সম্পর্কে অসন্তোষের অশনি সংকেত

তুমি আর নেই সে তুমি, জানি না জানি না কেনো এমনও হয় জানি না!

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2019, 05:28 AM
Updated : 29 Oct 2019, 05:28 AM

শচীন দেব বর্মনের এই গানের মতো সঙ্গীর কাছ থেকে ‘তুমি আর আগের মতো নেই’ কথাটা যুগলদের অনেকেই শুনে থাকবেন।

সঙ্গীর সামনে এখন বাথরুমের দরজা বন্ধ না করলেও হয়- সম্পর্কের মাঝে থেকে দুজন এই পর্যায়ে পৌঁছেও কোথায় যেন একটা শূন্যস্থান তৈরি হচ্ছে বলে মনে হয়।

ফলে মনে জাগে অসন্তোষ। অনেক কথা জিজ্ঞেস করতে বা বলতে গিয়েও বলা হয় না। যা পরে দুজনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে থাকে।

রোমান্টিক সম্পর্কের মধ্যে এই বিরক্তিকর অশনি সংকেত মোকাবিলা করার ব্যাপারে কী করণীয় তাও অনেক সময় মাথায় আসে না।

সম্পর্কবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে এই বিষয়ের ওপর প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে কী করা উচিত বা উচিত না সে সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হল।

দেখেও না দেখা: রোমান্টিক সম্পর্কের মানেই হল, আপনি আপনার জীবন ভাগাভাগি করার জন্য একজনকে বেছে নিচ্ছেন। তারপর কোনো আওয়াজ ছাড়াই দেখা গেল সম্পর্কে কিছুটা আন্তরিকতার অভাব।

যুক্তরাষ্ট্রের ডেনভারের অনুমদিত মনস্তত্ত্ববিদ ব্রিটনি বোফার্ড বলেন, “সঙ্গী আগের সপ্তাহে আপনাকে খুবই গুরুত্ব দিল, পরের সপ্তাহেই সেটায় ভাটা পড়লো- আর বিষয়টা নিয়মিত ভাবে হতে থাকলো। এই পরিস্থিতিতে যে কেউ নিজের গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন শুরু করতে পারেন।”

“যদি মনে হয় এই মুহূর্তেই সঙ্গীকে কাছের পরের মুহূর্তেই দূরে- তাহলে এই সমস্যা দূর করার চাবিকাঠি হল কথা বলা। নিজের আসল প্রয়োজনের বিষয়টা সঙ্গীর কাছে প্রকাশ করতে হবে। তাকে জানাতে হবে একসঙ্গে আরও সুন্দর সময় কাটাতে চান। সেই সঙ্গে সঙ্গীর জন্য নিয়মিত বাধা হয়ে ওঠার বিষয়েও সাবধান হতে হবে। সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে দুজনের ইচ্ছেটাও জরুরি।”

হঠাৎ শাখা প্রশাখার বিস্তার: “দুজনেরই বন্ধুবান্ধব রয়েছে, থাকে। সেটাই স্বাভাবিক। তবে হঠাৎ যদি সঙ্গী সামাজিক সম্পর্কের গণ্ডি বাড়াতে থাকে তবে সেটা হতে পারে বিপদ সঙ্কেত।” বললেন ‘রেড ফ্ল্যাগ’ বইয়ের লেখক, যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্যান ডিয়েগো কাউন্টি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি’ অফিসের ডেপুটি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি এবং ‘সেক্স ক্রাইম অ্যান্ড স্টকিং’ বিভাগের প্রধান ড. ওয়েন্ডি এল. প্যাট্রিক।

তিনি প্রশ্ন রাখেন, “সে কী এমনিতেই নতুন মানুষের সঙ্গে মিশছে, নাকি আপনার জীবন নিয়ে সে একঘেঁয়ে হয়ে গেছে? নাকি সে আপনাকে নিয়ে ক্লান্ত?”

“এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার চেষ্টা করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “কাজের জন্য যোগাযোগ বৃদ্ধি, তার পরিবার অর্থাৎ বাবা-মা ভাইবোনদের সঙ্গে সময় বেশি কাটানো, একই মতাদর্শের মানুষের সঙ্গে মিশে নতুন কিছু খোঁজার চেষ্টা- এই ধরনের সামাজিক ব্যস্ততা রোমান্টিক সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর নয়। তবে এই ধরনের কাজে সঙ্গীকে অন্তর্ভুক্ত না করা হতে পারে ক্ষতিকর।”

“যদি কোনো চেষ্টা বা কারণ ছাড়াই পুরানো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা বা নতুন বন্ধু তৈরি করা শুরু হয় তাহলে বুঝতে হবে সেখানে হয়ত অতৃপ্তির বাষ্প পুঞ্জীভূত হচ্ছে। আর সেখান থেকেই তৈরি হচ্ছে বিকল্প বিষয়ের দিকে ঝোঁক।”

বলে একটা করে আরেকটা: দেখা করার কথা বলে দেখা না করা। কিংবা কোনো কাজে সাহায্য করবে বলে কথা দিয়েও সেটা না করা- সম্পর্কের ক্ষেত্রে এগুলো হতাশাজনক।

‘ডেটিং ফ্রম ইনসাইড আ্উট’য়ের লেখক এবং ‍যুক্তরাষ্ট্রের মনোবিজ্ঞানী পলেট শারম্যান বলেন, “যাদের কথা ও কাজে মিল নেই তারা হয়ত মুখোমুখি হতে ভয় পায়। অথবা আলোচনা ছাড়াই মিথ্যে অনুভূতির আশ্রয় নেয়।”

একই ধরনের আত্মকেন্দ্রিক ব্যবহার করে সঙ্গীর মনোযোগ আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা যেতে পারে। দেখা যেতে পারে সে এসব বিষয় ঠিকঠাক করার চেষ্টা করছে কিনা। তারপর সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে যে, সম্পর্কে আসলেই বিশ্বাসের জায়গাটা আছে নাকি একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। সেই ক্ষেত্রে একসঙ্গে থাকাটাও মূল্যহীন।

শারম্যান বলেন, “অন্যকে পরিবর্তন করা সম্ভব না। তাকে সতর্ক করার জন্য এই ধরনের কিছু রীতি তৈরি করা যেতে পারে। তারপর তার কাছে প্রকাশ করুন আপনি কীরকম বোধ করেন সে যখন এরকম করে। এরপর তাকে পর্যবেক্ষণ করে দেখুন কোনো পরিবর্তন হয় কিনা।”

হঠাৎ করেই রোমান্টিক ব্যবহার: দুজনেই প্রচণ্ড ব্যস্ত। তেমন কোনো রোমান্টিকতা দুজনের মধ্যে অনেকদিন হচ্ছে না। এমন সময় কোনো কারণ ছাড়াই সঙ্গী গোলাপ ফুল উপহার দিল। কিংবা আয়োজন করলো ‘ডিনার ডেইট’য়ের। বিষয়গুলো খুবই মিষ্টি আর সুন্দর। তবে এর বিপরীত দিকও রয়েছে। হতে পারে সঙ্গী আপনাকে গুরুত্ব না দেওয়ার অপরাধবোধ থেকে এসব করছেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা রোসা’র মনোবিজ্ঞানী কার্লা ম্যানলি বলেন, “সঙ্গীর এই ধরনের আকস্মিক রোমান্টিক আচরণ দুই ধরনের কারণ থাকতে পারে, হয় ‘ভালো কিছু করার চেষ্টা’ অথবা ‘ভালো সাজার চেষ্টা’। আবার এটা হতে পারে গুরুত্ব না দেওয়ার অপরাধবোধ থেকে করা।”

ম্যানলি পরামর্শ দেন, “এরকম হলে বরং বিপরীত কিছু করার চেষ্টা করুন। যাতে সঙ্গী ভবিষ্যতেও এরকম কিছু করার উৎসাহ পায়। যেমন বলতে পারেন, ‘আজকের রাতের এই আয়োজনে আমি খুবই খুশি! আমি তো অবাক!”

“সময়ে এই ধরনের বিষয়গুলো সম্পর্কের ভিত্তি আরও মজবুত করে।”

শারীরিক মিলনে অসামঞ্জস্য: সম্পর্কের শুরুর সময় যত বেশি শারীরিকভাবে মিলিত হতেন, সঙ্গী বর্তমানে সেভাবে মিলিত হয় না।

মনোবিজ্ঞানি প্যাট্রিক বলেন, “আবেগীয় অনুভূতির এরকম পরিবর্তন থেকে তৈরি হয় বিশ্বাসঘাতকতা আর নিরাপত্তাহীনতা। এর কারণে হতে পারে নিজেকে মূল্যহীন ভাবা, আকর্ষণ কম কাজ করা। আবার স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণেও সঙ্গী লাজ্জায় হয়ত কিছু বলতে পারছেনা বলে মিলিত হতে চাননা আগের মতো।”

তাই প্যাট্রিক পরামর্শ দেন, “এই বিষয়ে ভয় পাওয়া আগে বরং ভালোবাসার অন্যান্য ভাববিনিময়ের দিকে নজর দেওয়া উচিত। সঙ্গী যদি এখনও ভালোবাসার কথা বলে, টেক্সট পাঠায় কিংবা আকর্ষণবোধ করার অন্যান্য বিষয়গুলো প্রকাশ করে যেতে থাকে তবে শারীরিকভাবে কম মিলিত হওয়ার বিষয়টা হয়ত ক্ষণস্থায়ী। যা দুজনের সম্পর্কের মধ্যে আগ্রহ হারানোরও কিছু নির্ধারণ করে না।”

আরও পড়ুন