কর্মজীবনের অন্ধকার দিক

যে কথা আপনাকে কেউ বলবে না, শুধু চাকরি শুরু করার পরেই ‘টের’ পাওয়া যায়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2018, 07:59 AM
Updated : 21 Jan 2018, 07:59 AM

প্রথম চাকরি পাওয়া বরাবরই কঠিন। তাই একটা পাওয়া গেলে হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলতে সবাই নারাজ। মনে আশা থাকে কর্মপরিবেশ যেমন হবে আনন্দের তেমনি সহকর্মীরা হবে বন্ধুভাবাপন্ন। তবে হায়! স্বপ্ন আর বাস্তবতা- তেল-জলের মতোই মিশ খায় না।

কর্মজীবনে ঢোকার আগে যে ইতিবাচক চিন্তাধারা থাকে, চাকরি পাওয়ার পর সেই মোহ ভঙ্গ হতে বেশি দিন লাগে না। কারণ প্রতিযোগিতার বাজারে আপনি যেমন ছাড় পাবেন না তেমনি অদ্ভুতসব পরিস্থিতির শিকার হবেন।

জীবনযাপন-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে কর্মক্ষেত্রে ও কর্মজীবনে ভাবনার অতীত কয়েকটি পরিস্থিতি সম্পর্কে এখানে দেওয়া হল, যা জানা থাকলে ‘পা-পিছলানো’ সম্ভাবনা কম থাকবে।

ভালো কাজ করার বিড়ম্বনা: আপনি যখন নিষ্ঠার সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে নিজের দায়িত্ব পালন করবেন, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রশংসা পাবেন, তাতে আপনারই সহকর্মীদের মধ্যে কয়েকজন ঈর্ষান্বীত হতে পারে। ফলে, যে সহকর্মীর সঙ্গে আপনার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার কথা, সেই আপনাকে এড়িয়ে চলে, আর তার কারণ হল আপনার কাজের দক্ষতা।

অপরদিকে মনযোগ দিয়ে কাজ না করলে ‍কর্মকর্তারা দু-কাথা শুনিয়ে দিতেও এক মুহূর্ত দেরি করে না। এ যেন ‘শাঁখের করাত’।

বেশি কাজ দেখালে, অনেক সহকর্মী আপনার উপর কাজ চাপিয়ে দিয়ে নিজে ‘বাতাস খাওয়া’র তালে থাকবে।

আবার নির্ধারিত সময়ের আগে কাজ শেষ করতে পারলে কারও কপালে প্রশংসার বদলে জোটে আরও বেশি কাজ, ফলে কাজ করার আগ্রহ কমতে থাকে ক্রমাগত।  

শুধু প্রতিষ্ঠানের স্বার্থই গুরুত্বপূর্ণ: অপ্রিয় সত্য হল, কর্মক্ষেত্রে আপনার ব্যক্তিগত স্বার্থের মূল্য নেই বললেই চলে, প্রতিষ্ঠানের স্বার্থটাই বড়। এই প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ সিদ্ধি করতে গিয়ে আপনাকে কর্ম ঘণ্টার অতিরিক্ত সময় দিতে হচ্ছে কিনা তা নিয়ে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেরই মাথাব্যথা থাকে না, হয়ত জুটবে না প্রশংসাটুকুও। বরং, একদিন ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কয়েক ঘণ্টা আগে অফিস থেকে বের হতে চাইলেই অফিসের নিয়ম-কানুন শিখিয়ে দেওয়া হবে।

আবার, প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য আপনি যত চেষ্টাই করুন না কেনো, আপনার ব্যক্তিগত উন্নয়নটা অবহেলিতই থেকে যাবে।

অর্থই সর্বেসর্বা: কাজের প্রতি আপনার ভালোবাসা, উচ্চ পদমর্যাদা, খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি সবকিছু উপরে আসল বিষয়টা হল বেতনের সংখ্যাটা।

কর্মজীবনে কয়েক বছর পার করার পর বুঝতে পারবেন আসলে আপনি অর্থ এবং আর্থিক নিরাপত্তার জন্যই চাকরি করে যাচ্ছেন। কারণ, চাকরি ছেড়ে ঘরে বসে গেলে ঘর-ভাড়া, সংসার খরচ, সন্তানের লালন-পালন, পড়াশুনা ইত্যাদির আর্থিক যোগান বন্ধ হয়ে যাবে।

এক চাকরি থেকে আরেক চাকরিতে যোগ দেওয়ার পেছনেও মূল কারণ ওই বেতনই। নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন, বিনা পরিশ্রমেই কেউ যদি আপনাকে আপনার বেতনে সমপরিমাণ অর্থ দেয়, আপনি তারপরও চাকরি করবেন?      

সব জায়গাতেই ‘অফিস পলিটিক্স’: পৃথিবীর যে দেশেই যান, যে ধরনের প্রতিষ্ঠানেই কাজ করুন না কেনো ‘অফিস রাজনীতি’ থাকবেই। উপযুক্ত কোনো কারণ ছাড়াই আপনার কোনো একজন সহকর্মী কর্মক্ষেত্রে আপনার উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে চাইবে, আপনার সম্পর্কে অন্যদের কাছে নেতিবাচক মন্তব্য করবে।

তাই, এসবের সঙ্গে মোকাবেলা করার মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে, নিজের গা বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় রাজনীতিটা আপনাকেও আয়ত্ত করতে হবে।

নিজেকে প্রতারিত মনে হতে পারে: এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারেন, যেখানে আপনার কাজের কৃতিত্ব দেওয়া হবে অন্য কাউকে। যে পদোন্নতি আপনার পাওয়া উচিত ছিল, তা হয়ত আপনার সহকর্মী পেয়ে যাচ্ছে। আপনার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে যারা তোষামোদ করছে তারাই পদোন্নতি পাচ্ছে, অপরদিকে আপনি বেশি কাজ করেও উন্নতির ছিঁটেফোঁটাও পাচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতি কমবেশি সব প্রতিষ্ঠানেই ঘটছে প্রায়শই।  

জীবন যেন ছুটির দিনেই সীমাবদ্ধ: যে কাজ করছেন তা যদি আপনার পছন্দের না হয়, তবে ছুটির দিনগুলোই আপনার কাছে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পরিণত হবে। কর্মসপ্তাহের প্রতিটি দিন তীর্থের কাকের মতো ছুটির একটি কিংবা দুটি দিনের অপেক্ষায় বসে থাকবেন। আর তা পার হয়ে গেলেই হতাশা আপনাকে ঘিরে ধরবে।

কাজের আপনার মনযোগ আসবে না, কারণ আপনার মন পড়ে আছে ছুটির দিনগুলোতে কী করবেন তার পরিকল্পনায়।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন