হাত দেখে দেহের অবস্থা বোঝা

ভাগ্য নয়- হাত, নখ কিংবা মুষ্টির জোর থেকে বোঝা যায় শারীরিক নানান বিষয়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2019, 09:21 AM
Updated : 22 August 2019, 09:23 AM

হাত দেখিয়ে মানুষ সাধারণত ভাগ্যের কথাই জানতে চায়। তবে দেহের বিভিন্ন রোগের লক্ষণও প্রকাশ পায় হাত কিংবা নখে।

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের তথ্য নিয়ে সাজানো প্রতিবেদন থেকে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হল।

দৃঢ় মুষ্টি সবল হৃদয়: হ্যান্ডশেইক’য়ের মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পেতে পারে। পিএলওএস ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত হওয়া আমেরিকান গবেষকদের করা এক গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, দৃঢ় ভাবে আকড়ে ধরার মাধ্যমে দেহের সুস্থ রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া নির্দেশ করে। অর্থাৎ জোরে আঁকড়ে ধরে হ্যান্ডশেইক বা করমর্দনের সঙ্গে হৃদপিণ্ডের সঠিক কর্মকাণ্ড প্রকাশ পাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে।

দুর্বল মুষ্টি ছোট জীবন: বিএমজে’ জার্নালে প্রকাশিত হওয়া যুক্তরাজ্যের গবেষকদের করা একটি গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে- হাতের জোর থেকে বিভিন্ন অঙ্গের পেশির স্বাস্থ্য আন্দাজ করা যায়। পাশাপাশি দেহের সার্বিক পুষ্টির বিষয়ে আন্দাজ করা সম্ভব। প্রায় ৫ লাখ নারী পুরুষের ওপর পর্যবেক্ষণমূলক এই গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে যাদের আঁকড়ে ধরা অতটা সবল নয় তাদের মধ্যে শতকরা ২০ শতাংশের হৃদরোগ ও ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

মুষ্টি জোড়ালো তো বুদ্ধি ভালো: শুধু স্বাস্থ্যই নয়, ২০১৮ সালে ‘ইউকে বায়োব্যাংক’য়ের তথ্য নিয়ে পর্যবেক্ষণমূলক একটি গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, যাদের মুষ্টির জোর আছে তাদের কাজ করার ক্ষমতা ভালো এবং দ্রুত সমস্যা সমাধান করতে পারে।

নখের অগ্রভাগ: আঙ্গুলের ডগায় বা নখের আগায় যদি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি দেখা যায় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত হবে। চিকিৎসাশাস্ত্রে একে বলা হয় ‘নেইল ক্লাবিং’।

নিউ ইয়র্কের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডেবলা জালিম্যান বলেন, “নখের আগার নিচের দিকে আঙ্গুলের অগ্রভাগে অতিরিক্ত কোষের বৃদ্ধি ঘটে। এর কারণ হতে পারে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কম যা ফুসফুসের রোগের কারণে হতে পারে।”

নখ কামড়ানো- ওসিডি’র লক্ষণ: বদভ্যাসের চাইতেও বাজে কিছু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর সেটা হল ‘অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার’ বা ওসিডি। এই অতিরিক্ত খুঁতখুঁতে স্বভাবের লক্ষণ হতে পারে নখ কামড়ানো, যা কিনা নিজের মধ্যে অস্বস্তি বা কোনো কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না সেই ভাবের প্রকাশ করে। এরকম হলে মনোবিষয়ক-বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

নখের রংয়ের পরিবর্তনে থাইরয়েড সমস্যা: যদি মনে হয় নখ উঠে আসছে বা রং পাল্টে হয়ে যাচ্ছে সাদা, সবুজ বা হলুদ তবে সেটা হতে পারে ব্যাক্টেরিয়া অথবা ফাঙ্গাসের আক্রমণ। চিকিৎসাবিজ্ঞানে যাকে বলা হয় ‘অনিকোলসিস’। তবে থাইরয়েডের সমস্যা থেকেও এরকম হতে পারে। তাই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

পাতলা নখ রক্তশূন্যতার লক্ষণ: রক্তশূন্যতা অর্থাৎ রক্তে আয়রন বা লৌহের অভাবের কথা বেশিরভাগেরই জানা। আর এই সমস্যার লক্ষণ হতে পারে পাতলা নখ।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে রক্তশূন্যতার বিভিন্ন কারণ বলা হয়েছে। যেমন- ঋতুস্রাব, গর্ভধারণ, খাদ্যতালিকায় লৌহ-জাতীয় খাবার না থাকা কিংবা আলসার।

তাই নখ পাতলা হয়ে ধনুকের মতো বাঁকা হতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ‍উচিত হবে।

নখের কালো দাগ, হতে পারে মেলানোমা: ত্বকের ক্যান্সার লক্ষণ শুধু চামড়ায় নয়, নখের নিচের দেখা দিতে পারে।

নখের নিচে কোনো কালো দাগ বা বিন্দু অথবা গাঢ় কোনো দাগ হতে পারে ‘মেলানোমা’র লক্ষণ। এটা এক ধরনের মারত্বক ত্বকের ক্যান্সার। এছাড়া নখের চামড়া বা কিউটিকল ভেতরে দিকে বৃদ্ধি পেলেও এরকম হতে পারে। এরকম হলে রোগ নির্ণয়ের জন্য চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে দ্রুত।

মধ্যমা লম্বা হলে ক্যান্সারের ‍ঝুঁকি কম: ‘বৃটিশ জার্নাল অফ ক্যান্সার’য়ে প্রকাশিত হওয়া একটি গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, যাদের মাঝের আঙ্গুল অনামিকার চাইতে বড় তাদের ‘প্রোস্টেইট ক্যান্সার’ হওয়ার ঝুঁকি কম।

তর্জনি বড়, হৃদরোগের ঝুঁকি: ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ মেডিকেল সাইন্সেস’য়ে প্রকাশিত হওয়া চীনের গবেষকদের করা এক গবেষণায় জানানো হয়- যেসব পুরুষের অনামিকার চাইতে তর্জনী বেশি লম্বা তাদের হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

কব্জিতে লালচে বেগুনি ফোঁড়া: হতে পারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার লক্ষণ। সঙ্গে থাকতে পারে চুলকানি।

ডাক্তার জালিম্যান বলেন, “মনে হতে পারে এটা ছোঁয়াচে ফুসকুড়ি। তবে সেটা ঠিক নাও হতে পারে।”

মধ্যবয়স্কদের মধ্যে সাধারণত এই সমস্যা দেখা দেয়। ফ্লু ভ্যাক্সিন বা ব্যথানাশক ট্যাবলেটের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে এই ধরনের সমস্যা।

আপনার আঙ্গুল যে আকার-ই হোক না কেনো এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন