাজিলের ‘ইউনিভার্সিটি অফ সাও পাওলো’ একটি গবেষণায়।

‘এমআরআই’ প্রযুক্তি উন্নয়নের ধারায় পাওয়া গেছে ‘ডিফিউশন টেনসর ইমেজিং (ডিটিআই)। মস্তিষ্কের সংকেতবাহক ‘হোয়াইট ম্যাটার’য়ের চারপাশে পানি কীভাবে ছড়িয়ে যায় তা দেখা যায় এই প্রযুক্তির সাহায্যে। আর এটাই গবেষকদের সরাসরি মস্তিষ্কের ক্ষতির মাত্রা পর্যবেক্ষণের সুযোগ করে দিয়েছে।

ব্রাজিলের ইউনিভার্সিটি অফ সাও পাওলো’র অধ্যাপক এবং এই গবেষণার সহ-লেখক পামেলা বের্তোলাৎজি বলেন, “বয়সন্ধিকাল পার করছে এমন স্থূলকায়দের মস্তিষ্কের সেইসব অংশে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে যে অংশগুলো খাওয়ার রুচি, আবেগ ও জ্ঞানীয় কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউটিও)’র তথ্যানুযায়ী, বিশ্বব্যাপি স্থূলকায় শিশুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ১৯৯০ সালে ছিল তিন কোটি ২০ লাখ। ২০১৬ সালের তা দাঁড়িয়েছে চার কোটি ১০ লাখে।

এই গবেষণার জন্য ৫৯ জন অস্বাস্থ্যকর ওজনধারী আর ৬১ জন স্বাস্থ্যবান শিশুর ‘ডিটিআই’য়ের ফলাফল পর্যালোচনা করা হয়। অংশগ্রহণকারীদের বয়স ছিল ১২ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে।

‘ডিটিআই’য়ের তথ্য থেকে গবেষকরা ‘ফ্র্যাকশনাল অ্যানিসোট্রপি (এফএ)’ নামক পরিমাপক পদ্ধতি দাঁড় করান, যা মস্তিষ্কের ‘হোয়াইট ম্যাটার’য়ের অবস্থা দেখায়। ‘ফ্র্যাকশনাল অ্যানিসোট্রপি’র মাত্রা কমে যাওয়া মানে হল মস্তিষ্কের ‘হোয়াইট ম্যাটার’য়ের ক্ষতির মাত্রা বেড়েছে।

স্থূলকায় শিশুদের ‘ফ্র্যাকশনাল অ্যানিসোট্রপি’র মাত্রা কমতে দেখা যায় মস্তিষ্কের ‘কর্পাস ক্যালোসাম’ অংশে। যে আছে একগুচ্ছ স্নায়ুতন্ত্র যা মস্তিষ্কের ডান ও বাম অংশের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে।

‘মিডল অর্বিটোফ্রন্টাল গাইরাস’য়েও ‘ফ্র্যাকশনাল অ্যানিসোট্রপি’য়ের মাত্রা কমতে দেখা যায়। মস্তিষ্কের এই অংশ নিয়ন্ত্রণ করে আবেগ ও প্রাপ্তির সন্তুষ্টি। আর স্থূলকায় শিশুর মস্তিষ্কের কোনো অংশেই ‘ফ্র্যাকশনাল অ্যানিসোট্রপি’র মাত্রা বাড়তে দেখা যায়নি।

গবেষকদের মতে, ক্ষতির এই ধারা কয়েকটি সংক্রামক নির্ণায়কের সঙ্গে মেলে। যেমন: ‘লেপ্টিন’, চর্বি কোষ থেকে তৈরি হরমোন যা কুপ্রভাবিত করে কর্মশক্তি ও চর্বি জমাকে।

কিছু স্থূলকায় মানুষের উপর ‘লেপ্টিন’ও প্রভাব ফেলতে পারে না। ফলে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমে থাকার পরেও তাদের খাওয়ার মাত্রা কমে না। এই ক্ষেত্রে চর্বি কোষগুলো বেশি পরিমাণে ‘লেপ্টিন’ তৈরি করতে শুরু করে।

‘হোয়াইট ম্যাটার’ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার প্রভাব পড়ে ‘ইন্সুলিন’ তৈরির মাত্রার ওপর।

বের্তোলাৎজি বলেন, “আমাদের গবেষণায় মস্তিষ্কের পরিবর্তন আর হরমোন উৎপাদনের মাত্রা মধ্যে সম্পর্কে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ভবিষ্যতে এই অংশগ্রহনণকারীদের ওজন কমানো চিকিৎসা দিয়ে পুনরায় তাদের মস্তিষ্কের ‘এমআরআই’ করা হবে এটা জানতে যে মস্তিষ্কের ওই ক্ষয়পূরণ করা সম্ভব কি না।”

যুক্তরাষ্ট্রের রেডিওলজি সোসাইটি অফ নর্থ আমেরিকা (আরএসএনএ)’য়ের বার্ষিক সম্মেলনে এই গবেষণা উপস্থাপন করা হবে।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন