ছবি দেখে যায় চেনা

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া ছবি থেকে একজন মানুষ সম্পর্কে ধারণা করা যেতে পারে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2019, 09:01 AM
Updated : 2 Oct 2019, 01:47 PM

ফেইসবুক ইন্সটাগ্রাম’সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কত রকম ছবিই তো শেয়ার করা হয়।

‘সেলফি’ ‘গ্রুপ’, খাবার কিংবা প্রকৃতি।

একেকজনের টাইম লাইনে একেক রকম ছবির ভান্ডার। তবে নির্দিষ্ট কোনো ধরনের ছবির সংখ্যা যদি বেশি হয় তবে সেই ছবিগুলো থেকে ওই মানুষ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা করা যায়।

মনস্তত্ব-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে এই বিষয়ের ওপর প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘পোস্ট’ করা ছবি দেখে মানুষ চেনার উপায়।

বিভিন্ন ধরনের সেলফি (আয়নার সামনে, লিফটের ভেতর)

এই ধরনের সেলফি বেশি হলে ধরে নেওয়া যেতে পারে, তিনি মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার পাশাপাশি অন্যদের সমর্থন পেতে পছন্দ করেন। একই সঙ্গে তিনি হয়ত আত্মকেন্দ্রিক, অহঙ্কারী এবং আত্মতৃপ্তির প্রতি ঝোঁক রয়েছে।

‘সেক্সি’ সেলফি

ঠোঁট চোখা করে ‘চুমু’ আকারে যাকে বলে ‘ডাক ফেইস’- এরকম ভাবে ছবি দিয়ে তিনি হয়ত বোঝাতে চাইছেন, ‘আমি একজন মুক্তমনা এবং রেডি-টু-এক্সপেরিমেন্ট উইমেন’।

এই ধরনের সেলফি দেওয়ার আগে ভাবুন নিজেকে ‘বাজারে’ তুলছেন নাতো! শরীর আর অঙ্গভঙ্গী দিয়ে নিজেকে কি বিক্রির জন্য উপস্থাপন করছেন!

আর এভাবে ছবি দিয়ে কারও সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্কও গড়ে তোলা সম্ভব নয়।

যুগোল ছবি

সঙ্গীসহ ছবি পোস্ট করলে ধরে নেওয়া যেতে পারে, আপনি একা নন আর সম্পর্ক নিয়ে আন্তরিক, সবার কাছে সে ব্যাপারে মূল্যায়নও আশা করেন।

তবে এই যুগোল ছবি বেশি পরিমাণে দেওয়ার অন্য একটা কারণ থাকতে পারে। হতে পারে ‘প্রাক্তন’কে বোঝানো আপনি এখন কতটা সুখী এবং যেসব বন্ধুরা একা আছে তাদের বোঝায় দেওয়া তারা কতটা দুর্ভাগ্যবান।

‘গ্রুপ ফটো’

পার্টি বা অনুষ্ঠানের ছবি, দলবদ্ধভাবে মজার করার ছবি যদি বেশি দেওয়া হয় তাহলে হয়তো সেই ব্যক্তিটি বোঝাতে চান তিনি বন্ধুদের সঙ্গে কতটা মজায় আছেন। তবে এটা একাকিত্ব এবং মনের ভেতরের শূন্যতাবোধকেও নির্দেশ করে।

একই মানুষদের সঙ্গে বা গ্রুপের সঙ্গে বেশি ছবি দিয়ে হয়ত বোঝাতে চাইছেন, এদের সঙ্গে থাকাটাই আপনার জন্য অহঙ্কারের।

শিশুর ছবি

এরকম ছবি দেওয়ার দুই রকম অর্থ হতে পারে।

এক, নিজের প্রোফাইলে যদি ছোটবেলার ছবি দেওয়া হয় তাহলে হয়ত সেই ব্যক্তিটি পারিণত বয়সের দায়ভার নিয়ে ক্লান্ত। সে ফিরে যেতে চায় শৈশবে। সেটা তো আর সম্ভব না, বরং সে হয়ত বোঝাতে চায় ‘আমাকে শিশুর মতো আলিঙ্গন করে, চুলে বিলি কেটে দাও’।

