ঘুমের আগে খাওয়া যতটা খারাপ

খেয়েই ঘুমাতে যাওয়ার কারণে দেহে চর্বি জমে। আবার চর্বি নাও জমতে পারে যদি সঠিক খাবার নির্বাচন করা যায়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Nov 2019, 12:06 PM
Updated : 2 Nov 2019, 12:08 PM

শহুরে ব্যস্ত কর্মজীবনে ঘরে ফিরতে দেরি। ফলে ঘুমাতে যাওয়ার আগেই রাতের খাবারটা সারতে হয় বেশিরভাগ মানুষের।

আবার যাদের রাতজাগার অভ্যাস আছে তাদের গভীররাতে প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু খাওয়া হয়।

স্বাস্থ্য সচেতনরা বলেন গভীর রাতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াও ক্ষতিকর। তবে প্রশ্ন হল আসলেই ব্যাপারটা কতটা ক্ষতিকর? সব খাবারই কি ক্ষতিকর?

স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একাধিক বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে জানানো হল এই বিষয়ে বিস্তারিত।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘এনওয়াইইউ ল্যাংগন মেডিকেল সেন্টার’য়ের সহযোগী অধ্যাপক ‘গ্যাস্ট্রোলজিস্ট’ ড. ডেভিড পপারস বলেন, “রাতের ঘুমানোর আগ মুহুর্তে খাওয়ার কারণে হজমের সমস্যা দেখা দেবে না। তবে তা আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। সহজ ভাষায় হজম প্রক্রিয়াটা এমন, খাবার পাকস্থলি হয়ে ‘গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট’য়ে প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্রে পৌঁছায়। সেখানে বিভিন্ন এনজাইম ও পেশির সঙ্কোচন-প্রসারণের মাধ্যমে সেই খাবার আরও ক্ষুদ্র অংশে ভাঙে এবং পুষ্টি উপাদান শরীরের শোষিত হয়। অবশিষ্টাংশ চলে যায় মলাশয়ে। ধন্যবাদ দিতেই হয় যে, পুরো বিষয়টা স্বয়ংক্রিয়।”

“এমন নয় যে ঘুমিয়ে পড়লে হজম প্রক্রিয়া থেমে থাকবে। তবে ঘুমিয়ে গেলে পেশির সঙ্কোচন-প্রসারণ স্বাভাবিকের থেকে মন্থর হয়ে যেতে পারে। তাই ঘুমানোর আগে ভারী কোনো খাবার খেলে তা অস্বস্তি তৈরি করতে পারে, ঘুমের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। যেমন- কফি, চা, মদ ইত্যাদি ঘুম তাড়ায়। আবার ‘লাজানিয়া’, ‘টাকোস’, চকলেট, আইসক্রিম ইত্যাদি খাবার যা রাতের খাবারে প্রায়শই খাওয়া হয় তা সৃষ্টি করতে পারে বুক জ্বালাপোড়া। কীভাবে শুয়ে ঘুমাচ্ছেন সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। মাথা সামান্য উঁচু করে শোয়া বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা নিরাময়ে সাহায্য করবে। কারণ তখন পাকস্থলির অম্লীয় উপাদান গলায় আসতে পারবে না।”

“তাই বলে রাতে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যাওয়া উচিত নয়। কারণ তখন ঘুম নষ্ট হবে পেটের মোচড়ে। উভয় সংকটের সমাধান হবে রাতে ঘুমানোর কমপক্ষে দুই ঘণ্টা আগে খাওয়া-দাওয়ার পাট চুকিয়ে ফেলা।” বলেন পপারস।

ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির খাদ্য, পুষ্টি ও শরীরচর্চা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাইকেল অর্মসবি বলেন, “আমিষে ভরা হালকা খাবার রাতে উপকারী হতে পারে। রাতের ঘুমানোর ৩০ মিনিট আগে ৩০ গ্রাম প্রোটিন খাওয়া হজমের গতি বাড়ায় এবং পরদিন সকালে ক্ষুধার মাত্রাও কমায়। ‘কটেজ চিজ’ এক্ষেত্রে আদর্শ পছন্দ।”

রাতের খাবার দ্রুত সেরে ফেলায় বিশেষজ্ঞদের সমর্থন আছে। তার মানে এই নয় যে ঘুমানোর আগে খাওয়া ওজন বাড়ানোর কারণ হবে। শরীরের প্রতিটি জৈবিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে ‘সার্কাডিয়ান রিদম’ নামক শরীরের আভ্যন্তরিন সময়, যা নিয়ন্ত্রিত হয় চারপাশের পরিবেশ দ্বারা। একারণেই দিনের বেলায় আপনি বেশি সতর্ক থাকেন আর রাতে শরীর শিথিল হয়ে যায়।

লুইজিয়ানায় অবস্থিত পেনিংটন বায়োমেডিকাল রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক এরিক রাভুসিন বলেন, “রাতে শরীরের অনেক প্রক্রিয়ার গতি কমে। ‘কর্টিসল’ হরমোনের মাত্রা কমে, হৃদস্পন্দন কমে আর সবকিছুরই মুল উদ্দেশ্য শক্তি খরচের মাত্রা কমানো। অর্থাৎ এসময় ক্যালরি খরচ হয় কম। তবে ঘুমানো সময় একটি কাজের গতি বাড়ে আর তা হল চর্বি খরচ। আপনি যদি শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকেন কিংবা খাওয়া-দাওয়া করেন তবে সেটা হবে না।”

ক্যালিফোর্নিয়ার স্যানডিয়াগোতে অবস্থিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সাল্ক ইন্সটিটিউট’য়ের অধ্যাপক এবং ‘দি সার্কাডিয়ান কেডা’ বইয়ের লেখক সচিন পান্ডা বলেন, “এর কারণ হল শরীরে জমে থাকা ‘কার্বোহাইড্রেইট’ এবং ‘গ্লাইকোজেন’ খরচ করার পরই চর্বি খরচ করা শুরু হয়। তাই রাতে ঘুমানোর আগে খেলে শরীর বাড়তি রসদ পায় এবং চর্বি খরচের প্রয়োজনীয়তা কমে যায়।

প্রশ্ন হল মাত্র দুএক ঘণ্টা চর্বি খরচ আসলে কতটা কার্যকর?

অর্মসবি বলেন, “হয়ত না। বিজ্ঞান বলবে ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করাই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে দিনে খাওয়া পরিমাণ কমানোর মাধ্যমেও কিন্তু ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা কমানো যায়।”

যারা রাতের শিফটে কাজ করেন তাদের হৃদরোগ, সংক্রমক রোগ ইত্যাদিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

রাতের ঘুমানোর দুই ঘণ্টা আগে খাওয়া সেরে ফেলার সুযোগ অনেকেরই হয়না। তাদেরকে দিনের বেলা একবার কোনোরকম তাড়াহুড়া ছাড়া একবেলার খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন রাভুসিন। এতে অন্ত্রের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কমবে।

“রাতের খাবার খাওয়া কোনো গবেষণালব্ধ আদর্শ সময় নেই। তবে ঘুমানোর আগ মুহুর্তে ৬শ’ ক্যালরি বা তার বেশি গ্রহণ করা উচিত হবেনা। বরং রাতের খাবার হতে হবে মৃদুমাত্রার কার্বোহাইড্রেট আর প্রোটিনের মিশ্রণ”, বলেন পপারস।

চারপাশে পরামর্শে কমতি নেই। তবে সেটাই অনুসরণ করা উচিত যেটা আপনার জীবনযাত্রার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং দীর্ঘদিন যা ধরে রাখা সম্ভব।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন