প্রাক্তন কি মানসিক-বিকারগ্রস্ত?

সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও প্রাক্তনের কাছ থেকে “আমরা আশা করি বন্ধু থাকবো।” এই ধরনের প্রস্তাব পেলে তার কাছ থেকে ‘শতহস্ত’ দূরে থাকার চেষ্টা করুন। কারণ, হতে পারে সে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Dec 2017, 10:50 AM
Updated : 26 Dec 2017, 10:56 AM

এটা শুধু আন্দাজ নয়, সম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে এই ধারণা পাওয়া গেছে।

‘পার্সোনালিটি অ্যান্ড ইন্ডিভিজুয়াল ডিফ্রেন্সেস’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা পরিপক্বতার কোনো বিষয় নয়, বরং হতে পারে ‘অন্ধকার’ মনের প্রকাশ।

এই গবেষণায় যেসব প্রমাণ পাওয়া গেছে তা ইঙ্গিত দেয় যে, এই ধরনের আচরণ হতে পারে মানসিক-বিকারগ্রস্ত হওয়ার লক্ষণ। আরও দেখা গেছে প্রাক্তনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখাটা হতে পারে বিকৃত-মানসিকতার স্বাদ গ্রহণের নতুন পন্থা।

গবেষণার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওকল্যান্ড ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা ৮৬১জন অংশগ্রহণকারীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট এবং তাদের দাম্পত্য বা প্রেমবিষয়ক সম্পর্কের ইতিহাস পর্যালোচনা করেন।

অংশগ্রহণকারীদের কাছে তাদের বর্তমান সম্পর্কের পাশাপাশি প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগ আছে কিনা সে বিষয়ে জানতে চাওয়ার পর তাদেরকে বিকৃত-বাসনার এবং মানসিক-বিকারের বৈশিষ্ট নির্ধারণের জন্য প্রশ্নমালা প্রদান করা হয়।

গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী- অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা ব্যক্তিত্বের অন্ধকার দিক তুলে ধরেছেন, দেখা গেছে তারা ‘সাইকোপ্যাথ’ বা মানসিক-বিকারগ্রস্তদের মতোই, আর তারা কয়েকটি ‘বাজে’ কারণে প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পছন্দ করেন।

প্রাক্তনদের কাছ থেকে বিভিন্ন উপায়ে সুবিধা পাওয়া যেতে পারে, এই কারণে মানসিক-বিকারগ্রস্তরা প্রাক্তনদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে পছন্দ করেন। যেমন হতে পারে- যৌনতা, টাকা অথবা কোনো তথ্য।

মানসিক-বিকারগ্রস্তরা মিথ্যা-আনন্দ উপভোগ করতে পারে। তাই তারা ‘আসল’ সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও, সুকৌশলে প্রাক্তনের সঙ্গে ‘সম্পর্ক’ রেখে প্রায়ই এই সুবিধাটা নেয়। আর এজন্য তারা প্রাক্তনদের বিভিন্ন সুবিধাও দিয়ে থাকে।

 ‘সাইকোপ্যাথি’ হচ্ছে একধরনের অসামাজিক চারিত্রিক বৈকল্য। যাদের চারিত্রিক বৈশিষ্টে ‘আত্মকাম’, ‘ধর্ষকাম’, ‘স্বার্থপরতা’ ‘সহানুভূতির অভাব’ প্রকাশ পায় বা ‘ভাসাভাসা আনন্দ’ উপভোগ করে তাদের ক্ষেত্রে এই ‘সাইকলজিকল টার্ম’ মনস্তত্ব-বিদ্যায় প্রায়ই ব্যবহার করা হয়।

স্বার্থপর মনোভাব যদিও সব মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্টে প্রকাশ পায়, তবে ‘সাইকোপ্যাথ’দের মধ্যে একই সঙ্গে প্রায়সময় পরিপূর্ণভাবে সহানুভূতির অভাব থাকে।

নতুন এই গবেষণার উপর মন্তব্য করতে গিয়ে নিউ ইয়র্কের মনস্তত্ত্ববিদ এবং ‘ডেটিং ফ্রম দ্য ইনসাইড আউট’ বইয়ের লেখক ড. পলেট শার্মেন ‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “সম্পর্ক চালিয়ে যেতে চায় এরকম কিছু মানুষকে চিহ্নিত করার জন্য এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। তারা হয়ত স্বার্থপর মনোভাব থেকে যৌনতা, কোনো তথ্য বা অন্য কোনো কিছু থেকে লাভবান হওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত সুযোগ খোঁজে। তারা হয়ত তাদের প্রাক্তনের প্রতি কোনো আত্মিক টানের কথা চিন্তাও করে না।”

তাই বলে সব প্রাক্তনকে সাইকোপ্যাথ বা মানসিক-বিকারগ্রস্ত মনে করার বিষয়ে সাবধান করেন ডা. শার্মেন।

তিনি বলেন, “এটা বলার কারণ হচ্ছে, আমার কিছু মক্কেলকে দেখেছি যারা অতি স্বাভাবিক এমনকি ভিন্ন কারণে তারা তাদের প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগ রেখেছেন। তারা তাদের প্রাক্তনের ভালো চান। সঙ্গ উপভোগ করেন এবং জানিয়ে দেন তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর সীমারেখা বিদ্যমান। আর বন্ধু হয়েও শারীরিক সম্পর্কে যান-না বা অযৌক্তিক দাবিও করেন না।”

অনেক সময় ধরেই তারা একে অপরের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন না। দুজনেরই আলাদা আলাদা সম্পর্ক রয়েছে এবং তারা তাদের সঙ্গীকে সম্মান দেন। এটা সবসময়ের জন্য সহজ নয়। তবে এটা হতে পারে। আর সব প্রাক্তনই যে মানসিক-বিকারগ্রস্ততা থেকে বন্ধু হয়ে থাকতে চায় এটা ভাবাও গুরুত্বপূর্ণ নয়।” .

তবে আপনার সঙ্গী যদি প্রাক্তনের সঙ্গে খুবই অন্তরঙ্গ সম্পর্ক বজায় রাখেন আর যদি মনে হয় সেটা তার জন্য আনন্দদায়ক, তাহলে আপনি এই নতুন গবেষণার ফলাফল থেকে সতর্ক হওয়ার বিষয়ে বিবেচনা করতে পারেন।

ছবি সৌজন্যে: ফ্যাশন হাউজ ‘এক্সটাসি’।

আরও পড়ুন