ভেজা কাপড় থেকে ত্বকের ক্ষতি

বৃষ্টিতে বা ঘামে ভেজা পোশাক বেশিক্ষণ গায়ে থাকলে হতে পারে নানান সমস্যা।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 July 2019, 09:19 AM
Updated : 30 July 2019, 09:19 AM

বর্ষাকালে পথ চলতে টুকটাক বৃষ্টিতে ভেজা হয়েই যায়। তবে সারা বছরই ঘামে ভেজা কাপড় মানুষের গায়ে শুকায়। ব্যাপারটাকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

দৈনন্দিন কিছু ত্বকের সমস্যার পেছনে দায়ী হতে পারে এই ভেজা কাপড়।

এই বিষয়ে জানিয়েছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের প্রধান ও অধ্যাপক এবং সিটি স্কিন কেয়ারের কর্ণধার ডা. রাশেদ মোহাম্মদ খান।

তিনি বলেন, “স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে থাকলে কিংবা ভেজা কাপড় পরিধান করলে শরীরে ছত্রাকের সংক্রমণ বাড়ে। এই ছত্রাকজনীত সমস্যাগুলোর মধ্যে ‘রিংওয়ার্ম’ বা দাদ অন্যতম। শরীরের যেকোনো স্থানেই দাদ দেখা দিতে পারে।”

“প্রথমে আক্রান্ত স্থানে ছোট লাল গোটা হয় এবং সামান্য চুলকায়। পরে আক্রান্ত স্থানে বাদামি বর্ণের আঁশ হয় এবং তা বৃত্তাকারে বড় হতে থাকে। মাঝখানের ত্বক ক্রমেই স্বাভাবিক হয়ে আসে। তবে বৃত্তের আকার বৃদ্ধি পেতে থাকে, সঙ্গে বাড়ে চুলকানিও, বের হতে থাকে আঠালো রস।”

“মাথায় হলে ওই স্থানের চুল উঠে যায়, নখে হলে দ্রুত নখের রং বদলায় এবং শুকিয়ে ভেঙে যেতে পারে। রোগীর ব্যবহার করা যে কোনো অনুষঙ্গ থেকেই তা সুস্থ মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।” বললেন এই চিকিৎসক।

দাদ সারাতে গিয়ে মানুষ ফার্মেসি থেকে মলম কিনে ব্যবহার করা শুরু করে, যা সাময়িক আরাম দিলেও পরোক্ষভাবে ক্ষতি করে, মন্তব্য এই চিকিৎসকের।

তিনি বলেন, “সমস্যার শুরুটা হল ফার্মেসিতে থেকে আনা ‘স্টেরয়েড’ যুক্ত মলম থেকে। ‘স্টেরয়েড’ চুলকানি কমিয়ে দেয়, ফলে রোগী মনে করে দাদ সেরে গেছে, ওষুধ বন্ধ করে দেয়। কদিন পরে দাদ আবার ফিরে আসে, তখন রোগী আবার মলম ব্যবহার শুরু করেন। এই চক্র চলতে থাকলে একসময় আক্রান্ত স্থানের চামড়া পাতলা হয় ও ফেটে যায়। পাশাপাশি আক্রমণকারী ছত্রাক ওষুধ ‘রেজিস্ট্যান্ট’ হয়ে যায়, ফলে সমস্যা তীব্র মাত্রা ধারণ করার পর চিকিৎসকের কাছে গেলে তার দেওয়া ওষুধ কাজ করে না। পক্ষান্তরে চিকিৎসকদের তীব্র মাত্রার ওষুধ প্রয়োগ করতে হয় এই সামান্য সংক্রমণ সারাতে।”

করণীয় সম্পর্কে ডা. রাশেদ বলেন, “বৃষ্টিতে ভেজা হোক কিংবা ঘামে ভেজা, বাইরে থেকে এসে কাপড় পাল্টে, ভালোভাবে গোসল করতে হবে এবং গায়ের পানি শুকাতে হবে। শরীর পুরিপুরি শুকিয়ে গেলে ব্যবহার করতে হবে ভালোমানের এবং ত্বকের সঙ্গে মানানসই ‘ময়েশ্চারাইজার’।”

তিনি আরও বলেন, “যারা এর মধ্যেই দাদ’য়ে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে। এখানে চিকিৎসকের বেঁধে দেওয়া নিয়মবলী পুরোপুরি অনুসরণ করতে হবে। দাদ কিছুটা ভালো হয়ে গেলে ওষুধ বন্ধ করা চলবে না। ‘অ্যান্টি-বায়োটিক’য়ের মতো এই রোগের ওষুধের কোর্স শেষ না করার কারণেও ছত্রাক ওষুধ ‘রেজিস্ট্যান্ট’ হয়ে যেতে পারে। প্রবীন, ডায়বেটিস রোগীদের বেশি সাবধান থাকতে হবে, কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল হয়ে গেছে এবং দাদ তাদের আক্রমণে সফল হয় অনায়াসে।”

“ভেজা কাপড় কিংবা অতিরিক্ত পানির সংস্পর্শে থাকার আরেকটি ঝুঁকি হলো ‘ক্যানডিডা’, যেখানে আঙ্গুলের ফাঁকে কিংবা শরীরের অন্যান্য ভাঁজে সাদা হয়ে যায় এবং ক্ষত সৃষ্টি হয়। দীর্ঘক্ষণ হাত কিংবা পা ভেজা থাকলে, ভেজা জুতা ও কাপড় পরে থাকলে ত্বকের এই রোগ দেখা দিতে পারে।”

এখানেও সমাধান হল শরীর ভালোভাবে পরিষ্কার করে, শুকিয়ে ভালোমানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা। রোগাক্রান্ত হয়ে গেলে ছত্রাকরোধী ওষুধ খেতে হবে ও মলম ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও বাজারে ছত্রাকরোধী পাউডার পাওয়া যায়, প্রয়োজনে সেটাও ব্যবহার করতে হবে। বৃষ্টিতে কিংবা রাস্তার জমে থাকা পানিতে জুতা ও মোজা ভিজে গেলে সেগুলোতে ছত্রাক জমে থাকতে পারে। তাই ‍জুতা-মোজা ভালোভাবে শুকিয়ে সেখানেও এই পাউডার প্রয়োগ করতে হতে পারে বলে জানালেন ডা. রাশেদ।

তিনি আরও বলেন, “বৃষ্টির পানি এবং রাস্তায় জমে থাকা নোংরা পানি থেকে ‘একজিমা’ বা চুলকানি হতে পারে। এর চিকিৎসা ভিন্ন। কারণ চুলকানোর কারণে আক্রান্ত স্থানের ত্বক পুরু হয়ে যায়। এছাড়াও খোস-পাঁচড়া, ফোঁড়া এসবের ঝুঁকি তো আছেই।”

ত্বকের সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রক্ষা আর ‘ময়েশ্চারাইজার’য়ের ব্যবহারকেই মুখ্য হিসেবে উপস্থাপন করেছেন এই চিকিৎসক।

এছাড়াও ঢিলেঢালা ও সুতি কাপড় পরার পরামর্শ দেন তিনি, পরিধেয় কাপড় যেন গায়ে লেগে না থাকে। খেতে হবে তাজা শাকসবজি ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল।

আরও পড়ুন