পুরান বাজারের পুরান কুঠিতে দীর্ঘদিন এসব বানর বসবাস করে আসছে। চাঁদপুর গিয়ে না থাকলে ঘুরে আসতে পারেন।
বুড়িগঙ্গা নদী। পারাপারের জন্য নদীতে অনেক নৌকা। মালবাহী নৌকা দেখা গেল লঞ্চের মালামাল বোঝাইয়ে ব্যস্ত। শীত চলে এসেছে। বুড়িগঙ্গার স্বচ্ছ পানি রং পাল্টাতে শুরু করেছে। তবে পানিতে পঁচা দূর্গন্ধ নেই বললেই চলে।
সন্ধ্যার পরপর কর্মব্যস্ত ঢাকাকে পেছনে ফেলে পানি কেটে তরতর করে এগিয়ে চললো লঞ্চ ‘আবে জমজম’। চাঁদপুর ছাড়াও এই ভ্রমণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পূর্ণিমা দেখা। সেই হিসেবে করেই যাত্রা দেওয়া।
জাকির হোসেন লঞ্চের নতুন সারেং। কথা হয় তার সঙ্গে। লঞ্চে-লঞ্চে তার ২৭ বছর কেটে গেলেও ‘আবে জমজম’য়ে তার যোগদান দুই মাস। গল্প শেষে আমরা একেবারে ডেকে চলে যাই। ফতুল্লা ছেড়ে লঞ্চ এখন কাঠপট্টির দিকে।
এরই মধ্যে আকাশ ঝলমল করে হেসে উঠেছে পূর্ণিমার চাঁদ। আমরা লঞ্চের পেছনে চলে আসি। এটা ধলেশ্বরী নদী, চাঁদের আলোয় লঞ্চের পেছনে গাঙচিলের ঝাঁক বোঝা যাচ্ছিল। একটু পরপর লঞ্চের ভেঁপু বেজে চলেছে, সার্চ লাইটে সারেং আশপাশের নৌকা ও লঞ্চের অবস্থান বুঝে নিতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ঠিক মাথার উপর চাঁদ। চোখ ভরে ওঠে এমন সুন্দর দৃশ্য ছটায়।
এভাবেই শীতলক্ষ্যা থেকে মেঘনা হয়ে, মুন্সিগঞ্জ, মোহনপুর পেছনে ফেলে এক সময় চাঁদপুর পৌঁছি। পুরাতন ঘাটে লঞ্চ গেল না। পদ্মা, মেঘনা আর ডাকাতিয়া নদীর সঙ্গমস্থল থেকে একটু পেছনে, বামদিকে নতুন ঘাট। লঞ্চ ভেঁপু বাজিয়ে চাঁদপুরের সেই ঘাটে লঞ্চ ভেড়ায়।
আমরা আস্তে ধীরে নেমে চাঁদপুর শহরে পা রাখি। এরপর ঘণ্টা দুই কেটে যায় লঞ্চঘাটেই।
এই শহরে আমি অচেনা, অচেনা সে আমার কাছে। রিকশার চালককে প্রশ্ন করি চাঁদপুরে দেখার কী আছে।
তবে রিকশা খুব দ্রুত চলে, হাওয়ার বেগে। সেসব অলিগলি আর রিক্সাকে পেছনে ফেলে অটো-রিকশাচালক আমাদের নিয়ে আসে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ স্মরণে স্মারক স্মৃতি ভাস্কর্য ‘অঙ্গীকার’য়ের সামনে।
চাঁদপুরের কেন্দ্রীয় খাদ্য রক্ষণাগারের উল্টা দিকেই লন্ডন ঘাট। এই ঘাটের ইতিবৃত্ত কেউই বলতে পারলো না। কারও কারও মতে বৃটিশ আমলে নির্মিত এই লন্ডন ঘাট। সেই সময় বৃটিশদের ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল ছিল। বৃটিশরা তাদের কাজে ব্যবহার করতো বলে এর নাম হয়ে গেছে লন্ডন ঘাট।
লন্ডন ঘাটের ওপারের নদীর তীর ঘেঁষে সারিসারি জাল। তাতে মাছ চাষ সত্যি ব্যতিক্রম চিত্র। সব মিলিয়ে লন্ডন ঘাটের এই পাশে ডাকাতিয়া নদী অন্য রকম।
কথিত আছে এক সময় এখানে ভান্ডারী গানের আসর বসতো। সেই থেকে এর নাম হয়ে যায় আস্তানা। দিন দিন জায়গাটির উন্নয়ন হচ্ছে বলে জানালেন আমাদের চালক।
‘রক্তধারা’ স্মৃতিস্তম্ভটি খুব সুন্দর। গায়ে লেখা ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’।
এখানে নৌকায় বেড়ানোর ব্যবস্থা আছে। চাইলে ওপারের পুরান বাজারেও ঘুরে আসা যায়। ভাড়া জন প্রতি ১০ টাকা। রিজার্ভ ৩০ টাকা। এক ঘণ্টার জন্য ভাড়া ২শ’ টাকা।
অবশ্য বাজারের অর্ধেক নদী গর্ভে গেছে। আর গেছে একটি মসজিদ ও মন্দির। তবে এখানে গেলে চমৎকার কারুকার্যের লোকনাথ বাবার মন্দিরটি আপনার দেখা হয়ে যাবে।
বানরে ভরা এমন এলাকায় মানুষ-জন শুধু তাদের দেখতে এসে পুরান বাজারেও চোখ বুলিয়ে নেয়। এখানে আসার সময় সবাই সঙ্গে খাবার নিয়ে আসে। সে খাবার ছড়িয়ে দিলে ভীড় করে সব বানরের দল।
আমরা গুদারা ঘাটের কাছে চলে আসি। টুকুন বাবুর হোটেলে পরোটা-ভাজি আর দৈ-মিষ্টি খেয়ে এক কাপ চায়ের খোঁজে নামি!
প্রয়োজনীয় তথ্য
লঞ্চঘাটের কাছের হোটেলে ইলিশভাজা খেয়েছি। তারপর ফিরে চলেছি কর্মচঞ্চল মহানগর ঢাকা শহরে।
যে কোনো ছুটিতে চলে আসতে পারেন চাঁদপুরে। দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসতে পারবেন।
রাজধানীর শ্যামবাজার ঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৬টা থেকে লঞ্চ চলাচল শুরু, চলে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত।
একইভাবে চাঁদপুর ঘাট থেকেও ঢাকার উদ্দেশ্যে লঞ্চ চলাচল করে। ইচ্ছা মতো সময়ে চাঁদপুরগামী যে কোনো লঞ্চে চড়ে বসলেই হবে, চলে যাবেন চাঁদপুর।
ডেকের ভাড়া ১০০ টাকা। চেয়ার ১৫০ টাকা। এসি চেয়ার ২০০ টাকা। কেবিন সিঙ্গেল ৪০০ টাকা। ডাবল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা।
আরও পড়ুন