তারও আগে যেতে হবে ঝালকাঠি।
ফ্রেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের বুধবার হুট করেই প্যাডেল স্টিমার পিএস মাসহুদ’য়ে চেপে ঝালকাঠি রওনা হয়ে বুড়িগঙ্গার জলে শুরু করে ভোর পাঁচটায় বরিশালে কীর্ত্তনখোলা হয়ে একটু আগে মানে সকাল সাড়ে আটটায় সুগন্ধার তীরের ঝালকাঠি ঘাটে নামলাম।
ছোট্ট মফস্বল শহর ঝালকাঠি। শহর ছোট হলেও এর ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিশাল।
তেমনি একজন ‘ফারদিন’ লঞ্চের টিকিট মাস্টার ইসহাক শেখ। তার সঙ্গে কথা বলে পাশে স্টিমারঘাটের কাছের হোটেলে সকালের নাস্তা সেরে নৌকাঘাট এসে ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া করি।
ধানসিঁড়ি নদী সুগন্ধা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে প্রায় নয় কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে রাজাপুরের কাছে জাঙ্গালিয়া নদীতে মিশেছে। আমাদের বাহন ইঞ্জিন চালিত নৌকা এখন সুগন্ধা নদী হয়ে বিষখালী নদীর পাশ দিয়ে মোহনার কাছে চলে এসেছে।
চারটি নদীর সংযোগস্থল থেকেই ধানসিঁড়ি নদীর শুরু। ধীরে সুস্থ্যে আমাদের নৌকা মোহনা হয়ে ধানসিঁড়ি নদীর দিকে এগিয়ে যায়। তারপর বামে বাঁক নিয়ে সোজা প্রবেশ করে ধানসিঁড়ি নদীতে।
জলবায়ু যোদ্ধা প্রিয় অনুজ সোহানুর রহমান সোহান বরিশাল থাকলেও তার শেঁকড় ঝালকাঠিতে। দেখা হলেই সে বলে, “চলেন ধানসিঁড়ি বেড়িয়ে আসি।”
সোহানের সঙ্গে যাওয়া না হলেও এবার ধানসিঁড়ি নদীতে ঠিকই এলাম।
ধানসিঁড়ি নদীর শুরুতে নদীর দুপাড়ে প্রবেশটুকু ছাড়া কোথাও খোলা প্রান্তর ঠিক সেভাবে পেলাম না। প্রবেশ মুখ পার হতেই দেখলাম নদীপথ সরু হতে শুরু করেছে।
নদীর দেশে নদীর মৃত্যু, চিন্তা করা যায় না! শুধু নদী কেনো, এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ, নৈসর্গিক সৌন্দর্য কিছুই এখানে আগের মতো নেই। চলতি পথে লোকজনের কত অভিযোগ শুনতে হল প্রিয় ধানসিঁড়ির বেহাল দশার জন্য।
তারপর দুইটা কিছু খেতে তার বাড়ি যেতে অনুরোধ করেন আবু বকর লস্কর।
ইতিমধ্যে ছেলে-বুড়োর ভীড় জমে গেছে, সে ভীড় বাড়তে না দিয়ে আমরা তাড়াতাড়ি আবার নৌকায় চড়ে বসি। এভাবে যতটাই সামনে এগিয়ে যায় আমাদের নৌকা ততটাই ধানসিঁড়ির ম্রিয়মান অবস্থা দেখে মন কেঁদে ওঠে, দুচোখের পাতা ঝাঁপসা হয়ে আসে।
প্রাচীন মহারাজগঞ্জ বর্তমানের ঝালকাঠি। এখানকার জেলে সম্প্রদায় ও জঙ্গলাকাঠি মিলে এর নাম হয়েছে ঝালকাঠি। ঝালকাঠি আসা একেবারে সহজ। ঢাকার সদরঘাট থেকে সরাসরি ঝালকাঠির লঞ্চ আসে। আবার লালকুঠি ঘাট থেকে আসে স্টিমার। লঞ্চ ছাড়ে রাত আটটায়। স্টিমার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। সিঙ্গেল বা ডাবল বা ফ্যামিলি কেবিনে বা ডেকে চলে আসতে পারেন। কেবিন ভাড়া সিঙ্গেল ৮শ’ টাকা। ডাবল ১ হাজার ৬শ’ টাকা।
সকালে ঝালকাঠি নেমে খেয়াঘাট থেকে নৌকা রিজার্ভ নিয়ে চলে যান নদীর পর নদী পারি দিয়ে ধানসিঁড়িতে।
ঝালকাঠিতে থাকার জন্য মোটামুটি মানের হোটেল রয়েছে। লঞ্চ বা স্টিমার ঘাটের পাশেই এসব হোটেলে থাকতে পারবেন। খাওয়ার জন্য একইভাবে ঘাটের পাশের সাধারণ রেস্তোরাঁর ওপর অসাধারণ ভরসা করতে পারেন।
নৌকায় চলাচল করতে হবে। সুতরাং সঙ্গে গামছা ক্যাপ বা টুপি এবং খাবার পানি সঙ্গে রাখবেন। নদীর পানিতে ভুলেও বিস্কুট, চিপস, লজেন্স, ইত্যাদির প্যাকেট ও পানির বোতল ফেলবেন না। সাঁতার জানলেও সঙ্গে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে রাখবেন।