প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে ফুসফুস পরিষ্কার করা যায়।
Published : 07 Nov 2019, 08:48 PM
দিল্লির মতো না হলেও আমাদের দেশে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে বায়ূ দূষণের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেহের বিভিন্ন অংশ। যে কারণে চোখ জ্বালাপোড়া, গলা ব্যথা, দম ফুরিয়ে আসা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। এই দূষিত বাতাস শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করে ধুমপানের সমান ক্ষতি করছে। আর দীর্ঘদিন এই দূষিত বাতাসের সংস্পর্শে আসার কারণে দেখা দিতে পারে দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুসের রোগ।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের তথ্যানুসারে ফুসফুস যদিও নিজেই নিজেকে পরিষ্কার করতে পারে। তবে নিয়মিত দূষণের শিকার হতে থাকলে তা একসময় আটকে যায়, সংক্রমণের শিকার হয় এবং শরীর ভারী মনে হতে থাকে। শ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিদিন ফুসফুস অসংখ্য দূষিত উপাদানের সংস্পর্শে আসে। শুধু ক্ষুদ্র ধুলিকণা নয়, পলেন, রাসায়নিক উপাদান, ধোঁয়া ইত্যাদি সবকিছুই ফুসফুসে আটকে থাকতে পারে।
প্রশ্ন জাগতে পারে ফুসফুস পরিষ্কার করা সম্ভব? এটা তো আর কাপড় না যে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিলাম।
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে প্রাকৃতিক পন্থায় ফুসফুস পরিষ্কার করার কয়েকটি উপায় এখানে দেওয়া হল।
ভাপ নেওয়া: ফুসফুস পরিষ্কার করার অন্যতম কার্যকর উপায় বাষ্প। নিঃশ্বাসের সঙ্গে বাষ্প গ্রহণ করা শরীরের ভেতরে বায়ু চলাচলের রাস্তা সুগম করে এবং তাতে জমে থাকা ‘মিউকাস’ অপসারণে সাহায্য করে। শীতকালে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যায় কারণ এসময় বাতাসে গতি কম থাকে। ধোঁয়া ও অন্যান্য দূষিত উপাদান কুয়াশার সঙ্গে মিশে মাটির কাছাকাছি নেমে আসে। ফলে বায়ু দূষণের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই শীতকালে নিয়মিত বাষ্প বা ভাপ নেওয়া অত্যন্ত উপকারী এবং অল্পসময়েই তা অস্বস্তি দূর করতে পারে।
কাশি: পারিপার্শ্বিক অবস্থার করণে শুকনা কাশি হয়। আর এই কাশির মাধ্যমে শরীরে আটকে থাকা ধুলা ও ‘মিউকাস’ বেরিয়ে আসে। তাই কাশি কিংবা হাঁচি আটকে রাখার অভ্যাস বর্জন করতে হবে। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রিত কাশি দেওয়ার অভ্যাস করা যেতে পারে।
গ্রিন টি: এই চায়ের নানান স্বাস্থ্যগুণের মধ্যে ফুসফুস পরিষ্কার করাও একটি। ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’য়ে ভরা ‘গ্রিন টি’ ফুসফুসে সংক্রমণের আশঙ্কা কমায়। এতে থাকা অন্যান্য উপাদান ফুসফুসের সংবেদনশীল কোষকে বায়ুদূষণের ক্ষতিকর উপাদানের প্রভাব থেকে সুরক্ষা দেয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় এক হাজার অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে করা গবেষণায় দেখা যায়, যারা দিনে কমপক্ষে দুই কাপ ‘গ্রিন টি’ পান করেন তাদের ফুসফুস যারা এই চা পান করেন না তাদের তুলনায় ভালো থাকে।
প্রদাহনাশক খাবার: হলুদ, কপি-জাতীয় সবজি, চেরি ফল, জলপাই, কাঠবাদাম, সীম ইত্যাদি প্রদাহনাশক খাবার শরীরের বায়ু চলাচলের পথ পরিষ্কার করে। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দূরে রাখে। তাই এই খাবারগুলো দৈনিক খাদ্যাভ্যাসের অংশ হতে হবে। পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত খাবার কিছুদিন এড়িয়ে চলতে হবে।
মধু: এতে আছে ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’, ‘অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল’ ও প্রদাহনাশক গুণাবলী। যা ফুসফুস পরিষ্কার করে। প্রাচীনকাল থেকে হাঁপানি, যক্ষ্মা, গলার বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় মধু ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রতিদিন এক চামচ মধু খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে ফুসফুসের জন্য হবে উপকারী।
বাতাসে দূষিত উপাদান একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তবে ঘরের বাতাসের মান আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন অনেকাংশে। এজন্য ঘরে ‘এয়ার পিউরিফায়ার’ ব্যবহার করতে পারেন। ঘর সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। কার্পেট থাকলে তা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। বাঁশ, লিলি, অ্যালো ভেরা, ‘স্পাইডার প্ল্যান্টস’ ইত্যাদি বায়ু পরিশোধন করে এমন গাছ ঘরে রাখা যেতে পারে।
ছবি: রয়টার্স।
আরও পড়ুন