বিচ্ছেদের চাইতেও যন্ত্রণাদায়ক একতরফা প্রেম

যে আপনাকে ভালোবাসে না, তাকে ভালোবেসে একা একা কতদিন অপেক্ষা করবেন?

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2018, 09:35 AM
Updated : 11 March 2018, 09:38 AM

কারও সীমাহীন ভালোবাসা যে মানুষটির কাছে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত ছিল, তারই স্বীকৃতির অভাবে ভেঙেছে অসংখ্য হৃদয়। আবার এই ভালোবাসা ভুলে যাওয়াও সম্ভব নয়। কারণ মনের গভীরে সবসময়ই ভালোবাসার স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষীণ আশার প্রদীপ জ্বলতে থাকে। তবে সেই দিনটির জন্য আপনাকে অপেক্ষা করতে হয়। তো আপনি কী অপেক্ষা করবেন?

সম্পর্কবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে এই বিষয়ের ওপর প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে এই ধরনের প্রেমে কী করা উচিত তার একটা ধারণা এখানে দেওয়া হল।

একতরফা প্রেম কী: যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক মনোবিজ্ঞানী রয় বাউমেইস্টারের ভাষায়, “৯৮ শতাংশ মানুষই তাদের জীবনকালে এই একতরফা বা প্রতিদানহীন ভালোবাসার ফাঁদে পড়েন। যে মানুষটি আমাদের ভালোবাসার মূল্য দেয় না, তার জন্য কেনো আমরা ভালোবাসা পুষে রাখি? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়াটা বেশ কঠিন। তবে এই ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসা যত কষ্টেরই হোক না কেনো, এটাই কঠিন বাস্তবতা।”

এই প্রেম কী হৃদয় ভাঙে?: ভারতের মনোবিজ্ঞানী এবং সম্পর্ক-বিশেষজ্ঞ প্রিতি সাইনি বলেন, “মন ভাঙা’ বলতে আমরা বুঝি যে প্রেম দুই পক্ষের কাছেই স্বীকৃতি পেয়েছিল। যা পরে আর কাজ করেনি। তবে একতরফা ভালোবাসার ক্ষেত্রেও বিষয়টা সত্য, অন্তত একজনের জন্য তো অবশ্যই। আপনার অনুভুতি হয়ত প্রকাশ করা হয়নি, কিন্তু অনুভুতি তো ছিল। ক্ষেত্র বিশেষে তা আরও বেশি কষ্টের হতে পারে, যার পেছনে দায়ী একতরফা ভালোবাসার অনিশ্চয়তা। ‘কোনো একদিন হয়ত ভালোবাসার মানুষটি আমার প্রতি ভালোবাসা অনুভব করবে’ – একতরফা ভালোবাসার ক্ষেত্রে এই আশা মন থেকে ঝেড়ে ফেলা অত্যন্ত কঠিন। ফলে মন ভাঙার কারণটা আসলে প্রত্যাখ্যান নয়, স্বীকৃতি না পাওয়ার অন্তহীন হতাশা।”

এই যন্ত্রণা কী শারীরিক যন্ত্রণার মতো?: ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের করা এক গবেষণা অনুযায়ী, “প্রেমের সম্পর্ক ভাঙা আর প্রিয় মানুষকে হারানো, কারণ যাই হোক, মানসিক কষ্ট মস্তিষ্কের সেই অংশকে সক্রিয় করে যা শারীরিক আঘাতের যন্ত্রণা বোঝার জন্য দায়ী। তাই মানসিক কষ্টের অনুভুতিও হতে পারে শারীরিক ব্যথার মতোই।   

মুক্তির উপায়: বিশেষজ্ঞদের মতে, এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তির উপায় হল বাস্তবতা কে মেনে নেওয়া। আপনার ভালোবাসা কোনো দিনই স্বীকৃতি পাবে না, তাই এই ভালোবাসা পুষে না রাখাই ভালো। এই বাস্তবতাকে মেনে নিতে পারলেই এই ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন। আর যত বেশি অনুভুতিগুলোকে আঁকড়ে ধরে রাখবেন, বের হয়ে আসা ততোই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

সময় নিতে হবে: আপনার প্রতি যার ভালোবাসা নেই, তাকে ভালোবেসে যাওয়ার ব্যাপারটা আসক্তির মতো। একে এক অবাস্তব কল্পনার জগতের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যেখানে আপনার ভালোবাসার স্বীকৃতি নেই, নেই প্রত্যাখ্যাত হওয়ার সম্ভাবনা। কারণ, আপনার ভালোবাসার মানুষটির আপনার প্রতি ভালোবাসা নেই। তাই কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে আসার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে। আর সময় নিয়ে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে হবে।

আপনি একা নন: ৯৮ শতাংশ মানুষ এই যন্ত্রণার শিকার হয়। সময় হচ্ছে যন্ত্রণা-নাশের সবচেয়ে ভালো উপায়। আজ যা সম্ভব নয় ভবিষ্যতে সেটা সম্ভব। তাই সময় নিন। এতগুলো মানুষ যখন এই কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে, তখন আপনিও পারবেন।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন