এই অভ্যাসগুলো হৃদযন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর

দৈনন্দিন অতি সাধারণ অভ্যাস থেকেও হতে পারে হৃদরোগের মতো মারাত্বক রোগ। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, অভ্যাসগুলো আপাতদৃষ্টিতে গুরুতর কিছু মনে না হলেও, হৃদযন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে। এরমধ্যে ধূমপান, মাংস বেশি খাওয়া কিংবা শরীরচর্চার কমতি ইত্যাদি প্রচলিত কারণগুলো নেই।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2018, 11:36 AM
Updated : 8 Jan 2018, 11:36 AM

বিশেষজ্ঞ মতামত ও বিভিন্ন গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে একটি স্বাস্থবিষয়ক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে এখানে এরকম কয়েকটি অভ্যাসের কথা জানানো হল, যা হৃদযন্ত্রের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

ঘুমের কমতি: পর্যাপ্ত এবং নির্ভেজাল ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

‘স্লিপ মেডিসিন’য়ের ভারতীয় পরামর্শদাতা ডা. এস. রামনাথান আইয়ার বলেন, “ঘুম আর হৃদযন্ত্রের সুস্বাস্থ্যের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক আছে। ‘অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ওএসএ)’য়ের রোগীদের হার্ট অ্যাটাক ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যার হওয়ার আশঙ্কা বেশি। আবার উচ্চ রক্তচাপ, কন্ঠনালীর প্রদাহ, হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্তদের ওএসএ আছে কিনা তা পরীক্ষা করানো উচিত। অপর্যাপ্ত ঘুম আপনাকে প্রতিনিয়ম মানসিক চাপে রাখবে।”

নিয়মিত নাক ডাকা: নাক ডাকা থেকে ঘুমের সমস্যাজনীত রোগ হতে পারে।

ডা. আইয়ার বলেন, “ঘুমানোর সময় গলার শিথিল মাংসপেশিগুলো যখন শ্বাস চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে তখনই নাক ডাকে। এতে শরীর পর্যপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ থেকেও বঞ্চিত হয়। দীর্ঘমেয়াদে নাক ডাকা এবং ‘ওএসএ’ ঠেলে দিতে  পারে উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের মতো মারাত্বক শারীরিক সমস্যার দিকে।”

দীর্ঘক্ষণ টেলিভিশন দেখা: ঘরে বসে সারাদিন টেলিভিশন দেখাকে ধূমপানের চাইতেও ক্ষতিকর বলে দাবি করেন বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে, “আপনি যতই ব্যায়াম করুন না কেনো, আধা ঘণ্টা বসে থাকার পর উঠে একটু হাঁটাহাঁটি করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ দীর্ঘক্ষণ এক জায়গার বসে থাকা হৃদযন্ত্রের জন্য হুমকি স্বরূপ এবং অকালমৃত্যুর অন্যতম কারণ।” 

সবসময় কাজের চাপ: ভারতের ‘এশিয়ান হার্ট ইন্সটিটিউট’য়ের জ্যেষ্ঠ ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট ডা. নিলেশ গৌতম বলেন, “দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ হৃদস্পন্দনের গতি ও রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, যা ধমনির দেয়ালের জন্য ক্ষতিকর। তাই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশর রপ্ত করতে পারলে শরীর ও জীবনের গুণগত মান উন্নত হবে। লম্বা শ্বাস নেওয়ার ব্যায়াম করা কিংবা সপ্তাহে একদিন হলেও নিজের পছন্দের কাজগুলো করা মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।”

কাঁচা লবণ খাওয়া: ‘এশিয়ান হার্ট ইন্সটিটিউট’য়ের জ্যেষ্ঠ হৃদরোগ-বিশেষজ্ঞ ডা. সন্তোষ কুমার ডোরা বলেন, “সোডিয়াম পানি শুষে নেয়, তাই শরীরে সোডিয়াম বেশি থাকলে রক্তে পানির মাত্রা বেড়ে গিয়ে তার আয়োতন বেড়ে যাবে। এটি হৃদযন্ত্রের উপর চাপ ফেলে। চাপ অতিরিক্ত হলে হৃদযন্ত্র শরীরের জন্য পর্যপ্ত রক্ত সরবরাহ করতে ব্যর্থ হতে পারে, ফলাফল ‘হার্ট ফেইলিওর’।”

খাদ্যাভ্যাস নিয়ে মাথাব্যথা নেই: হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকার পেছনে খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন ধরনের ফল, শাকসবজি, শষ্যজাতীয় খাবার, চর্বি কম এমন দুগ্ধজাত খাবার, চামড়াবিহীন পোল্ট্রি ও মাছ, গ্রীষ্মকালীন নয় এমন উদ্ভিজ্য তেল ইত্যাদি খাদ্যাভ্যাসে থাকা উচিত। স্যাচুরেইটেড ও ট্রান্স চর্বির গ্রহণে লাগাম টানতে হবে। এগুলোর পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর, মনো-আনস্যাচুরেইটেড ও পলি-আনস্যাচুরেইটেড চর্বি গ্রহণ করতে হবে।

দাঁত ফ্লস: গবেষণা বলে, হৃদযন্ত্রের সুস্বাস্থ্যের জন্য মাড়ির সুস্বাস্থ্য গুরুত্বপূর্ণ।

দন্ত্যচিকিৎসক ডা. এলাক্ষ্মি মোরে গুপ্তা বলেন, “‘ব্যাকটেরিয়াল ফ্লোরা’ বা ‘ওরাল ক্যাভিটি’ সার্বিক সুস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুখগহ্বরের মাধ্যমে অসংখ্য রোগবালাই শরীরের বাসা বাঁধার পথ করে করে নেয়। দাঁতের প্রদাহ ছড়িয়ে যদি ‘সাবম্যান্ডিবুলার স্পেস’ বা ‘ফ্যাশিয়ল স্পেস’য়ে প্রবেশ করে তবে প্রাণঘাতী সমস্যা দেখা দিতে পারে। ”

হৃদরোগের উপসর্গ না জানা: আপনি যদি বেশিরভাগ সময় হাসিখুশি থাকেন, ধূমপান না করেন, নিয়মিত ব্যায়াম করেন তবে হৃদরোগের পূর্বাভাসগুলো আপনার চোখে না পড়াই স্বাভাবিক। অনেকেই নিজেদের রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা জানেন না, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির পূর্বাভাস দেয়।

চা-কফি পান করি না: গবেষকদের দাবি, নিয়মিত চা পান হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। আবার নিয়মিত কফি পান করার ফলে হৃদযন্ত্রের রক্তনালীতে ক্যালসিয়াম জমা হওয়ার প্রভাব স্বাভাবিক।

হাত না ধোয়ার প্রবণতা: হাত ভালোভাবে পরিষ্কার না করলে তাতে ব্যাকটিরিয়া্ জমা হতে থাকে। খাওয়ার সময় এই ব্যাকটেরিয়া খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। যা স্বাস্থ্যের পাশাপাশি হৃদযন্ত্রের জন্যও ক্ষতিকর।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন