মাড়ির রোগ বাড়াতে পারে রক্তচাপ

লালচেভাব, নাজুক কিংবা রক্তপড়া- মাড়ির এই ধরনের রোগ থেকে হতে পারে উচ্চ রক্তচাপ।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2019, 08:55 AM
Updated : 28 Sept 2019, 08:55 AM

দাঁতের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়ার আরেকটি নতুন কারণ খুঁজে পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আর তা হল, মাড়ি অতিরিক্ত লালচে হওয়া, সংবেদনশীল হওয়া এবং তা থেকে ‍রক্তপাত ডেকে আনতে পারে উচ্চ রক্তচাপ।

আড়াই লাখেরও বেশি মানুষের অংশগ্রহণে করা ৮১টি গবেষণা পর্যালোচনার মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা জানতে পারেন, যাদের মৃদু মাত্রায় মাড়ির সমস্যা আছে তাদের উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ২২ শতাংশ বেশি, আর যাদের সমস্যা তীব্র মাত্রার তাদের ক্ষেত্রে আশঙ্কা ৪৯ শতাংশ বেশি।

‘ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন’স ইস্টম্যান ডেন্টাল ইনস্টিটিউটের ‘পেরিওডন্টোলজি’ বিভাগের প্রধান এবং এই গবেষণার গবেষক ডা. ফ্রান্সিসকো ডাইউটো বলেন, “দাঁতের সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে সার্বিক স্বাস্থ্যের নিবিড় সম্পর্ক আছে। দাঁত ও মাড়ির যত্ন বেশিরভাগ মানুষের কাছেই অবহেলার বিষয়, তবে সার্বিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে চাইলে এই অবহেলার অবসান হওয়া উচিত।”

গবেষকরা দেখেন, যাদের সমস্যা নেই তাদের তুলনায় যাদের ‘পেরিওডন্টাইটিস’ অর্থাৎ মাড়িতে সমস্যা আছে এরকম মানুষের রক্তচাপের উপরের মাত্রা গড়ে অর্থাৎ ‘সিস্টোলিক প্রেশার’ ৪.৫ এমএম এইচজি আর নিচের মাত্রা বা ‘ডায়াস্টোলিক প্রেশার’ ২ এমএম এইচজি বেশি।

যে গবেষণাগুলো পর্যালোচনা করা হয় তার মধ্যে পাঁচটি গবেষণায় দেখা গেছে ‘পেরিওডন্টাইটিস’ সেরে গেলে রোগীর রক্তচাপও কমেছে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ ছিলনা তাদের মাড়ির চিকিৎসার পরও রক্তচাপ কমতে দেখা গেছে।

তবে ডাইউটো বলেন, “রক্তচাপ কমে যাওয়ার কারণ যে নিশ্চিতভাবেই ‘পেরিওডন্টাইটিস’য়ের চিকিৎসা, তা প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। কারণ গবেষণায় কোনো ‘কজ অ্যান্ড ইফেক্ট’ সম্পর্ক স্থাপন করা যায়নি।”

তিনি আরও বলেন, “দাঁতে আঘাত পাওয়া কিংবা দাঁতের চারপাশে জমা হওয়া ব্যাক্টেরিয়ার কারণে মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ ও সেখানে রোগ দেখা দেয়। তবে এই একই কারণে শরীরের অন্যান্য অংশে প্রদাহ এবং রক্তনালীর ক্ষতি হতে পারে। মাড়িতে সংক্রমণ হলে তা শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে সৃষ্টি করতে পারে ‘সিস্টেমেটিক ইনফ্লামেইশন’, দুষিত হতে পারে রক্ত।”

গবেষকরা বলেন, “ধুমপান ও অতিরিক্ত ওজনের পাশাপাশি বংশগত কারণ থেকেও দাঁত ও মাড়ির সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রতিটি দাঁতের চিকিৎসকের উচিত দাঁত ও মাড়ির সমস্যার সঙ্গে রক্তচাপের সম্পর্কের ব্যাপারে তাদের রোগীদের সতর্ক করা এবং দাঁতের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি রক্তচাপের দিকেও নজর রাখার পরামর্শ দেওয়া।”

এবিষয়ক ভবিষ্যত গবেষণাগুলোতে রক্তচাপের উপর মাড়ির চিকিৎসার প্রভাবের উপর জোর দিতে হবে। সম্পর্ক প্রমাণিত হলে তাতে রোগীদের উপকার হবে। 

লস অ্যাঞ্জেলেসে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার ‘কার্ডিওলজি’ বিভাগের অধ্যাপক ডা. গ্রিগ ফোনারো বলেন, “দাঁত ও মাড়ির সমস্যার সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তনালী শক্ত হওয়ার সম্পর্কের ইঙ্গিত ক্রমেই বাড়ছে। ৫০টির বেশি গবেষণায় এমনটা দেখা গেছে। তবে একটা বিষয় এখনও পরিষ্কার হয়নি, তা হল মাড়ির রোগ কি রক্তচাপের কারণ নাকি উপসর্গ।”

তিনি আরও বলেন, “যদি কারণ হয় তবে এদের মধ্যকার সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মাড়ির রোগের চিকিৎসার মাধ্যমে রক্তচাপও কমানো যাচ্ছে এবং হৃদরোগের ঝুঁকিও কমছে। এবিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা হওয়া উচিত।”

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন