পথের ধারে পিঠার স্বাদে

পিৎজা, বার্গার কিংবা মোমো’তো সেদিনকার ব্যাপার, অথচ অনেকাল আগ থেকে শীত মৌসুমে পথের খাবার হিসেবে চিতই কিংবা ভাপা পিঠা জনপ্রিয়। আর যে যত বেশি ভর্তার আয়োজন নিয়ে পিঠার দোকান বসায় তার জনপ্রিয়তা বেশি।

মামুনুর রশীদ শিশিরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Dec 2017, 10:26 AM
Updated : 31 Dec 2017, 10:27 AM

রাজধানীর এরকম কয়েকটি জনপ্রিয় পথের ধারের পিঠার দোকান নিয়ে এই আয়োজন।

সন্ধ্যার নাস্তা হিসেবে কর্মব্যস্ত মানুষের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় এই পিঠার দোকানগুলো। দোকান বললেও হয়ত ভুল হবে। রাস্তার ধারে ভ্যান কিংবা টেবিল নিয়ে উপরে একটা তেলের চুলা-  এই হল রাস্তার ধারের পিঠা কারিগরদের সম্বল। এদের বেশিরভাগকেই দুদিন পরে একই স্থানে পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ আছে। তবে কিছু দোকান আছে, যারা আসন পেতেছেন শক্তভাবেই।

এগুলোর মধ্যে রেয়েছে বসুন্ধরা সিটির পেছনের গেট বা গার্ডেন রোডে গলির দিকে যে প্রবেশ পথ সেটার পাশে, মিরপুর এক নম্বরের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের উল্টোপাশে মসজিদের গলিতে, মোহাম্মদপুরের বসিলা রোডের ধারে, টাউন হল বাজারের পাশে, ধানমণ্ডির জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডের আশপাশে, পলাশির মোড়, তেঁজগাও শিল্প এলাকার অলিগলি, পূর্বাচল ৩শ’ ফিট রাস্তার আশপাশের শাখা রাস্তাগুলোতে এবং একই রাস্তা ধরে নিলা বাজারে, বোয়ালখালি ব্রিজের নিচে ইত্যাদি স্থানে।

চিতই পিঠা হল এই ভাসমান পিঠার দোকানগুলোর মূল পরিবেশনা। কিছু দোকানে ছোট তেলের পিঠা, চাপটি ইত্যাদি পাওয়া যায়। কেউ আবার রাখেন ডিম, ক্রেতা চাইলে চিতইয়ের সঙ্গে ডিম ফেটে পিঠা বানিয়ে দেন। আর ভাপাপিঠা তো আছেই।

বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের পেছনের এমনই এক পিঠা বিক্রেতা মোহাম্মদ হাবিল, আর পিঠা বানাতে তার সহকারী হিসেবে আছেন তার স্ত্রী।

ব্যবসার বয়স কতদিন জানতে চাইলে বলেন, “জীবনটাই পার করলাম এইখানে। কম করে হলেও ৩০ বছর তো হবেই। সারাবছর দুরকমের পিঠা বানাই, চিতই পিঠা আর তেলের পিঠা। চিতই ৫ টাকা আর তেলের পিঠা ১০ টাকা। আর শীত আসলে ভাপাপিঠা বানাই, এটার দামও ১০ টাকা।

মোহাম্মদ হাবিলের দাবি, তার ভর্তা আছে ৫০ পদের। তবে প্রকৃত সংখ্যাটা নিশ্চিত নয়। দোকানের সামনে দুটি টেবিলে ৫০ থেকে ৬০টি বাটিতে রাখা তার ভর্তার আয়োজন। সবগুলোই যে ভর্তা তা নয়, আছে বেগুন ও কাঁচকি মাছের পদ, মুগডাল, টমেটোর চাটনি, আলু-পেঁপের ঘণ্ট, শুঁটকির তরকারি, চিনি ইত্যাদি। ভর্তার মধ্যে আছে কালিজিরা, সরিষা, ধনেপাতা, শুঁটকির কয়েক ধরনের পদ। আর ঝালের মাত্রাটা বোঝা যাবে ভর্তার রং দেখেই।

এই দোকান ছাড়াও আরও দুটি পিঠার দোকান আছে একই স্থানে। সবগুলোর সামনেই কমপক্ষে ২০টি ভর্তার বাটি আছে।

মোহাম্মদ হাবিল বলেন, “সকাল আটটা থেকে নয়টার মধ্যে দোকান খুলি, বন্ধ করি রাত ১০টায়। দুপুর আর বিকালে ক্রেতার ঢল নামে। প্রতিদিনের ভর্তা প্রতিদিনই ফুরায় যায়, আর বাঁচলেও তিন থেকে চার বাটি। একটা পিঠা দিয়েই চার-পাঁচ বাটির ভর্তা চেখে দেখে মানুষ। তাই পিঠা প্রতি পাঁচ টাকার মধ্য থেকেই ভর্তার খরচের হিসেব করতে হয়।”

অন্যান্য জায়গাতেও পিঠার দাম এরকমই। রাজধানীর আশপাশে ঘুরতে গিয়ে পিঠার স্বাদ নিতে চাইলে তিনশ’ ফিট হিসেবে খ্যাত পূর্বাচল এক্সপ্রেস হাইওয়ের পাশে পুর্বাচল বাজারেও চলে যেতে পারেন। যেখানে শীতে বসে নানান ধরনের পিঠার দোকান।