সানস্ক্রিনও বিপদে ফেলতে পারে

সব সানস্ক্রিনের মান সমান নয়। তাই কিছু প্রসাধনী ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 July 2018, 09:23 AM
Updated : 9 July 2018, 09:23 AM

শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা- দিনের আলোয় বের হলেই সানস্ক্রিন মাখো।- ত্বকের সুরক্ষায় এরকম পরামর্শ ইদানিং প্রায়ই দেওয়া হয়। তবে পরিবেশবাদী আর ভোক্তাদের বিভিন্ন তথ্য বলছে অন্যকথা। ত্বক রক্ষার পরিবর্তে সানস্ক্রিন হতে পারে ক্ষতিকর।

কীভাবে?

এই বিষয়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক এক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে সেই তথ্যই এখানে দেওয়া হল।

সানস্ক্রিনের রক্ষাকবচ: এই প্রসাধনী আমাদের দুভাবে সুরক্ষা করে। একটি খনিজের রক্ষা কবচ আরেকটি রাসায়নিক উপাদানের রক্ষা কবচ। খনিজের সানস্ক্রিন তৈরি হয় জিঙ্ক অক্সাইড এবং টাইটেনিয়াম ডাই-অক্সাইড দিয়ে, যা ত্বকের উপর আস্তর তৈরি করে সূর্যর ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে।

সানস্ক্রিনে থাকা রাসায়নিক উপাদানের মধ্যে আছে অ্যাভোবেনজোন, অক্সিবেনজোন, হোমোসালেট, অ্যাক্টিনোক্সাট এবং অক্টিনোসালেট অক্টোক্রাইলিন। এদের মধ্যে কিছু উপাদান ত্বক ভেদ করে বিভিন্ন টিস্যুতে পৌঁছে যেতে পারে।

গবেষণা: ভারতের ‘এনভাইরোনমেন্টাল ওয়ার্কিং গ্রুপ’য়ের করা গবেষণা মতে, সানস্ক্রিনে ব্যবহৃত এই রাসায়নিক উপাদানগুলো শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং থাইরয়েড-সহ আরও কয়েকটি অঙ্গের কার্যকলাপে বাধা সৃষ্টি করে।

ভারতের ‘ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’য়ের জন্য করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৬ শতাংশ সানস্ক্রিনে আছে অক্সিবেনজোন নামক রাসায়নিক উপাদান। এই উপাদান এক ধরনের ‘এন্ডোক্রাইন ডিসরাপ্টর’ যা নারীদের শরীরে ‘এনডেরোমাইটিস’ অর্থাৎ জরায়ুর বাইরে ‘এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু’তে জটিলতা তৈরি করে যা থেকে হতে পারে মাথাব্যথা।

আর পুরুষের শুক্রাণুর পরিমাণ কমায়। এছাড়াও এই রাসায়নিক উপাদান শিশু এবং গর্ভবতী ও দুগ্ধাদানকারী মায়ের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

হরমোনের ভারসাম্য: ট্রাইক্লোসান, পারাবেন্স, অক্সিবেনজোন এবং থ্যালেটস নামক রাসায়নিক উপাদানগুলো শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। আর এই উপাদানগুলো অসংখ্য সানস্ক্রিনে পাওয়া যায়। তাই প্রসাধনী কেনার সময় গায়ের লেভেল দেখে এই উপাদানগুলো নেই এমন সানস্ক্রিন কিনতে হবে।

স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি: শরীরে অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন হরমোন তৈরি হলে যা হয়, বেনজোফেনোন্স নামক রাসায়নিক উপাদানটিও একই প্রভাব ফেলে। ফলে তা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

চোখ জ্বালাপোড়া: চোখে সানস্ক্রিন চলে গেলে জ্বালাপোড়া ও ব্যথা হবে। চিকিৎসকদের মতে, সানস্ক্রিনের কিছু উপাদান অন্ধও করে দিতে সক্ষম। তাই চোখে সানস্ক্রিন প্রবেশ করলে প্রচুর পানি দিতে ধুতে হবে এবং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

কোষের ক্ষতি: অক্সিবেনজোন নামক রাসায়নিক উপাদান সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে, তাই সানস্ক্রিনের এই উপাদান থাকেই। তবে এই উপাদান কোষের ক্ষতি করতে পারে, কোষের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে, এমনকি ‘ডিএনএ সিনথেসিস’ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। ফলে ডিএনএ’য়ের গঠনে পরিবর্তন আসতে পারে। গর্ভবতী মায়ের শরীরে অক্সিবেনজোন বেশি থাকলে গর্ভের সন্তান কম ওজন ‍নিয়ে জন্মায়।

ত্বকে টিউমার: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহের মাধ্যমে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়া রোধ করতে সানস্ক্রিনে ‘রেটিনাইল পালমিটেট’ নামক উপাদান ব্যবহার করা হয়। তবে ইঁদুরের উপর গবেষণা করে দেখা গেছে এই রাসায়নিক টিউমার দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং ত্বকে ক্ষত সৃষ্টি করে।

ক্যান্সার: এই রাসায়নিক উপাদানগুলো সম্মিলিত প্রভাব ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। আবার এদের কারণে আসা জিনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ সৃষ্টিও হতে পারে।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন