ঘরেই আছে যেসব বিষ

ঘরে থাকা বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক উপাদান গড়ে তুলতে পারে বড় ধরনের বিষাক্ত পরিবেশ।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2019, 09:06 AM
Updated : 23 August 2019, 09:06 AM

কালেভদ্রে এগুলোর সংস্পর্শে হয়ত তেমন চিন্তার বিষয় নয়। তবে দীর্ঘদিনের প্রভাব অবহেলা করলে চলবে না।

গৃহস্থালীবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হল এই বিষাক্ত উপাদানগুলো সম্পর্কে।

ফ্যাব্রিক সফ্টেইনার: কাপড় পরিষ্কারের সময় তা নরম করতে যে উপকরণ ব্যবহার করা হয় তাতে প্রচুর পরিমাণে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান থাকে, যা ব্যবহার করেন অনেকেই। কাপড় নরম করার জন্য কাপড়ের উপর পিচ্ছিল উপাদানের পাতলা আস্তর ফেলে ‘ফ্যাব্রিক সফ্টেইনার’। আগে এটি তৈরিতে ব্যবহার হত সাবান কিংবা জলপাইয়ের তেল। তবে বর্তমান সময়ের ‘ফ্যাব্রিক সফ্টেইনার’য়ে পাওয়া গেছে ‘ক্লোরোফর্ম’, ‘ইথানল’, ‘লিমোনেন’ এবং ‘বেনজাইল অ্যালকোহল’ নামক বিষাক্ত উপাদান। এছাড়াও প্রতিবার এটি ব্যবহারের পর সেই পানি গিয়ে একসময় সমুদ্রে মেশে যা পরিবেশের ক্ষতি করে। তাই ‘ফ্যাব্রিক সফ্টেইনার’য়ের বদলে বেইকিং সোডা কিংবা ভিনিগার ব্যবহার করা ভালো।

ছত্রাক: দেয়ালে ছত্রাক জমলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই এর বিস্তার শুরু হয়ে যায়। এরপর তিন সপ্তাহের মধ্যেই দেয়ালে ছত্রাকের ছোপ ছোপ সংক্রমণ চোখে পড়বে। পুরানো এবং আলো-বাতাস চলাচল কম করে এমন ঘরে এগুলো বেশি দেখা যায়। এদের কারণে দেয়াল নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ঘরের বাসিন্দাদের কাশি, হাঁচি, সর্দি, গলা ও নাকে অস্বস্তি এবং ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এগুলো ছোট অবস্থায় চোখে পড়লে দ্রুত দেয়াল থেকে তুলে ফেলতে হবে। বেশি বড় হয়ে গেলে পেশাদার লোকের সাহায্য নিতে হবে। ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখলে এই ছত্রাক আক্রমণ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।

কোয়াটেনারি অ্যামোনিয়াম কম্পাউন্ড: জীবাণুনাশক স্প্রে, ওয়াইপস ইত্যাদি পরিষ্কারক প্রসাধনীতে এই উপাদান মেলে। এই উপাদানগুলো মূলত এক ধরনের কীটনাষক। তবে সব জীবাণু ধ্বংস করতে এতটা শক্তিশালী উপাদানের প্রয়োজন নেই। বরং সাবান-পানির চাইতে এই উপাদান খুব বেশি কার্যকর নয়। এই বিষাক্ত উপাদান ফুসফুসে অস্বস্তি সৃষ্টি করে, দায়ী হাঁপানি ও ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার জন্য। নারী-পুরুষ উভয়েরই প্রজনন ক্ষমতার উপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এই উপাদান। তাই অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল পরিষ্কার যতটা কম ব্যবহার করা যায় ততই মঙ্গল।

রং ও বার্নিশ: রং যত পুরানো হয় ততই বিষাক্ত হয়ে ওঠে। ১৯৮০ সালের আগের তৈরি ঘরবাড়ির রংয়ে আছে দস্তা যা বর্তমানে নিষিদ্ধ। এখনকার সময়ে রংয়ের ধরন দুটি, তেলভিত্তিক ও পানিভিত্তিক। পানিভিত্তিক রংয়ের ঝুঁকি কম অপরটির তুলনায়। প্রাকৃতিক রং সবচাইতে নিরাপদ। কারণ এতে কোনো ‘সলভেন্টস’ নেই এবং গন্ধহীন। আর পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে ব্রাশে পানি নেওয়াই যথেষ্ট, ‘টারপেন্টাইন’ ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। রংয়ের কাজ করার সময় জানালা খোলা রাখা উচিত।

শিশুদের প্রসাধনী: শিশুদের জন্য তৈরি অসংখ্য প্রসাধনীতে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান থাকে। যেমন- বেবি ওয়াইপস’য়ে থাকে ‘ব্রনোপল’ যা ফুসফুস, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। প্লাস্টিকের খেলনা ও বোতলে থাকে ‘বিপিএ’ যা শিশুর হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। তাই বেছে নিতে হবে প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি প্রসাধনী, কাঠ কিংবা তুলার তৈরি খেলনা।

