ভ্রমণে যখন একা

নিজের মতো বেড়ানোতে আনন্দ আছে। তবে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা দরকার।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2018, 08:50 AM
Updated : 12 Oct 2018, 03:05 PM

আকিব জাভেদ বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তবে মাঝেমাঝেই নিজের মতো ঘুরে ফিরে বেড়ান পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে।

তার অভিজ্ঞতায় একাকী ভ্রমণে কী কী বিষয় মাথায় রাখা উচিত সেগুলো বরং জেনে নেওয়া যাক।

জীবনে প্রথমবার একাকী ভ্রমণ করা সব সময়েই উদ্বেগের। কোথায় যাবেন, কীভাবে যাবেন, কী করবেন- এগুলো ভাবতে ভাবতেই হয়ত আর যাওয়া হয়ে ওঠে না।

বরং চিন্তা ঝেড়ে মাঠে নেমে পড়ুন।

গন্তব্য  নির্বাচন: হয়ত এরমধ্যে একাকী ভ্রমণের জন্য কিছু স্থান ভেবেছেন। তবে আগে ঠিক করতে হবে, ভ্রমণের প্রাথমিক লক্ষ্য কী! নতুন বন্ধু বানানো, কাজ থেকে বিশ্রাম, নতুন জায়গা দেখা, ট্রেক করা নাকি অন্য কিছু! অথবা ভ্রমণের লক্ষ্য একাধিকও হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রাথমিক লক্ষ্যই আপনার ভ্রমণের গন্তব্য বাছাই করতে সহযোগিতা করবে । 

গন্তব্য ঠিক করার ক্ষেত্রে বাজেটও মাথায় রাখতে হবে। স্বল্প বাজেটে ভ্রমণ করতে চাইলে হোটেলের পরিবর্তে হোস্টেলে থাকতে পারেন। হোস্টেল আপনার থাকার খরচ অনেকটা কমিয়ে দেবে এবং সহজেই অনেক নতুন বন্ধুও পেয়ে যাবেন।  

জীবনের প্রথম একাকী ভ্রমণের জন্য এমন একটি গন্তব্য বাছাই করতে পারেন যেখানে সহজেই অনেক মানুষের সঙ্গে পরিচয় হওয়া যায়। এজন্য ‘টুরিস্ট ফ্রেন্ডলি’ একটি শহর বেছে নেওয়াই ভালো। যেখানে অনেক একাকী ভ্রমণকারী খুঁজে পাবেন এবং যাদের বন্ধুত্ব আপনার একাকিত্বের অনুভূতি দূর করে দিবে । 

ভ্রমণ পথ: ভ্রমণ কী করবেন, কোথায় যাবেন, কখন যাবেন বিস্তারিত পরিকল্পনা না করাই ভালো। গন্তব্যস্থল থেকে দূরে বসে বিস্তারিত প্লান আপনার ল্যাপটপের পর্দায় ভালো লাগতেই পারে। তবে গন্তব্যে পৌঁছে পুরো পরিকল্পনা সাদামাটা মনে হতে পারে।

তাই ভ্রমণের আগে স্থানটি সম্পর্কে সাধারণ কিছু তথ্য জেনে নেওয়া ভালো। যেমন- দর্শণীয় স্থানগুলো, কী খাবেন, কোথায় খাবেন। তবে সবগুলো তারিখ ধরে করার দরকার নেই। যদি রুটিন অনুযায়ী সব করতে চান, তারপরও অতিরিক্ত একদিন হাতে রাখা ভালো।

যেদিনটায় প্রয়োজনে শহরটা ঘুরে দেখতে পারবেন। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন এবং কিছু নতুন কোনো স্থান বা ইভেন্টেরও খোঁজ পেতে পারেন যেটা আপনার ভ্রমণ আনন্দ বাড়িয়ে দিতে পারে। 

গোছগাছ: আপনার একাকী ভ্রমণের প্রাথমিক সঙ্গী কী হতে পারে! যদি ছোটবেলায় বই পড়ুয়া হয়ে থাকেন এবং যদি মনে হয় দিনেদিনে অভ্যাসটা কমে গেছে তাহলে পুরানো অভ্যাসটা ফিরে পেতে ব্যাগে প্রিয় বিষয়ের ওপর দুএকটি বই রাখতে পারেন।  বই পছন্দ না করলে, নিঃসঙ্গ সময়ে একাকিত্ব দূর করতে মোবাইলে গান, নাটক অথবা সিনেমা নিয়ে নিতে পারেন। অথবা একটা ডাইরি রাখতে পারেন, যেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করে রাখতে পারেন।

ভ্রমণে অনেক হাঁটতে হতে পারে। তাই সঙ্গে আরামদায়ক জুতা রাখুন। ঘরের ভেতরে অথবা সৈকতে হাঁটার জন্য একজোড়া প্লাস্টিক অথবা রাবারের হালকা স্যান্ডেল রাখা ভালো। রোদ অথবা বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে রাখতে পারেন একটা ছাতা অথবা রেইনকোট। কারণ আবহাওয়ার কথা কেউ শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারে না।

ভ্রমণ পথে জরুরি প্রয়োজনে একটা পাওয়ার ব্যাংক আপনার মোবাইল সচল রাখতে সাহায্য করবে। লম্বা পথের ভ্রমণের জন্য অবশ্যই পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখা উচিত।

জরুরি ফোন নম্বরগুলো আলাদা একটি কাগজে লিখে রাখুন। ফোনে সব বিস্তারিত থাকলেও আলাদা একটা কাগজে হোটেলের ঠিকানা অথবা গন্তব্য স্থলের প্রয়োজনীয় নম্বরগুলো লিখে রাখা ভালো। আর বিদেশ ভ্রমণ করলে পাসপোর্ট এবং ভিসার ফটোকপি সঙ্গে রাখুন। ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলে অবশ্যই সঙ্গে রাখুন। গন্তব্য শহর ভ্রমণের জন্য বাইক অথবা স্কুটি ভাড়া নিতে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখাতে হবে।

প্রস্তুতি: অনেকেই ভাবেন, একাকী ভ্রমণে- বেড়ানোর স্বাদটুকু নষ্ট করে দিতে পারে আপনার একাকিত্ব। তবে এটা নিজেকে জানার ও নিজস্ব ভাবনার সঙ্গে সময় কাটানোর একটা ভালো উপায়।

তাই নিজের না-বোধক চিন্তাগুলোকে দূরে রাখতে হবে ভ্রমণের আগেই। কারণ শুরুতেই যদি একাকী অনুভূতি দূরে রাখতে পারেন তাহলেই সামনে উন্মুক্ত পথের খোঁজ পাওয়া যাবে। যেখানে নিজেকে আবিষ্কার করতে পারবেন নতুনভাবে।

প্রথমবার একাকী ভ্রমণের প্রস্তুতি এবং ভ্রমণ করা সবসময়েই ‘নার্ভ রেকিং’। হাজারও দুশ্চিন্তা আপনাকে ঘিরে থাকবে প্রতিটা পদক্ষেপে। তবে সব বাধা পেরিয়ে একবার একাকী ভ্রমণের স্বাধীনতার স্বাদ পেয়ে গেলে, আর কখনও ভ্রমণের জন্য সঙ্গী খুঁজতে হবে না।

ছবি: লেখক।

আরও পড়ুন