কমলদহ দেখে গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকতে

মাত্রা এক দিনের ভ্রমণ। রাজধানী থেকে রাতে যাত্রা শুরু করে, দিনে ঘুরেফিরে, ওই দিন রাতেই ফিরতি পথে ঢাকা।

হাদিরাতুল তালুকদারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Dec 2017, 08:38 AM
Updated : 1 Dec 2017, 08:38 AM

আর এইরকম অভিজ্ঞতার কথাই জানাচ্ছেন লেখক।

হঠাৎ করেই কমলদহ যাওয়ার আমন্ত্রণ এল। কয়েক বছর ধরেই সীতাকুণ্ডের সব ঝরণার প্রতি ভ্রমণ পিপাসুদের টান বেড়ে গেলেও কমলদহ’র টান শুনছি গত বছর থেকে।

যেদিন যাব সেদিন রাত আটটায় আমরা দুবোন কমলাপুর স্টেশন বাকি সব সঙ্গীদের সঙ্গে মিলিত হলাম। ট্রেন ছাড়ল রাত নয়টায়!

ভোর পাঁচটায় পাহাড়তলি পৌঁছলাম। সব মিলিয়ে ১৬ জনের দল। লেগুনাতে চেপে সকাল সাতটায় বড় দরগার হাট চলে গেলাম। সেখানে আমরা গাইড শাহীনের বাসায় জলযোগ সেরে ব্যাগপ্যাক গুছিয়ে যাত্রা শুরু করি।

শেষ হেমন্ত। আমরা কমলদহের ট্রেইল ধরে হাঁটছি। চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। মন ভালো হয়ে যায়। শ্বেত কাঞ্চন আর দাঁতরাঙার ফুল পথে পথে, চোখ পড়তেই নাচন ধরে চোখে। কেউ একজন বলেছিল, একবার দেখা হলে বারবার দেখা হতেই থাকবে। শ্বেত কাঞ্চনের ব্যাপারটাও একই রকম, মাত্র সেদিন চিনলাম, আর চেনা হওয়ার পর থেকেই চোখে পড়ছে কেবল।  

এভাবে চারপাশের সুন্দরে চোখ বুলিয়ে প্রায় দুঘণ্টা পর কমলদহ ঝরনায় পৌঁছলাম।

কমলদহ ঝরনাটি তিন ধাপের। বিশাল আকারের। দেখতে অসাধারণই মনে হল। মনে হল বললাম কারণ, শেষ হেমন্তে শীতের বার্তায় ঝরনায় পানি প্রবাহ কমে গেছে। বাম দিকের এক কোনায় ঝিরঝির প্রবাহ। আমরা সেদিকটায় ছুটলাম। এরমধ্যে কীভাবে কি হল জানি না। ছোটবোন বুশরা আচমকা এক খাদে পড়ে অতলে হারিয়ে যেতেই আমার হাত তাকে আঁকড়ে ধরল। তার আপু বলে চিৎকার আমার বুকের ভেতর বাজবে আজীবন। সে সময় মনে হচ্ছিল কোনো ভাবেই আদরের বোনটার হাত ছাড়া যাবে না, আর ছাড়িও নি।
এই ঘটনা আমাকে মনে করিয়ে দিল পরিচিত এক পরিব্রাজক বলেছিলেন, দেখতে সাধারণ মনে হলেও কমলদহ ঝরনাটি খুব বিপদজনক। এই বিপদজনক ট্রেইলে আমার বোনের হাত ছাড়িনি, তবে মোবাইল আর পাওয়ার ব্যাঙ্ক এর মায়া আমাকে ছেড়ে বাকি পথ চলতে হয়।

অজস্র বুনো ফুল ও ফল গাছ দেখেছি এ যাত্রায়। দেখেছি অর্কিড আর  বনকলা। এগিয়েছি কখনও ঘন জঙ্গল আবার কখনও গাছের ডাল বেয়ে।

এভাবেই আমরা ছাগলকান্ধাসহ বেশ কয়েকটা ঝরনা স্পট দেখে যখন নাপিত্তা ছড়া পৌঁছি তখন বিকেল তিনটা। সঙ্গে প্রচুর পানি প্রয়োজন ছিল, প্রযোজন ছিল শুকনা খাবারের। এতকিছুর পরও দেহে ক্লান্তি ছিল না।

১৬ জনের দল সবাই সবাইকে সহযোগিতা করে গেছি। সেই সহযোগিতাই আমাদের শেষ বিকেলে নিয়ে যায় গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকতে। সেখানে ট্রলার নিয়ে বেড়ানো, ফটাফট ছবি তোলা আর কমলদহ থেকে ফেরার পর গাইড শাহীনের বাসায় বিশ্রাম ও দুপুরের (যদিও খেয়েছি শেষ বিকেলে) মজাদার খাবারের কথা মনে থাকবে আজীবন।

সব মিলিয়ে সবার সঙ্গে কমলদহ ট্রেইল ও গুলিয়াখালি সৈকত স্মৃতিপটে আজীবন ঝলমল হয়ে বিচরণ করবে!

প্রয়োজনীয় তথ্য

চট্টগ্রামগামী যে কোনো বাস বা ট্রেনে চড়ে বসলেই হবে। নামবেন সীতাকুণ্ড, তারপর চলে যাবেন বড় দারোগার হাট।

পরিচিত গাইড বা পথ নির্দেশক থাকলে তো কথাই নেই। না হলে সঙ্গে স্থানীয় গাইড নিয়ে নেবেন। তারপর মহাসড়ক ধরে হেঁটে কমলদহ গ্রামের পথ ধরবেন।

এভাবেই এক সময় পেয়ে যাবেন ঝিরিপথ। ঝিরিপথে হেঁটে দেড় ঘণ্টা পর পেয়ে যাবেন কমলদহ ঝরনা।

ঝিরিপথে সাবধানে ও সতর্কতার সঙ্গে চলবেন। খাবার স্যালাইন শুকনা খাবার ও প্রয়োজণীয় ওষুধ সঙ্গে রাখতে হবে। একদিনের ট্যুর। দিনে গিয়ে দিনেই ফেরার বাস ধরতে পারবেন।