সস্তা আসবাবপত্র: ‘প্লাইউড’ ও ‘পার্টিকেল বোর্ড’য়ের তৈরি আসবাবপত্রে থাকে ‘আইসোসায়ানেট’ কিংবা ‘ফরমাল্ডিহাইড’ আঠা। দুটাই বিষাক্ত যদি শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে প্রবেশ করে। সস্তা আসবাবপত্রে আরও থাকে ‘ক্লোরিনেইটেড’ ও ‘ব্রোমিনেইটেড ফ্লেইম রিটার্ডেন্ট’। সস্তা ‘পলিউরিথেন ফোম’য়ের তৈরি এই আসবাবপত্র পরিবারের মানুষের যেমন ক্ষতি করবে, তেমনি আগুন জ্বলে এগুলোতে দ্রুত। এই আসবাবপত্রে থাকা রাসায়নিক উপাদানগুলো হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট, ক্যান্সার, স্নায়বিক জটিলতা ইত্যাদির জন্য দায়ী। আসবাবের ক্ষেত্রে পাইন ও বাঁশ আদর্শ।

পারক্লোরোইথিলিন: কার্পেট পরিষ্কার, ‘ড্রাই-ক্লিনিং’, দাগ পরিষ্কার করে এমন প্রসাধনীতে এই উপাদান পাওয়া যায়। সম্ভাব্য ক্যান্সার সৃষ্টিকারক উপাদান হিসেবে চিহ্নিত এটি। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমেই এটি শরীরে প্রবেশ করে বেশি, যার কারণে অনেকেই শারীরিক ভারসাম্যহীনতা, মাথা ঘোরানো ইত্যাদি অনুভব করেন। সদ্য ‘ড্রাই ক্লিন’ করা কাপড় বা কার্পেট থেকে আসা গন্ধে মিশে থাকে এই উপাদান। ড্রাই ক্লিনিং’য়ের বদলে পানিতে দ্রবণীয় পরিষ্কারক ব্যবহার করাই নিরাপদ।

সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড: ওভেন পরিষ্কার ও পয়নিষ্কাশন প্রণালীর রাস্তা খুলতে যেসব উপাদান ব্যবহার হয় তাতে এই উপাদান মেলে। সাবান, কাগজ, বিস্ফোরক, পেট্রোলিয়াম পণ্য ইত্যাদিও আছে উপাদানটি। এর সংস্পর্শে আসলে তীব্র জ্বলুনি হয়। সামান্য মাত্রায় নিঃশ্বাসের সঙ্গে প্রবেশ করলে অস্বস্তি হয় নাক, গলা ও শ্বাসনালীতে। চোখের সংস্পর্শে আসলে অন্ধও হয়ে যেতে পারেন। বেইকিং সোডা এর আদর্শ বিকল্প। 

প্রসাধনী: মেইকআপের প্রসাধনীতেও উচ্চমাত্রায় ক্ষতিকর রাসায়নিক ‍উপাদান থাকে, যা ক্ষতি করে প্রজনন ক্ষমতার, ক্যান্সার সৃষ্টি করে ইত্যাদি। নেইল পলিশ, সানস্ক্রিন, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার এদের মধ্যে সবচাইতে ঝুঁকিপূর্ণ। যেমন সানস্ক্রিনে থাকে ‘অক্সিবেনজিন’, নেইল পলিশে ‘ডিপিবি’, শ্যাম্পু ও সাবানে ‘ইথাইলিন অক্সাইড’ ইত্যাদি বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান যা নানান শারীরিক সমস্যার জন্য দায়ী।

ডাস্ট মাইটস: খালি চোখে দেখা না গেলেও পোষা প্রাণীর শরীরে, ধুলায় এবং মরা চামড়ায় থাকে এগুলো। একটি তোষকে এক লাখ থেকে ১০ লাখ মাইটস থাকতে বলে মন্তব্য করে বিশেষজ্ঞরা। আর্দ্র পরিবেশে এদের বংশবিস্তার হয় দ্রুত। নিঃশ্বাসের সঙ্গে তা প্রবেশ করলে ফুসফুসে সংক্রমণ, হাঁপানি ইত্যাদি দেখা দেয়। এজন্য বিছানার চাদর, বালিশের কভার পরিষ্কার রাখতে হবে এবং কিছুদিন পর পর গরম পানি দিয়ে ধুতে হবে। ঘর পরিষ্কারে ‘হোয়াইট ভিনিগার’ কিংবা ‘ইউক্যালিপ্টাস অয়েল’ ব্যবহার করলে উপকার মিলবে।

কার্পেট: ঘরের পরিবেশ দূষণে কার্পেট থাকবে প্রথম সারিতে। নতুন কার্পেটের তাজা গন্ধ বাতাসে ছড়ায় ‘ফর্মাল্ডিহাইড’, ‘টোলুইন’ এবং ‘আর্সেনিক’। এছাড়া কার্পেট পরিষ্কার কিংবা দাগ ওঠাতে যেসব রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় সেগুলোও ক্ষতিকর। উলের কার্পেট হতে পারে বিকল্প। পাটের কার্পেটও হতে পারে পরিবেশবান্ধব বিকল্প। কার্পেট পরিষ্কারের ক্ষেত্রে বিষাক্ত উপাদান নেই এমন পরিষ্কারক খুঁজে বের করতে হবে। এগুলো হল যার কোনো গন্ধ নেই এবং নেই ‘অ্যামোনিয়াম হাইড্রক্সাইড’।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন