মানসিক বিপর্যস্ততার লক্ষণ

‘নার্ভাস ব্রেকডাউন’ বা মানসিক বিপর্যয় হয়ত সত্যিকার অর্থে কোনো মানসিক রোগ নয়। তবে জীবনের কোনো এক পর্যায়ে একবার হলেও এর স্বাদ নিতেই হয়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2019, 10:47 AM
Updated : 26 Sept 2019, 10:49 AM

ক্যালিফোর্নিয়ার সানতা মনিকায় অবস্থিত ‘প্রোভিডেন্স সেইন্ট জন’স হেলথ সেন্টার’য়ের ‘প্যাসিফিক নিউরোসাইন্স ইন্সটিটিউট’য়ের মনোবিজ্ঞানী ও স্নায়ুতত্ত্ববিদ ডেভিড এ. মেরিল বলেন, “মানসিক বিপর্যয়ের কোনো নির্দিষ্ট সঙ্গা নেই। অনুভূতিটা এমন যে একটা লম্বা সময় ধরে একজন মানুষ এতটাই মানসিক চাপের মধ্যে আছে যে সে এখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে, সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে।”

তিনি আরও বলেন, “এই মানসিক বিপর্যস্ততার অন্তরালে হয়ত লুকিয়ে আছে মানসিক রোগে উপসর্গ। আপনার যদি মনে হয় আপনি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন না, তবে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিজের অনুভুতি নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে বিস্তারিত আলাপ করতে হবে যাতে আপনি সঠিক পরামর্শ পান।”

ডা. মেরিলের দেওয়া তথ্যানুসারে ‘নার্ভাস ব্রেকডাউন’য়ের উপসর্গগুলো সম্পর্কে জানানো হল।

মনোযোগে অপারগতা: ডা. মেরিল বলেন, “সাময়িক মানসিক চাপের কারণে মস্তিষ্কে বিশেষ হরমোন নিঃসৃত হয় যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। তবে তা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে যে কোনো কাজে মনোযোগ দেওয়া ক্ষমতা কমতে থাকে। কারণ, অন্যমনষ্ক করতে পারে এমন বাহ্যিক ঘটনাগুলোকে মনের আড়াল করে রাখা সম্ভব হয় না। মানসিক চাপ বাড়ানোর জন্য দায়ী হরমোন ‘কর্টিসল’ অতিমাত্রায় থাকার কারণে স্মৃতিশক্তি লোপ মতো ঘটনাও ঘটতে পারে, দাবি করে গবেষণা।

অনিয়ন্ত্রিত খাওয়া: টানা ব্যস্ত সময় কাটানোর পর হয়ত আপনার মন চাইছে আইসক্রিম খেতে কিংবা প্রিয় চকলেট খেতে। এর পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার কাজ করে। তা হল, মানসিক চাপের মুহূর্তে মস্তিষ্কে নিঃসৃত হয় ‘অ্যাড্রেনালিন’ হরমোন, যা পেশির জন্য তৈরি করে ‘ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স’।

এই ‘অ্যাড্রেনালিন’ নিঃসরণ বন্ধ হয়ে গেলে ‘কর্টিসল’ শরীরকে খাবারের মাধ্যমে হারানো শক্তি পুনরুদ্ধারের তাগিদ দেয়।

সমস্যা হল মানসিক চাপের সমাধানের মাঝে যদি শারীরিক পরিশ্রম না থাকে তবে সেসময় যা খাবেন তা আসলে আপনার শরীরে প্রয়োজন ছিল না। আর এসময় মন উচ্চমাত্রায় চর্বি কিংবা চিনিযুক্ত খাবারই খেতে চাইবে। এই খাবারগুলোতে থাকা বিশেষ রাসায়নিক উপাদান সাময়িক প্রশান্তি দেবে। আর এর প্রভাব ফুরিয়ে গেলেই আরও খেতে মন চাইবে।

পেটের গোলমাল: মানসিক চাপ ও অস্বস্তির বহিঃপ্রকাশ অনেকসময় পেট ব্যথা হিসেবেও দেখা দিতে পারে।

ডা. মেরিল বলেন, “একসঙ্গে পেট ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফোলা, গ্যাস, ডায়রিয়া দেখা দিলে আপনার হয়ত ‘ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (আইবিএস) হয়েছে, যার সঙ্গে সম্পর্ক আছে দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপের। মানসিক চাপের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার লড়াইয়ের কারণে এই রোগ দেখা দিতে পারে। ‘অ্যাংজাইটি অ্যান্ড ডিপ্রেশন অ্যাসোসিয়েন অফ আমেরিকা’য়ের মতে, ‘আইবিএস’য়ের চিকিৎসা নিচ্ছেন এমন ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষের মাঝেই মানসিক সমস্যা দেখা যায়।” 

নিজের যত্নে অনীহা: নিজেকে অবহেলা করা মানসিক সমস্যার একটি পরিষ্কার ইঙ্গিত। সাধারণ ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা রক্ষা যেমন- গোসল বা দাঁত ব্রাশ না করা; অথবা যেসব বিষয়ে একসময় আগ্রহ ছিল সেসবে অনীহা যেমন- ফ্যাশন, মেইকআপে আগ্রহ না থাকা ইত্যাদি ইঙ্গিত করে যে, একজন মানুষ মানসিক অস্বস্তি বা হতাশায় ভুগছেন। মানসিক চাপ শরীর-মন দুটোর ‍ওপেরই প্রভাব ফেলে, যার ফলাফল হয় অবসাদ। কেড়ে নেয় সুখের অনুভূতি কিংবা প্রিয় কর্মকাণ্ডের প্রতি অনুরাগ।

শরীরের বাচনভঙ্গিতেই হতাশা: কখনও কি কাউকে শুধু দেখেই মনে হয়েছে মানুষটা হতাশায় ভুগছে? হয়ত অনেকবার। আমরা নিজেদের অঙ্গভঙ্গি দিয়েই অনেক মনের কথা বলে ফেলি।

মেরিল বলেন, “মানুষ যখন মাথা নিচু করে থাকে, চোখাচোখি এড়িয়ে যেতে চায়, বসা কিংবা দাঁড়ানো সবসময় শরীর নু্ইয়ে থাকে তবে তা দেখে বুঝতে হবে মানুষটা হতাশায় ভুগছে। সবার থেকে যেন পালিয়ে বাঁচতে চাইছে। মানুষটাকে দেখেই যখন সবার এমনটা মনে হবে এবং সবাই তাকে এড়িয়ে চলবে। তখন একাকিত্ব তাকে আরও গ্রাস করবে।

নির্ঘুম রাত: মানসিক চাপ আর অনিদ্রা যেন সবচাইতে কাছের দুই বন্ধু যা একজন মানুষের জন্য ধ্বংসাত্বক। মানসিক চাপ থেকে অস্বস্তি, মানে সেই ব্যক্তি ভারমুক্ত হতে পারছে না, ফলে ঘুমও আসছে না, আসলেও কিছুক্ষণ পরেই ভেঙে যাচ্ছে। ফলে সে বিশ্রাম পাচ্ছে না এবং তার শরীর ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে না। আর এভাবেই এই চক্র ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে থাকে।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন