বিমানবন্দরে যেসব খাবার থেকে দূরে থাকা ভালো

সব খাবারই যে পেটে সইবে এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2019, 12:00 PM
Updated : 1 March 2019, 12:05 PM

তাই বলে ‘ফ্লাইট ডিলে’ কিংবা ‘ট্রানজিট’য়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য আটকালে কোনো কিছু খাবেন না সেটাও তো হতে পারে না।

তবে কিছু খাবার এড়িয়ে যাওয়া উচিত স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে।

ভ্রমণ-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে কয়েকটি খাবারের নাম এখানে দেওয়া হল যেগুলো বিমান ভ্রমণের আগে এড়িয়ে যাওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

প্রেটজেল্স: এক ধরনের সুস্বাদু পাউরুটি-জাতীয় খাবার। যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার এমএনসি নিউট্রিশন’য়ের কর্ণধার এবং সেখানকার রেজিস্টার্ড পুষ্টিবিদ মার্জরি নোলান খন, এই খাবারকে খাবার হিসেবেই গ্রহণ করতে নারাজ। এর সুগন্ধ হয়ত লোভ জাগাবে। তবে দীর্ঘ বিমানযাত্রার আগে কার্বোহাইড্রেট-জাতীয় এই খাবার খেলে বিমান আকাশে উড়াল দেওয়ার আগেই আপনার আবার ক্ষুধা লেগে যেতে পারে। বিমানযাত্রার আগে প্রোটিন ও আঁশযুক্ত খাবার খেতে পারলে ভালো। আর বাসা থেকে স্যান্ডউইচ, পাস্তা, গ্রিল চিকেন ইত্যাদি খাবার সঙ্গে করে নিয়ে গেলে আরও ভালো।

মুখোরোচক খাবার: ফিলাডেলফিয়ার আরেক রেজিস্টার্ড পুষ্টিবিদ লিবি মিল্স বলেন, “বিমানবন্দরে বিমানের জন্য অপেক্ষা করার সময় আশপাশের মুখোরোচক খাবার থেকে দুরে থাকাই মঙ্গল। বরং গন্তব্যে পৌঁছে নতুন কোনো খাবার খাওয়া হবে আরও ভালো পরিকল্পনা।”

“বিমানে ওঠার আগে কফি পান করা জরুরি হলে বিশেষ ধরনের কোনো কফির দিকে না গিয়ে সাধারণ কফি পান করা ভালো। কিংবা বিমানে বসে কুকিজ না চিবিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে মজার কোনো আইসক্রিম খাওয়ার ফন্দি আঁটুন।”

পারফেই: টক দইয়ের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ফল মেশানো একটি খাবার। হয়ত ভাবছেন এটা খাওয়া যায়, স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু। টক দই এবং ফল স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু ঠিকই তবে বিমানবন্দরের প্রাঙ্গণে পাওয়া এই খাবার স্বাস্থ্যকর নাও হতে পারে।

এই টক দইতে মুখোরোচক স্বাদ আনার জন্য যোগ করা হয়েছে চিনি আর তাতে থাকা ফলগুলো সতেজ না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাই ফ্রিজ থেকে সাধারণ টকদই নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

মিষ্টি দই: টকদই যখন খাচ্ছি তখন একটু বাড়তি স্বাদেরটাই খাই, এমনটা ভাবাও ভুল হবে। কারণ এখানেও আছে প্রচুর পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত চিনি।

নোলান খন বলেন, “এদের মধ্যে কিছু থাকে যেগুলোর নিচে নাকি ফল দেওয়া আছে। আসলে ফল নয়, আছে জেলি। তাই এক কাপ অতি সাধারণ গ্রিক ইয়োগার্ট বা টক দই হবে সবচাইতে নিরাপদ পছন্দ।”

চিনি-বাদামের লাঠি: বাংলা কথ্য ভাষায় যাকে বলে বাদামের কটকটি, যা ‘গ্রানোলা বার’ হিসেবেও পরিচিত।

এ সম্পর্কে নোলান খন বলেন, “‘গ্রানোলা বার দেখতে স্বাস্থ্যকর মনে হয়, তবে আসলে তা নাও হতে পারে। কিছু আছে যা অনেকটা ক্যান্ডির মতোই প্রক্রিয়াজাত চিনিতে ভরপুর কিন্তু প্যাকেটটা দেখে মনে হবে তা যেন স্বাস্থ্যগুণ সম্পন্ন। তাই স্বাভাবিক তাপমাত্রায় টিকে থাকতে পারে, সহজে বহনযোগ্য এবং ১২ গ্রাম কিংবা তারও কম চিনি রয়েছে এমন কোনো স্ন্যাকস খুঁজতে মনোযোগ দিন।”

কফি: অপেক্ষার প্রহর কাটানোর জন্য কফি চুমুক দেওয়াটা বেশ আকর্ষণীয় মনে হবে। তবে বিমানে বসার পর আপনি কপাল চাপড়াতে পারেন।

লিবি মিল্স বলেন, “কফিতে থাকা ‘ক্যাফেইন’ স্নায়ুকে উত্তেজিত করে, যা বিমানযাত্রা আরামদায়ক হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আবার কফির কারণে ঘন ঘন প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে হতে পারে। তাই কফির বদলে ভেষজ উপাদানযুক্ত এক কাপ চা হবে আদর্শ।”

অ্যালকোহলে লাগাম টানুন: বিমান যাত্রার আগে এক গ্লাস ওয়াই পান করা তেমন কোনো ক্ষতিকর নয়। তবে ‘অ্যালকোহল’ ধরনের পানীয় যত কম পান করা যায় ততই মঙ্গল। কারণ গভীর ঘুমের বারোট বাজাতে পারে এই ধরনের পানীয়।

মিল্স বলেন, “আপনি হয় খুব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়বেন। তবে দীর্ঘ যাত্রার ক্ষেত্রে আপনি খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে যাবেন। কারণ অ্যালকোহল হজম করতে গিয়ে যকৃতকে বাড়তি শক্তি প্রয়োগ করতে হয়। যে কারণে যাত্রার শেষে গন্তব্যে পৌঁছে ক্লান্তিও ভর করতে পারে। আপনি নিশ্চই চান না ক্লান্তির জন্য ভ্রমণটা মাটি হয়ে যাক।”

ডাবল ডেকার স্যান্ডউইচ: বিমানবন্দরের কোনো এক এক রেস্তোরাঁয় মুখরোচক ভাজা মাংসের স্যান্ডউইচের লোভ সামলানো বেশ কঠিন কাজ। তবে সেই দুঃসাধ্য সাধন করতে পারলে পরে নিজের প্রতিই কৃতজ্ঞ থাকবেন।

কুড়মুড়ে, ভাজা, বিশেষ পাউরুটি- এসব থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন লিবি মিল্স। কারণ এগুলোতে থাকবে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট ও চর্বি।

পাকস্থলী যেসব খাবারে অভ্যস্ত না: লম্বা সময়ের জন্য আকাশে উড়াল দেওয়ার আগে পরিপাকতন্ত্রের পরিচিত নয় এমন কিছু খাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

নোলান বলেন, “সাধারণভাবে যেসব খাবার গণ্ডগোল বাঁধাতে পারে সেগুলো থেকে দূরে থাকাই ভালো হবে যে কোনো ভ্রমণে। সেগুলো হতে পারে চর্বিযুক্ত পিচ্ছিল খাবার। তাই বার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন ফ্রাই ইত্যাদি জাঙ্কফুড থেকে দুরে থাকাই মঙ্গল। কারণ ভ্রমণের আগে এগুলো খেলে পেটে গোলমাল হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি।”

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন-