আর সেই জলাধারা সঙ্গে মিশে মনের আবেগ প্রকাশ করেছেন লেখক এখানে।
আইজিএফ সম্মেলন (ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম ২০১৭) শেষ হয়েছে। জেনিভার জাতিসংঘ দপ্তরে আর পা মাড়িয়ে কাজ নেই। সতীর্থদের অনেকে বিদায় নিয়ে ফ্লাইট ধরেছে। বাক্সপেটরা গুছিয়ে ফেলেছি শেষ কয়েকজনও।
ভুটান সতীর্থরা লাগেজ হাতে জুরিখ মুখে রওনা করতে করতে হুঁশিয়ার করলো, যদি ফিরতে দেরি হয়ে যায়; যেও না বরং!
করনাভিন থেকে ১৪ নম্বর ট্রামে মাত্র কয়েক মিনিটের পথ জংশন স্টেশন।
যদি এয়ারপোর্টের ট্রেনটা মিস করি? তারপর যদি ফ্লাইটটাও মিস করি?
হাইওয়ের পাশ দিয়ে ফুটপাত ধরে হাঁটা দিয়ে একটা ব্রিজের উপর এসে নিচে বয়ে যাওয়া নদী দেখি। কোনটা রোন? কোনটা আর্ভ?
নদীটা যেদিকে যাচ্ছে সেটার পিছু নেব ভেবে দাঁড়ানো জায়গা থেকে নেমে একটা আবাসিক এলাকার পেছন দিকে দাঁড়ালাম। কতক হেঁটে একেবারে সুনসান এই সীমানায় আর এগুনো ঠিক হবে কি না সে দ্বন্দ্বে পড়ে পা সায় দিল না চলায়।
গভীরতা কম। কোথাও সবুজাভ, কোথাও নীলচে। স্ফটিক জলের কি কোনো রং হয়? টলটলে জলস্তর ভেদ করে দেখে ফেললাম পাথুরে তলদেশে শুয়ে থাকা আস্ত একটা সাইকেল।
হাতের ম্যাপে গন্তব্যে আঙ্গুল বসিয়ে এক পথচারীকে আটকে জানতে চাইলাম, যেখানে মিলেছে আর্ভ আর রোন, সেটা কোথায় দেখতে পাবো?
আমার ডানে রোন। বাঁয়ে একটা আবাসিক এলাকা। রোনের এপাশে-ওপাশে ডিসেম্বরের ঠাণ্ডায় পত্রপল্লবহীন গাছ মসের আস্তর গায়ে বিমূর্ত চিত্রের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রকৃতির ক্যানভাসে। শূন্যের আশপাশে ঠাণ্ডাতেও এখানে প্রকৃতি বিবর্ণ নয়। স্রোতহীন নদীতে ভাসছে-উড়ছে নানা রংয়ের হাঁস।
যখন তখন গলা ডুবিয়ে দিচ্ছে নদীতে। মানুষে এদের ভয়ডর নেই। যেন এটা ওদের জলজপুর।
পেছন ফিরে হাঁটা দেওয়া ছাড়া ডানে-বামে রাস্তা নেই। সোজাই যেতে হবে। আমার আগে আগে এক তরুণও চলেছে।
এখান থেকে একটু দূরে উঁচু একটা ব্রিজ। উপর থেকে দুটো নদী দেখতে ওখানে দাঁড়ায় লোকে। দুটো জলধারা কেমন করে নিজ নিজ রংয়ের স্বকীয়তা ধরে রেখে পাশাপাশি গড়িয়ে চলেছে তা দেখতেই মানুষের ছুটে আসা।
নিচে নদীটা অনেকটা চওড়া। কারণ এখানে আর্ভ এসেছে, এখানে রোনও বইছে। তারপর দুটো স্রোত মিলে এগিয়ে গেছে আল্পস আশীর্বাদপুষ্ট রোন।
আর্ভকে মনে মনে বললাম, “তোমার কথা পৌঁছে দেব সারি নদীর কানে।”
বুক ভরে নদীর ঠাণ্ডা বাতাস টেনে নিতে নিতে দারুণ নির্ভার মনে হলো নিজেকে। এবার তাহলে ফেরা যায়।
ছবি: লেখক।