চুল নিয়ে যত ভুল ধারণা

পাকা চুল তুললে আরও চুল পাকে-  যা একদমই ঠিক না।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2019, 02:54 PM
Updated : 27 Feb 2020, 11:39 AM

বয়োজ্যেষ্ঠরা পরামর্শ দেন, ‘দিনে একশবার না আঁচড়ালে চুল ভালো থাকে না।’ এরকম প্রচলিত অনেক ধারণাই প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে যা ঠিক নয়।

সাজসজ্জা-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অবলম্বনে চুল নিয়ে এরকম প্রচলিত ধারণার সঠিক দিকগুলো তুলে ধরা হল।

ধারণা: চুল ভালো রাখতে বেশি বেশি আঁচড়াতে হবে

আসল বিষয় হল বেশি বেশি ব্রাশ করলে চুলের বরং ক্ষতি হয়। বিশেষ করে ভেজা অবস্থায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘হালিউডহেয়ার’য়ের প্রতিষ্ঠাতা ও নিবন্ধিত ‘কসমোটলজিস্ট’ হালি উড বলেন, “ব্রাশের দাঁতের সঙ্গে ছোট ছোট জটে টান লেগে চুল ছিড়ে যায়। তাই আঁচড়ানোর জন্য বড় ও ফাঁকা দাঁতের ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে। যাতে পাঁকিয়ে থাকা চুলের জটে টান না লাগে।”

এছাড়া বিকল্প হিসেবে মাথার ত্বক প্রতিদিন অন্তত পাঁচ মিনিট মালিশ করতে হবে। এতে মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো হবে এবং চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।

ধারণা: শ্যাম্পু বদল করা

এটা ঠিক না। উড বলেন, “নতুন পণ্য ব্যবহার করা ছাড়া এই পন্থায় কোনো লাভ নেই।”

আসল বিষয় হচ্ছে কোন ধরনের শ্যাম্পু ব্যবহার করা হচ্ছে সেটা খেয়াল করা। সস্তা শ্যাম্পুতে থাকে মোম ভিত্তিক আস্তর যা চুল ফুলিয়ে রাখে। এই সমস্যা দূর করতে ‘ক্লিয়ারিফাইং’ শ্যাম্পু বা বেশি দামি শ্যাম্পু যেগুলোতে মোম এবং সিলিকন থাকে না সেগুলো সপ্তাহে একবার ব্যবহার করতে হবে।

ধারণা: আগা ফাটা ঠিক করা যায়

এই ধারণা ঠিক নয়।

উড বলেন, “তাপীয় যন্ত্র ব্যবহার, রং করা কিংবা ধুলা-ময়লা ও রোদের কারণে চুলের গোড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর এই পর্যায়ে ক্ষতি পোষাতে চুলের যে অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় অর্থাৎ আগা ফেটে যায় সেটা কেটে ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।

তিনি পরামর্শ দেন, “যেসব পণ্য এই ধরনের ক্ষতি পোষাতে পারে বলে বিজ্ঞাপন দেয় সেগুলো কেনা উচিত হবে না। কারণ সেসব পণ্য খুব বেশি হলে ক্ষতির জায়গাটা ঢেকে রাখবে, সারাবে না। তাই আগা ফেটে গেলে ছেঁটে ফেলাই সবচেয়ে ভালো উপায়।”

ধারণা: ছাঁটলে বাড়ে তাড়াতাড়ি

এই ধারণাও ঠিক নয়। উড জানান, চুল ছাঁটার সঙ্গে বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই।

তিনি বলেন, “যদি নিয়মিত চুল ছাটা না হয় তবে আগা ফাটার সমস্যা দেখা দেবে। যে কারণে চুল বাড়বে ধীরে। তারমানে এই না চুল ছাঁটলে বাড়বে তাড়াতাড়ি। বরং নিজস্ব গতিতেই বৃদ্ধি পাবে চুল।”

ধারণা: শুষ্ক ত্বক থেকে খুশকি

এই ধারণার বরং উল্টোটা সত্যি।

যুক্তরাষ্ট্রের ত্বক বিশেষজ্ঞ অ্যানেটে মুর বলেন, “মালাসেজিয়া’ নামক ফাঙ্গাসের কারণে খুশকি হয়। আর এই ফাঙ্গায় তৈলাক্ত পরিবেশ পছন্দ করে। অর্থাৎ শুষ্ক নয় বরং মাথার ত্বক তৈলাক্ত হলেই বরং খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।”

খুশকির বিরূদ্ধে যুদ্ধ করার একমাত্র হাতিয়ার হল উন্নতমানের ‘অ্যান্টি ড্যান্ড্রাফ’ শ্যাম্পু ব্যবহার করা।

ধারণা: পাকা চুল তুললে বেশি পাকে চুল

একটা পাকা চুল তুললে দুটি চুল পাকে- এই ধারণা একদমই ঠিক না।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ম্যাপল হলিস্টিক’ প্রতিষ্ঠানের ত্বক বিশেষজ্ঞ ডিনা মাহালি বলেন, “একটা পাকা চুল হয়ত চোখে পড়ছে, অন্যগুলোর দিকে চোখ পড়েনি। ফলে সেই পাকা চুল তোলার পর মনে হতে পারে অন্যান্য চুলগুলোও পেকে যাবে। আসলে চুল টেনে তুললে বরং ক্ষতি হয়। কেশগুচ্ছ দুর্বল হয়ে যায়। ফলে কমে যায় চুলের বৃদ্ধি।”

ধারণা: মানসিক চাপ থেকে পাকা চুল

মানসিক চাপ থেকে মাথা ব্যথা করতে পারে। তবে চুল পাকে না। এই ধারণাও ভুল।

“বয়স ও বংশের ধারা অনুসারে মানুষের চুল পাকে। মানসিক চাপ থেকে নয়।” বলেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘নেইল আর্ট গিয়ার’য়ের লিনা বাক।

“বরং মানসিক চাপ থেকে চুল ঝরতে পারে। তাই সমস্যা এড়াতে মানসিক চাপ দূর করার পাশাপাশি ‘স্ট্রেথনিং শ্যাম্পু’ ব্যবহার করা যেতে পারে।

ধারণা: সঠিক পণ্যে চুলের স্বাস্থ্য ভালো হয়

সত্যি বলতে বিষয়টা ঠিক না। শরীরে যেমন পুষ্টির দরকার তেমনি চুলেরও পুষ্টির দরকার হয়। স্বাস্থ্যসম্মত বিশেষ করে জিঙ্ক, ভিটামিন ডি এবং লৌহ সমৃদ্ধ খাবার চুলের পুষ্টি যোগায়।

আসল কথা হল নিজের যত্ন নিলে চুলেরও যত্ন হবে।

ধারণা: ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকানো ক্ষতিকর

এটা একেবারেই ঠিক না।

প্রচলিত ধারণায় অতিরিক্ত তাপে চুলের ক্ষতি হয়। তবে অনেকক্ষণ চুল ভেজা থাকার চাইতে ড্রায়ার দিয়ে ‍চুল শুকানো অনেক ভালো। যদি না প্রাকৃতিক বাতাসে তাড়াতাড়ি চুল শুকানোর ব্যবস্থা থাকে।

আর ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকানোর সঠিক পন্থা হল কম তাপ ব্যবহার করা।

ছবির প্রতীকী মডেল: বন্যা। আলোকচিত্র: রাইনা মাহমুদ। বিন্যাস ও পরিকল্পনা: আলি আফজাল নিকোলাস। সৌজন্যে: ত্রয়ী ফটোগ্রাফি স্টুডিও।

আরও পড়ুন