দ্বিতীয়ত যদি নিজের সন্তানের ছবি দেওয়া হয়, তাহলে হয়ত বোঝাতে চান ‘আমি একজন মা, আর এই অর্জন আপনার জন্য গর্বের।”

প্রাণীর সঙ্গে ছবি

যদি কোনো ফটোগ্রাফারের প্রোফাইলে এই ধরনের ছবি থাকে, হতে পারে তিনি সেটা তার কাজের নিদর্শন।

আবার একজন ছেলে যদি নেকড়ে বা চিতাবাঘের ছবি প্রোফাইলে দেন তাহলে হয়ত বোঝাতে চান তিনি কতটা শক্ত মনের মানুষ, যদিও ভিতরে ভিতরে তিনি সেটা নন।

অন্যদিকে কোনো নারী যদি সুন্দর কোনো প্রাণী যেমন- বেড়ালের ছানা, খরগোশ, বাচ্চা কুকুরের ছবিসহ নিজেকে উপস্থাপন করেন তবে ধরে নেওয়া যেতে পারে তিনি অত্যন্ত আবেগীয়, ভাববিলাসী মানুষ। একই সঙ্গে সেটা তার অপরিপক্কতাও নির্দেশ করে।

প্রকৃতির ছবি

পেশাদার ফটোগ্রাফার বাদে অন্য যে কারও প্রোফাইলে যদি বেশি মাত্রায় প্রকৃতির ছবি থাকে তবে তিনি হয়ত জীবন নিয়ে তৃপ্ত, সফলতা ধরা দিয়েছে, এখন বাকিটা জীবন প্রকৃতির মুগ্ধতায় কাটিয়ে দিতে চান।

তবে বিপরীত দিকও রয়েছে। হয়ত নিত্যদিন একই দৃশ্য দেখতে দেখতে আপনি ক্লান্ত। এখন দরকার একান্ত ব্যক্তিগত সময়, যেখানে থাকবে প্রকৃতির স্নিগ্ধতা।

মোহনীয় ভঙ্গীমায় ছবি

এই ধরনের ছবি অতিমাত্রায় থাকলে বুঝতে হবে সেই ‘অ্যাকাউন্ট’য়ের অধিকারী একজন আত্মতৃপ্ত হওয়া মানুষ এবং অন্যদের কাছে থেকে ‘লাইক’ পাওয়ার পাশাপাশি ‘চটুল কমেন্ট’ পাওয়ার আশা করেন।

আর এই কারণেই নিজের সম্পর্কে এরকম উচ্চ ধারণা থাকলে সেটা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। বরং এভাবে ‘লাইক’ না কামিয়ে বাস্তব জীবনে কীভাবে উন্নতি করা যায় সেটা নিয়ে ভাবতে হবে।

ভ্রমণের ছবি

এই ধরনের ছবি দিয়ে অনেকেই বোঝাতে চান, ‘আমার আরাম করার সামর্থ দেখ’। এরকম ছবি বেশি দিয়ে অনেকেই সামাজিকভাবে জোর পাওয়ার চেষ্টা করেন।

অন্যদিকে এটা হতে পারে ভ্রমণের উপযুক্ত প্রমাণ। তা ব্যক্তিগত প্রাপ্তির দিকে নির্দেশ করে। বহুল জনপ্রিয় জায়গা যেমন- মিশরের পিরামিড, ‘ইফেল টাওয়ার’য়ের, চায়নার ‘গ্রেট ওয়াল’য়ে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা। বহু মানুষ এসব জায়গায় গেলেও, প্রথমবার আপনার যাওয়াটা হল ব্যক্তিগত প্রাপ্তির পূর্ণতা।

দামি বাহন-সহ ছবি

দামি গাড়ি, ইয়ট বা অন্যান্য দামি জিনিস-সহ ছবি দিয়ে নিজের সাফল্য তুলে ধরতে চান। হতে পারে সেটা আসল কিংবা কাল্পনিক। জোর দিয়ে বোঝানো ‘জীবনটা দারুণ’।

খাবারের ছবি

পেশাদার খাদ্য সমালোচক বাদে, অন্য যে কারও প্রোফাইলে অতিরিক্ত খাবারের ছবির কারণ, নিজেকে জাহির করা। বিশেষ করে দামি কোনো রেস্তোরাঁর খাবারের ছবি সেটাই নির্দেশ করে।

অন্যদিকে কোনো গৃহবধু বা অন্তঃসত্বা নারী খাবারের ছবি দিয়ে বোঝাতে চান, অন্যদের মতো তার জীবনটাও  রান্নাঘর, অফিস কিংবা উৎসবের মতোই স্বাভাবিক।

সাংঘাতিক কোনো ছবি

প্যারাশুট জাম্প, বাঞ্জি জাম্প বা এই ধরনের বিপজ্জনক কাজে নিয়োজিতে হয়ে ছবি পোস্ট করার অন্যতম বিষয় হচ্ছে পৃথিবীর কাছে নিজেকে সাহসী হিসেবে পরিচয় করানোর চেষ্টা

তরুণদের মধ্যে এই ধরনের সেলফি তোলার ঝোঁক বেশি দেখা যায়। তারা একই সঙ্গে আনন্দ ও ভয় অনুভূব করে। তবে এই ধরনের ছবি যদি কারও ফেইসবুকে বেশি হয় তবে তার প্রতি নজর রাখার পাশাপাশি মনোবিজ্ঞানির সঙ্গে আলাপ করার দরকার হতে পারে।

মজার ছবি

নিজের মজার ছবি দেওয়ার অর্থ হতে পারে বেশি আত্মবিশ্বাসী। আবার নিজের সমস্যা লুকিয়ে রাখতেও মজার ছবি শেয়ার করে অনেকে।

অফিসের ছবি

অতি মাত্রায় কর্মক্ষেত্রের ছবি বিশেষ করে সাজানো গোছানো নিজের অফিস ডেস্ক বা কাজে ব্যস্ত থাকার ছবি শেয়ার করে যারা তাদের মানসিকতা প্রচণ্ড মাত্রায় পেশাদার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পাশাপাশি সে হয়তো বোঝাতে চায় তার রয়েছে অফিসে উঁচু দরের মর্জাদা।

বস্তু কিংবা নিজের আংশিক ছবি

যারা এরকম ছবি বেশি দেয় সাধারণত তার ভিন্ন বৈশিষ্টের অধিকারী হয়। পাশাপাশি তারা নান্দনিক কাজে আগ্রহী হয়।

ফিল্টার বা ফটোশপ ছাড়া ছবি

এরকম ছবি দেয় যারা ধরেই নেওয়া যায় তারা যেরকম সেভাবেই নিজেকে প্রকাশ করে। আলাদা চাকচিক্য তাদের দরকার নেই। আর নিজেকে নিয়ে তারা সুখী। এরা বেশিরভাগ সময় বহুদিন পর পর প্রোফাইলে ছবি পরিবর্তন করে। যার মানে হতে পারে তারা ধীর, স্থির, শান্ত, অটল। আর ‘লাইক’ ‘কমেন্ট’য়ের খুব একটা পরোয়া করেনা না।

এই ধরনের মানুষরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বন্ধু পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে অথবা কাজের জন্য। নিজেকে জাহির করা নিয়ে তাদের কোনো ব্যস্ততা নেই। বরং জীবন উপভোগ করতেই তারা পছন্দ করে বেশি।

ছবি: রয়টার্স।