ডিম, চা-পান বিস্কুট, বাটার বন ছাড়া এখানে অন্য কিছু বিক্রি হয় না।
এটা পশ্চিম কালবিলার গল্প। আমরা কালবিলা এসেছি শাপলা ফুল দেখতে। বরিশালের বিখ্যাত লাল শাপলা। কালবিলা ও সাতলা বিখ্যাত লাল শাপলার জন্য। বিশাল বিলের সাতলা নয় কালবিলা অংশে শাপলা দেখতে এসে ঝরনা’দির সঙ্গে পরিচয়।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় আমরা এমভি টার্ন স্টিমারে চেপে বরিশাল যাত্রা করে পরদিন পৌঁছেছি। আলো আঁধারিতে ফিরোজ মোস্তফার ডাকে সম্বিত ফিরল।
ফিরোজের সঙ্গে এখন আমরা উজিরপুর যাব। দেড় ঘণ্টা দূরের উজিরপুর বরিশালের একটি উপজেলা। এক সময় উজিরপুর যেতে মোটরবাইক একমাত্র ভরসা ছিল। এখন বাসসহ মাহেন্দ্র অটো রিকসার যাতায়াত এই পথে।
আমরা রফিকের মাহেন্দ্র অটোরিকসায় চেপে রওনা হলাম। সেই অটো আমাদের অন্ধকার পথ ধরে ফজরের আজান শুনিয়ে শুনিয়ে এগিয়ে চলল।
চারিদিকে অন্ধকার। সারারাত ঘুমাইনি। চোখ বন্ধ করে একটু ঘুমাবার চেষ্টা করলাম। শাওনের ডাকে ঘুম ভাঙতে দেখি আমরা পৌঁছে গেছি। রাস্তার বাম পাশে ব্যানার টাঙানো। তাতে লেখা পশ্চিম কালবিলা শাপলা পর্যটন কেন্দ্র। বাম পাশে নৌকার মাঝিদের হাঁকডাক।
নৌকা এগিয়ে চলল আপন গতিতে। ইঞ্জিন চালিত না হয়ে লগি বা বৈঠা চালিত নৌকা হলে ভালো হত। কারণ একটু পরপরই নৌকার প্রপেলার স্যাফটে শাপলা আটকে শুধু যে আমাদের যাত্রা বিলম্ব করছিল তা নয় বিলের শাপলারও বারোটা বাজাচ্ছিল।
যা হোক, শাপলা সুন্দরীর আড্ডাখানায় ঢুকে পড়তে বেশি সময় লাগলো না আমাদের।
বিক্ষিপ্তভাবে এখানে ঘিয়ে রঙা শাপলার সঙ্গেও দেখা হয়ে যাচ্ছিলো। প্রচুর চাঁদমালা ফোটার অপেক্ষায়। শাপলা যেমন রাতের বেলা ফোটে, চাঁদমালা ফোটে দিনের বেলা।
কালবিলা বিলে লাল শাপলার পরই চাঁদমালার বসবাস। অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জলায় ফুটে আছে নীল শালুক। এভাবেই বিস্তির্ণ বিলের জলপথে চলতে চলতে হঠাৎ খেয়াল করি ফিরোজ পানিতে কিছু খুঁজছে। এক সময় পেয়েও যায়। দেখি তার হাতে অনেকগুলো ‘ঢ্যাপ’ বা শাপলার ফল। অসংখ্য লাল শাপলার ভিড়ে এসব জলজ সৌন্দর্য দৃষ্টি এড়িয়ে যেতে বাধ্য!
ওহহো, বাইশ মাথা খেজুর গাছ সম্পর্কেও তো বলা হল না। থাক সে গল্প আরেকদিন!
জেনে নিন
শাপলা বিলে বেড়ানোর সেরা সময় সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস। তারপরও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে বিলের শাপলা সম্পর্কে জেনে রওনা দেওয়া ঠিক কাজ হবে।
শাপলা বিলে শাপলার সঙ্গে সাপেরও বসবাস। সুতরাং বিষয়টা মাথায় রাখবেন।
অযথাই নৌকায় বসে বিলের পানিতে পা ঝোলাবেন না। সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে রাখুন। যে কোনো সময় বৃষ্টিও চলে আসতে পারে। তাই ছাতা বা বর্ষাতিও রাখুন।
ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়া খুব সহজ। স্টিমার ঘাট শ্যামবাজার। ছাড়ার সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা। বৃহস্পতিবার রাতে রওনা হলে বিশাল ‘মধুমতি’ স্টিমারের যাত্রী হতে পারবেন।
এছাড়া এ পথে রয়েছে বিলাসবহুল সব লঞ্চ। যাত্রার সময় রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা। সদরঘাটের বরিশাল নতুন ঘাট চলে যান। কেবিন নিলে আগেই ঘাটে গিয়ে বুকিং দিয়ে রাখুন। ডেকের ভাড়া ১৫০ থেকে ৩শ’ টাকা।
বরিশাল ভোর চারটায় পৌঁছে যাবেন। আগে থেকেই তাই মাহেন্দ্র অটো রিকসা বুকিং দিয়ে রাখলে ভালো। না রাখলে ঘাট থেকে কিংবা নখুলস্নাবাদ এসে দরদাম করে মাহেন্দ্র অটো রিকসায় চেপে বসুন। আসা যাওয়ার ভাড়া ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা।
আগেই বলেছি উজিরপুর যেতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। এখানে কালবিলা কিংবা সাতলা যে অংশেই যান নৌকা ভাড়া এক থেকে দেড় ঘন্টার জন্য ৬শ’ থেকে ১ হাজার টাকা নেবে।
সতর্কতা
লঞ্চে দেরি করা যাবে না। ঘাটে লঞ্চ ভেড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রা শুরু করতে হবে। সঙ্গে খাবার পানি শুকনা খাবার ও ক্যাপ বা গামছা নিয়ে নেবেন।
নৌকায় বসে চিৎকার চেঁচামেচি কোলাহল করবেন না। বিস্কুট চকলেট চিপস কোমল পানীয় খেলে এসবের পলিথিন বা বোতল সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন।
ছবি: লেখক।