সেই ভিড়ে আমরাও সামিল হলাম।
এই এলাকার কাঁঠাল এক সময় প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল, এখন সে জায়গা নিয়েছে লটকন।
লেগুনায় চেপে সৃষ্টিগড় যেতে যেতে কথা হয় স্থানীয় সাগীর মুরাদের সঙ্গে।
বললো, “ইদানীং অনেকেই আসে এখানে। বাজার বসে মরজাল এলাকায় ভোর পাঁচটায়। সে দৃশ্যও দেখার মতো। ভোরে আসলে ভালো করতেন”।
সৃষ্টিগড় বাস স্টপেজে আমরা লেগুনা থেকে নামি, সঙ্গে সাগীর মুরাদ। তিনিই আমাদের জন্য একটা ব্যাটারি চালিত রিকশা ঠিক করে দেন। আমরা মাসুদের রিকশার যাত্রী হতেই, মাসুদ আমাদের নিয়ে লটকন বাগানের উদ্দেশ্যে ছুটে চললো।
লটকন বুনো গাছ। খুব একটা যত্ন নিতে হয় না গাছের। তবুও লটকন গাছ বেড়ে ওঠে তরতর করে। তবে বাংলাদেশে লটকনের চাষ হয়। প্রতি বছর গ্রীষ্ম-বর্ষায় সমানে ফল দেয়।
আমি লটকন গাছ প্রথম দেখি জৈন্তাপুর সাইটার্স গবেষণা কেন্দ্রে। এরপর এই নরসিংদির শিবপুর এলাকায় তিন বছর আগে প্রথম, তারপর আজ আবার। তবে আমার সঙ্গীর এই প্রথম। সুতরাং তার উচ্ছাস চোখে পড়ার মতো।
আমরা পুরো এলাকা একঘণ্টা রিকশায় বসে কেবল দেখেই চলি। এখানে পুরো এলাকাই লটকনের, আর আছে কাঁঠাল ও লেবু। লটকনের মতোই এখানকার লেবু এবং কাঁঠালের সুনামও কম না। তবে এখন আর কাঁঠাল নিয়ে কেউ ভাবেন না। সবার ভাবনা লটকন নিয়ে। ঠিক যেমন এখন আমাদের।
থোকায় থোকায় লটকন পুরো গাছ জড়িয়ে আছে। আমরা এক গাছ থেকে আরেক গাছ তারপর আরেক গাছে ছুটে চলছিলাম, সে এক দৃশ্য বটে। লেবু বাদ দিয়ে বাগান মালিক হাজী আব্দুর রহমান আমাদের কাছে ছুটে এলেন। তার উচ্ছাসও চোখে পড়ার মতো।
বললেন, “যত ইচ্ছা লটকন খাও, মানা নাই। কোন গাছের লটকন বেশি মিষ্টি সে গাছের কাছে নিয়ে গেলেন, ইচ্ছা মতো খেলাম। ছবি তুললাম। এভাবেই এবার অন্য বাগানে যাওয়ার পালা। কিন্তু পড়লাম মধুর সমস্যায়।
হাজী সাহেব তো ছাড়বেন না আমাদের। ভাত খেয়ে যেতে হবে। অনেক অনুরোধ উপক্ষো করে অন্য আরেকদিনের ওয়াদা করে রিকশায় উঠলাম, তার আগে হাতে পেলাম এক ব্যাগ লটকন!
ছোটাবন্দ এলাকার মনসুর মিয়ার বাগানে গিয়ে মনে হল তিনি সত্যিকারের ব্যবসায়ী। সাংবাদিক নাম শুনে কীভাবে নিউজ করা যায় তাকে নিয়ে, তার ছবি তোলাসহ বিভিন্ন সুবিধা নেওয়ার দিকেই তার মনোযোগ দেখলাম।
জানলাম লটকন বিক্রির নানান তথ্য। এক গাছ থেকে প্রতিবছর ৩ থেকে ১৫ লাখ টাকা কামানোর তথ্যও পেলাম আমরা। সাগীর মুরাদের মতো তিনিও মরজালের প্রতিদিনকার বাজার বা হাট বসার কথা বলতে ভুললেন না।
নৌকাঘাটা এলাকার আশ্রাফ মিয়ার বাড়িতে হাতমুখ ধুয়ে বসতেই হাতে চা পেলাম, পেলাম বাসন ভর্তি গাছের কাঁঠাল। এসব খেয়ে বিদায় নিতে গিয়ে তো আরেক দফা অবাক আমরা। রান্না হচ্ছে খেয়ে যেতে হবে।
আশ্রাফ ভাইয়ের সঙ্গে সবে পরিচয় হলেও অতিথি আপ্যায়নে তার কার্পণ্য ছিল না। পড়ন্ত বিকেলে তিনি আমাদের নিয়ে তার ১৫০ একরের বাগান ঘুরে দেখিয়েছেন, আর ব্যাগ ভরে লটকন দিয়েছেন। পাশের বাসার বাঁধনের আম্মা আমাদের জন্য তেলে ভাজা পিঠা নিয়ে এসেছিলেন। এমন আন্তরিকতার কোনো জবাব আমাদের ছিল না, কেবল আবার দেখা হবে বলে চলে আসা ছাড়া!
প্রয়োজনীয় তথ্য
দশজনের দল ও একটি মাইক্রোবাস ভালো হবে। তাহলে মনের মতো বেড়িয়ে আসা যাবে। মাইক্রেবাস হলে তো কথা নেই। সৃষ্টিগড় হয়ে চৈতন্য, কুণ্ডপাড়া, নৌকাঘাটা ও বেলাবোর লটকন বাগান মনের মতো ঘোরা যাবে।
সৃষ্টিগড় বা মরজাল থেকে লটকন যাত্রা শুরু করার পর সরাসরি লটকন গাছ ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়বে না।
যারা মাইক্রোবাসে সওয়ার না হয়ে বাসে যাবেন তারা গুলিস্তান, মহাখালি বা খিলখেত ফ্লাইওভারের নিচ থেকে বাসে চেপে সরাসরি মরজাল বা সৃষ্টিগড় চলে যেতে পারবেন। হাতে সময় নিয়ে বের হবেন। ভুলেও কেউ পাঁচদোনা নামবেন না। তাহলে এক বোঝা ভোগান্তি আপনাকে আঁকড়ে ধরবে। ফেরার পথে মরজাল বাজার থেকে লটকন কিনে ফিরতে পারবেন। আর বেড়িয়ে আসতে পারবেন উয়ারিবটেশ্বর!
আরও একটু