টনসিল স্টোন থেকে সাবধান

মুখগহ্বরে আলজিহ্বার পেছনে দুপাশে থাকা গ্রন্থির নাম হল টনসিল। এই গ্রন্থির প্রধান কাজ হল গলায় প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে এমন জীবাণু ধ্বংস করা কিংবা গলায় কোনো প্রদাহ হলে তা সারিয়ে তুলতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। এই গ্রন্থিতে হওয়ার পাথরকেই বলা হয় টনসিল স্টোন।

মামুনুর রশীদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Jan 2018, 08:35 AM
Updated : 2 Jan 2018, 08:35 AM

টনসিল স্টোন নিয়ে কথা হয় নারায়ণগঞ্জ চাষাড়ার ডা: জেনিথ’স ডেন্ট দন্ত্য চিকিৎসালয়ের ডা. ফরহাদ আহম্মেদ জেনিথের সঙ্গে।

তিনি বলেন, “মানুষের শরীরে যত ধরনের পাথর বা শক্ত উপাদান আছে তার সিংহভাগেরই মূল উপকরণ হল ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়ামের সঙ্গে কার্বন, ফসফেট ইত্যাদি উপাদান মিলে এই পাথরগুলো গড়ে ওঠে। শরীরের অভ্যন্তরীন ক্যালসিয়ামের উৎস মূলত বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। আর মুখগহ্বরে টনসিল স্টোনের ক্যালসিয়ামের যোগান আসে খাবারের স্বাদের জন্য দায়ি উপাদানগুলো থেকে। একটি টনসিল স্টোন’য়ের আকার দুই মিলিমিটার থেকে এক সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। পাথরটি যত বড় হবে দুর্গন্ধও ততোই বেশি হবে।”

কারণ: খাবার খাওয়ার পর পর্যাপ্ত পানি পান না করলে, মুখগহ্বরে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে উদাসীন হলে, দাঁত ব্রাশ না করলে খাবারের অতি ক্ষুদ্র অংশ যদি টনসিল গ্রন্থির উপর আটকে যেতে পারে। কোনো ব্যক্তির লালা অতিরিক্ত ঘন হলেও এই গ্রন্থির উপর খাবার আটকে থাকতে পারে। এই আটকে যাওয়া খাবারের অংশ ক্যালসিয়াম ও বিভিন্ন উপাদান শোষণ করতে থাকবে এবং আকারে বড় হবে। এটাই আসলে পরিণত হয় টনসিল স্টোন’য়ে।

এই পর্যায় পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয় না। সমস্যার শুরুটা হয় মুখের ব্যাকটেরিয়া কারণে। মুখগহ্বরের ভেতরে ৩০ হাজারেরও বেশি প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া থাকে। এই অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া গিয়ে বাসা বাঁধে ওই আটকে থাকা খাদ্যকণার চারপাশে। এবার এই ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে তৎপর হয় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। আবার অম্লীয় কোনো খাবার কিংবা পানীয় গ্রহণ করলেও এই ব্যাকটেরিয়াগুলো মারা যায়। টনসিল স্টোনের চারপাশে থাকা ব্যাকটেরিয়ার মৃতদেহই আসলে মুখের দুর্গন্ধের পেছনে দায়ি। খনিজ সমৃদ্ধ খাবার অতিরিক্ত খেলেও টনসিল স্টোন হতে পারে।

উপসর্গ: মুখে দুর্গন্ধ টনসিল স্টোনের প্রধান উপসর্গ। দিনে দুবেলা দাঁত ব্রাশ করে, মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করে, মিন্ট চকলেট খেয়ে কোনোভাবেই এই দুর্গন্ধ যায় না। আরেকটি উপসর্গ হলো গলায় ব্যথা। ছোট অবস্থায় কোনো পরীক্ষার মাধ্যমে টনসিল স্টোন চিহ্নিত করা যায় না। আকারে বড় হলে ‘ল্যারিনোস্কোপি’ পরীক্ষার মাধ্যমে এই পাথর চিহ্নিত করা যেতে পারে।  

প্রতিকার ও প্রতিরোধ: টনসিল স্টোন সবচাইতে বেশি হয় শিশুদের। কারণ, তারা নিজেরা পানি পান করতে পারে না, মুখ পরিষ্কার করতেও পারে না। ফলে পর্যাপ্ত পানি পান ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা হয় না। প্রাপ্তবয়স্কদের এই সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা কম। খাবার খাওয়ার পর পানি পান করলে, নিয়মিত দাঁত মাজলে, মুখ ধোয়ার সময় গড়গড়া করে কুলি করলে টনসিল স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে।

তবে যদি হয়েই যায় তবে লাজলজ্জার খাতিরে মুখের দুর্গন্ধের কথা চেপে রাখা চলবে না, চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসক এই পাথর খুঁজে বের করবেন এবং অপসারণ করবেন। নিজেও খুঁজে বের করা যায়।

মুখ সর্বোচ্চ হা করে জোরে শ্বাস ছাড়লে টনসিল গ্রন্থি দেখতে পাবেন। গ্রন্থির আশপাশে ছোট সাদা রংয়ের দানা চোখে পড়লে বুঝতে হবে আপনার টনসিল স্টোন হয়েছে।

অপসারণ করাও সহজ, ছোট আকারের হলে কটনবাড দিয়ে আলতোভাবে নাড়া দিলেই খুলে আসবে এই পাথর। তবে কোনো অবস্থাতেই শক্ত কিংবা ধারালো কিছু ব্যবহার করা যাবে না।

কুসুম গরম পানি ও লবণের মিশ্রণ দিযে গড়গড়া করলেও খুলে আসবে এই পাথর। পাথর আকারে বড় হলে এবং ত্বকের মধ্যে গেঁথে থাকলে চিকিৎসককে দিয়ে অপসারণ করাতে হবে। ব্যথার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথা-নাশক বড়ি খেতে পারেন।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন