ব্লেজার কিনতে বা বানাতে

ভালোমানের ব্লেজার কেনা কিংবা বানিয়ে নেওয়া সম্পর্কে ধারণা কম থাকায় অনেকেই এই পোশাক নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। তাদের জন্যই এই আয়োজন।

মামুনুর রশীদ শিশিরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Dec 2017, 04:40 AM
Updated : 27 Dec 2017, 05:29 AM

দেশের বাজারে ফরমাল, ক্যাজুয়াল, অনুষ্ঠানে পরার জন্য বিভিন্ন ধাঁচের ব্লেজার পাওয়া যায়। ব্লেজার কিনতে যেতে পারেন রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড, বসুন্ধরা সিটি, পলওয়েল মার্কেট, নিউমার্কেটের বিভিন্ন দোকানে।

ক্যাটস আই, ইয়োলো, ইনফিনিটি, ওয়েক্সটেক্স, এক্সটাসি, ফ্রিল্যান্ড, রিচম্যান, ফিট এলিগেন্স, লা রিভ ইত্যাদি ফ্যাশনঘরগুলো ছেলে ও মেয়েদের ব্লেজারের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। ব্র্যান্ড ভেদে দাম হতে পারে আড়াই হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।

তবে ফ্যাশনঘরগুলোতে থ্রি পিস বা টু পিস কমপ্লিট কম পাওয়া যায়, সিঙ্গেল ব্লেজার বা ব্লেজারই বেশি।

রেডিমেইড ব্লেজার কেনার সময় মাপ বুঝতে ভুল করেন অনেকেই। ফলে পছন্দের ব্লেজারটি পরে পরতে অস্বস্তি লাগে। মাপ বোঝা সময় কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে তা জানালেন এলিফ্যান্ট রোডের ফপ’স-এর মাস্টার মুজিবুর দেওয়ান।

সৌজন্যে ক্যাটস আই

তিনি বলেন, “প্রথমেই দেখতে হবে কাঁধের মাপ ঠিক আছে কিনা। কাঁধ ঠিক থাকলে দেখতে হবে পরার পর শার্ট আর ব্লেজারের কলারের সামনের অংশের মধ্যে ফাঁকা আছে কি না। না থাকলে বুঝতে হবে মাপ ঠিক নেই। এবার বোতাম লাগিয়ে দেখতে হবে  ভেতরের পকেটে সহজে হাত ঢোকানো যাচ্ছে কিনা। অসুবিধা হলে বুঝতে হবে মাপ ছোট।”

“ব্লেজারের দুই বোতামের উপরেরটি নাভি বরাবর কিংবা একটু উপরে থাকা চাই। তিন বোতাম হলে মাঝখানের বোতামটি নাভি বরাবর থাকতে হবে। হাত থাকতে হবে কব্জি থেকে আধা ইঞ্চি উপরে। ব্লেজারের দৈর্ঘ্য এমন হতে হবে যাতে প্যান্টের চেইন এবং পশ্চাৎদেশ পুরোপুরি ঢাকা পড়ে।”

“যেসব ব্লেজারের পেছনে জোড়া থাকে সেগুলো স্বাস্থ্যবানদেরও মানিয়ে যায় সহজে। এই ব্লেজারগুলোর পকেটে হাত ঢুকিয়ে রাখলেও ভাঁজ পড়ে তুলনামূলক কম। শুধুই ফরমাল পোশাক হিসেবে ব্যবহার করলে দুই বোতামওয়ালা ব্লেজার বেছে নিতে পারেন। আর ক্যাজুয়ালি পরতে চাইলে এক বোতামের ব্লেজার আদর্শ।” বললেন মজিবুর।

আর বানানোর ক্ষেত্রে আদর্শ স্থান হল এলিফ্যান্ট রোড এবং গুলিস্তানের রমনা ভবন।

মজিবুর দেওয়ান বলেন, “কোট এবং ব্লেজারের মধ্যে বিশেষ কোনো তফাৎ নেই। কোটের সঙ্গে রং মিলিয়ে প্যান্ট না পরলে সেটাকে ব্লেজার ধরা হয়। একই রংয়ের ব্লেজার বা কোট এবং প্যান্ট হলে তাকে আমরা বলি ‘টু পিস কমপ্লিট’ আর ব্লেজার, কোটি ও প্যান্ট একই রংয়ের হলে তাকে বলি ‘থ্রি পিস কমপ্লিট’। সিঙ্গেল ব্লেজার বানাতে মজুরি দিতে হবে পাঁচ হাজার টাকা, ‘টু পিস কমিপ্লিট’য়ের মজুরি সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা আর ‘থ্রি পিস কমপ্লিট’য়ের মজুরি সাত হাজার টাকা।”

সৌজন্যে লা রিভ

“সব ঋতুতে পরা যায় এমন ব্লেজারগুলো বানানো হয় প্যান্টের কাপড় দিয়ে, তবে শীতের ব্লেজারগুলো বানানো হয় উলের কাপড় দিয়ে। ছেলেদের একটি ব্লেজার বানাতে দুই মিটার কাপড় প্রয়োজন হয়। ‘টু পিস কমপ্লিট’য়ে লাগে তিন মিটার, ‘থ্রি পিস কমপ্লিট’য়ে লাগে চার মিটার কাপড়। সাধারণ ও উলের কাপড়ের একটি সুট বা ‘কমপ্লিট’য়ের ‘পিস’ কিনতে গুনতে হবে প্রায় ৩ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা। এই কাপড়গুলোর বেশিরভাগই ভারতীয়। কিছু আছে চীনা। তবে ক্রেতারা চাইলে আরও দামি কাপড় সরবরাহ করতে পারি আমরা।”

ব্লেজাররের হালফ্যাশন সম্পর্কে মজিবুর বলেন, “বরাবরের মতো এবারও ফিটিং কোটের চাহিদাই বেশি। কলারটা চাই চিকন, পাশে থাকবে উজ্জ্বল রংয়ের পাইপিং, বাটন চাই দুটি। যারা শার্টের কাফ একটু বের করে রাখতে চান তাদের ক্ষেত্রে হাত একটু ছোট রাখা হয়। কোটের পকেটের মুখে এবং কলারের পেছনে উজ্জ্বল কাপড় চান কেউ, একে আমরা বলি ‘সাটিং’। একরঙা কাপড়ের কোটের চাহিদাই বেশি, তবে চেক, স্ট্রাইপ ডিজাইনের কাপড় দিয়ে ব্লেজার বানানো শৌখিন ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে।”

“কোটির ক্ষেত্রে সিংগভাগের পছন্দ পাঁচ বাটন। প্যান্ট চাই ‘সেমি ন্যারো’। এছাড়াও ক্যাটালগ দেখে কিংবা পছন্দের কোটের ছবি দিলে সেভাবেও বানিয়ে দেই আমরা।”

তিনি আরও বলেন, “মেয়েদের ব্লেজার বানাতে কাপড় লাগে দুই মিটার আর স্কার্টসহ বানালে লাগবে তিন মিটার। মজুরি যথাক্রমে পাঁচ হাজার ও সাড়ে পাঁচ হাজার। মেয়েদের কোটের ক্ষেত্রে দুই বাটনের চল বেশি। এছাড়াও লং ব্লেজার, ওভার ব্লেজার, প্রিন্স ব্লেজার ইত্যাদিও তৈরি করা হয়।”

তাহলে এই শীতে যারা কোট, কমপ্লিট বা শুধু ব্লেজারের কথা ভাবছেন তারা এই পরামর্শগুলো মাথায় রেখে কেতাদুরস্ত চলতি ফ্যাশনে ভাসিয়ে নিন নিজেকে।

প্রচ্ছদের ছবির মডেল: আদিবা খান ও শিহাব শাহরিয়ার। মেইকওভার অ্যান্ড স্টাইলিং: আহান রহমান; ছবি: রাউফুন নূর রাতুল। স্টুডিও: ইমাজিনইট।