মানুষ সাধারণত ছয় রকম পুষ্টিহীনতায় ভুগে থাকেন। আর সেগুলো হয়ে থাকে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারনের অভ্যাসের কারণে।
Published : 02 Jun 2019, 07:40 PM
এমনকি সচেতন ভাবে খাবার গ্রহণের পরেও এই ধরনের পুষ্টিহীনতায় একজন সুস্থ মানুষও ভুগতে পারেন। সাধারণ খাদ্যাভ্যাস দিয়ে সব পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা সহজ কথা নয়। প্রতিটি পুষ্টি উপাদান শরীরে ভিন্নভাবে কাজ করে, তাই প্রতিটির অভাবজনীত উপসর্গও ভিন্ন।
খাদ্য ও পুষ্টিবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে সাধারণ কিছু পুষ্টি উপাদানের অভাবজনীত উপসর্গ ও সেই পুষ্টি উপাদানের উৎস সম্পর্কে জানানো হল।
লৌহের অভাব
বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশ ‘আয়রন’ বা লৌহের অভাবে ভুগছেন। লোহিত রক্ত কণিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান লৌহ, যা ‘হিমোগ্লোবিন’য়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। শিশু আর ঋতুস্রাব চলার সময় নারীদের মাঝে এই পুষ্টি উপাদানের অভাব হরহামেশাই দেখা যায়।
নিরামিষাশীদেরও এই পুষ্টি উপাদানের অভাবে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি, কারণ তারা প্রাণিজ উৎস থেকে আসা খাবার খান না। লৌহের অভাব অতিরিক্ত হয়ে গেলে অবসাদ, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া, রক্তশূন্যতা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
লৌহের উৎস: মাংস, মাছ, বীজ-জাতীয় খাবার, মটরশুঁটি এবং পত্রল শাকসবজি।
আয়োডিনের অভাব
‘থাইরয়েড’ গ্রন্থির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে এবং ‘থাইরয়েড’ হরমোনের স্বাভাবিক উৎপাদন সচল রাখতে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আয়োডিন। তবে বিশ্বব্যাপি এক তৃতীয়াংশ মানুষ এই পুষ্টি উপাদানের অভাবে ভুগছে। শরীর ও হাড়ের বৃদ্ধি এবং মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য ‘থাইরয়েড’ হরমোন অত্যন্ত জরুরি। আয়োডিনের অভাব বোঝার প্রধান উপসর্গ হল ‘থাইরয়েড’ গ্রন্থি অস্বাভাবিক বড় হয়ে যাওয়া, যাকে সাধারণ মানুষ গলগণ্ড হিসেবে চেনেন। অস্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধি, দ্রুত হাঁপিয়ে ওঠাও আয়োডিনের অভাবের লক্ষণ। শিশুদের আয়োডিনের অভাব অতিরিক্ত হয়ে মানসিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় চিরস্থায়ীভাবে।
আয়োডিনের উৎস: সামুদ্রিক লতাগুল্ম, মাছ, দুগ্ধজাত খাবার, ডিম ইত্যাদি।
ক্যালসিয়ামের অভাব
শরীরের প্রতিটি কোষের ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। হাড় ও দাঁত গঠনে এবং তাদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এই উপাদান গুরুত্বপূর্ণ। ক্যালসিয়ামের অভাব হলে হৃদযন্ত্র, পেশি এবং স্নায়ু কোনোটাই স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে পারবে না। তবে এই উপাদানের মাত্রা শরীরে নিয়ন্ত্রিত হয় কঠোরভাবে, বাড়তি ক্যালসিয়াম গিয়ে জমা হয় হাড়ে। যখন শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দেয় তখন হাড় তার জমা করা ক্যালসিয়াম নিঃসরণ করে। হাড় থেকে বেশি ক্যালসিয়াম বেরিয়ে গেলে হাড় দূর্বল হয়ে যায়। ক্যালসিয়ামের অভাবের লক্ষণ হল ‘অস্টিওপোরোসিস’, যে রোগে হাড় নরম ও ভঙ্গুর হয়ে যায়।
ক্যালসিয়ামের উৎস: কাঁটাওয়ালা মাছ, দুগ্ধজাত খাবার, গাঢ় সবুজ সবজি। যেমন- পালং শাক, ব্রকলি ইত্যাদি।
ম্যাগনেসিয়ামের অভাব
হাড় ও দাঁত সুগঠনের জন্য প্রয়োজন ম্যাগনেসিয়াম। টাইপ টু ডায়াবেটিস, বিপাকজনীত সমস্যা, হৃদরোগ ও বাত হতে পারে এই পুষ্টি উপাদানের অভাবে। হৃদযন্ত্রের অস্বাভাবিক তাল, পেশিতে ব্যথা, পা ব্যথা হয়ে যাওয়া, অবসাদ, মাইগ্রেইন ইত্যাদিও ম্যাগনেসিয়ামের অভাবজনীত লক্ষণ। ডিএনএ, আরএনএ এবং প্রোটিনের ‘সিনথেসিস’ প্রক্রিয়ায় এই পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ’য়ের দেওয়া তথ্য মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৪২০ মিলিগ্রাম আর একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর প্রতিদিন ৩১০ থেকে ৩২০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োজন।
ম্যাগনেসিয়ামের উৎস: শষ্যজাতীয় খাবার, বাদাম, ডার্ক চকলেট, গাঢ় সবুজ পত্রল শাকসবজি।
ভিটামিন বি টুয়েলভ’য়ের অভাব
পানিতে দ্রবণীয় এই ভিটামিন রক্ত তৈরিতে এবং মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে সমস্যা হল আমাদের শরীর ভিটামিন বি টুয়েলভ তৈরি করতে পারে না, তাই তা ভোজ্য উৎস থেকেই তা সংগ্রহ করতে হবে। এই উপাদানের প্রধান উৎস হল প্রানিজ খাবার। তাই নিরামিষাশীদের মাঝে এই উপাদানের ঘাটতি প্রায়শই দেখা যায়। ভিটামিন বি টুয়েলভ’য়ের অভাবে ‘মেগালোব্লাসটিক’ রক্তশূন্যতা হয়, যেই রোগে লোহিত রক্ত কণিকাকে আকারে বড় করে দেয়।
ভিটামিন বি টুয়েলভ’য়ের উৎস: মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার।
ভিটামিন ডি’র অভাব
এই ভিটামিনের প্রধান উৎস হল সূর্যালোক, তাই এর অভাব দূর করতে সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসা জরুরি। ভিটামিন ডি চর্বিতে দ্রবণীয় এবং কাজ করে ‘স্টেরয়েড’য়ের মতো। এটি রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে বিভিন্ন কোষে পৌঁছে এবং জিনকে নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিটি কোষে ভিটামিন ডি’র গ্রাহক থাকে। হাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাওয়া এবং পেশি ও হাড়ের দূর্বলতা বেড়ে যাওয়া এই ভিটামিনের অভাবজনীত একটি অন্যতম লক্ষণ। শিশুদের ‘রিকেট’ রোগ হওয়ার পেছনেও ভিটামিন ডি’র অভাবের ভূমিকা রয়েছে।
ভিটামিন ডি’য়ের উৎস: কড লিভার অয়েল, স্যামন মাছ, ডিমের কুসুম।
ছবি: রয়টার্স।
আরও পড়ুন