সম্পর্কে টানাপড়েনের লক্ষণ

সঙ্গীকে দোষ দেওয়া খুব সহজ, তবে এমনও তো হতে পারে আপনার সঙ্গী ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’ নয়, বরং নিজেও নন্দ হতে পারেন। তাই সম্পর্কে ঝামেলা লেগে থাকলে নিজেকেও শোধরান।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Nov 2017, 09:00 AM
Updated : 28 Nov 2017, 08:49 AM

কীভাবে বুঝবেন প্রেমে চলছে ঘনঘটা? যদিও নিজেদের সম্পর্কে মধ্যে সমস্যাগুলো নিজেদেরই বোঝার কথা। তারপরও সম্পর্কবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে বেশ কয়েকটি নির্দেশনা এখানে দেওয়া হল। যেগুলো থেকে বুঝে নিতে পারবেন ভালোবাসাটা ঠিক ভালো যাচ্ছে না।

সঙ্গে থাকলো সমস্যা সমাধানের কয়েকটি পথ।

শিশুর মতো ঈর্ষাপরায়ণ: যে কোনো সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ ঈর্ষা। এটা ক্যান্সারের মতোই বাড়তে থাকে- যা অবিশ্বাস ও অসন্তোষের জন্ম দেয়, আস্থা কমায়। ফলে সম্পর্কটা হয়ে যায় অনেকটা ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো’র মতো!

বরং সঙ্গীকে বিশ্বাস করতে হবে। হতে পারে আগের কোনো বাজে অভিজ্ঞতা মনের মধ্যে পুষে রেখে সঙ্গীকে ঈর্ষা করে যাচ্ছে ভুল বুঝে, বরং আগের বাজে অভিজ্ঞতা ভোলার এখনই সময়।

দ্বিচারণ: এখনও কি প্রাক্তণের কথা মনে পড়ে, কিংবা যোগাযোগ আছে বা তার ফেইসবুক প্রোফাইল ঘাটান? তাহলে বুঝতে হবে প্রাক্তণের সঙ্গে সম্পর্কটা হয়ত আপনি ঠিক মতো বোঝাপড়া করেননি।

আসলে সম্পর্কের মধ্যে কোনো ধূসর বিন্দু থাকা উচিত নয়, যা আপনার বর্তমান প্রেমে প্রভাব ফেলবে। তাই সুস্থ ভালোবাসার সম্পর্কের জন্য জরুরি ভিত্তিতে সঠিক বোঝাপড়ার এখনই সময়।

অতৃপ্তি: যদি সবসময় নিজেকে অসুখী মনে হতে থাকে, তবে সমস্যাটা আপনার মধ্যে। আপনিই সম্পর্ক ধ্বংস করার উপাদান। আপনার উচিত সবসময় অভিযোগ না করে যা পাচ্ছেন সেটা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা। কারণ পৃথিবীর কেউ ‘সুপার ম্যান’ বা ‘সুপার গার্ল’ নয়।

সবসময় অভিযোগকারীর সঙ্গে কে থাকতে চায়? বরং ইতিবাচক মনোভাব সম্পর্কে টানাপড়েন থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করবে।

কথা না বলা:  হয় আপনি চিল্লান নয়ত চুপ থাকেন- আর এদুটোর কোনোটি ভালো পন্থা নয়। সুন্দর সম্পর্কের জন্য চাপিয়ে দিয়ে নয় বরং নিজের চিন্তা ও আবেগ সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে হবে।

যদি আপনি চেপেই রাখেন সব, কিংবা খোলা মনের না হন তাহলে সম্পর্ক হয়ে যাবে দুর্বল।

যা ভাবছেন তা বুঝবে: এই সমস্যাটা ‘কথা না বলা’র সঙ্গে সম্পর্কিত। যা ভাবছেন তা সবসময় সঙ্গী বুঝতে পারবে সেটাও ঠিক নয়। বরং এটা আশা করে যাওয়া বোকামী এবং এটা ভুল বোঝার দিকে নিয়ে যায়।

তাই বন্ধ করুন এই ভাবনা। বরং যা ভাবছেন তা প্রকাশ করুন। না হলে আপনার সঙ্গীর কাছে বিরক্তিকর হয়ে উঠবেন।

অতিরিক্ত নির্ভরশীল: মনে রাখতে হবে সঙ্গী মানে তত্ত্বাবধায়ক নয়। আপনি যা সম্পর্কের মধ্যেও তাই রাখতে হবে নিজেকে। সঙ্গীর সঙ্গে মেলালে চলবে না। দুজনকেই দুজনের কাজের জন্য সময় দিতে হবে এবং নিজের কাজ নিজে করতে হবে।

সাবধান! মনে থাকেন যেন সম্পর্কে অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা হতে পারে সমস্যার কারণ।

অতিরিক্ত স্বাধীন: আবার মনে রাখতে হবে বেশি আত্মনির্ভশীল হলেও সমস্যা। কারণ সঙ্গীর তখন মনে হবে, তাকে আর কোনো প্রয়োজন আপনার কাছে নেই।

আসলে নির্ভরশীল ও স্বাধীন এই দুই বিষয়ের উপর সঠিক সমন্বয় করাটাই হচ্ছে সম্পর্কের ‘চ্যালেঞ্জ’। বেশি মাত্রায় স্বাধীন মনোভাব সঙ্গীকে বেশি পাত্তা না দেওয়ার বোঝাতে পারে।

সত্য না বলা: সত্যনিষ্ঠ থাকা মানেই আপনি খাঁটি। সুস্থ ও আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সততার কোনো বিকল্প নেই।

যদি মিথ্যা বা সত্যকে ঘুরিয়ে বলতে হবে, তবে হতে পারে আপনি ভুল সম্পর্কে বসবাস করছেন।

ভালোবাসা প্রকাশ না করা: শুধু কথায় নয়, কাজেও ভালোবাসা প্রকাশ করতে হবে। ভালোবাসা বাড়াতে ভালোবাসার চর্চা করতে হয়।

আর এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, দুজনকেই একই কাজ করতে হবে।

সমস্যা মোকাবিলা না করা: সমস্যা হলেই ঘুরে দাঁড়ান, ঝগড়ার পর ক্ষমা করেন না, অভিযোগ করতে ছাড়েন না কিন্তু এই ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপও গ্রহণ করে না- এসবই আপনার বাজে স্বভাব যা সম্পর্কে যন্ত্রণা ছড়ায়।

সমস্যা মোকাবিলা না করার এই অভ্যাস দূর করতে হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেশা: সম্পর্কের টানাপড়েন কমাতে বস্তব জগতে বাস করতে হবে বেশি। যদি সবসময় ফেইসবুক মাথায় ঘোরে, সকালে উঠে প্রথমেই এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফেইসবুক টুইটার হয় আপনার জীবন, যদি ফোন ছাড়া এক মুহূর্ত টিকতে না পারেন তবে সম্পর্কের মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়াবেন আপনি।

‘বাস্তব’ জীবনের চাইতে ‘ভার্চুয়াল’ জগৎকে প্রাধান্য দেওয়া মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

প্রতিশ্রুতি আপনাকে সন্ত্রস্ত করে: যে কোনো সম্পর্কে দায়িত্ববোধ থাকতে হবে। আর ভালোবাসার সম্পর্কে এটা জরুরি।

যদি প্রতিশ্রুতি রাখার কথা শুনে কেঁপে ওঠেন তবে সম্পর্কে বিশ্বাস বলতে আপনি যা বোঝেন, সঙ্গী হয়ত সেভাবে বোঝে না। তাই আপনার একা থাকা উচিত। ভালোবাসার সম্পর্ক আপনার জন্য নয়।

মনের করেন আপনিই শ্রেষ্ঠ: সম্পর্ক মানে প্রতিযোগিতা নয়, বরং দলব্ধভাবে থাকাই ভালোবাসা। যদি সবসময় মনে করেন কর্তৃত্ব আপনার, তাহলে সম্পর্কের দাঁড়িপাল্লা বারবার একদিকে হেলে পড়তে থাকবে।

সত্যি বলতে একসময় আপনার সঙ্গী আর কোনো কথাই শুনবে না।

আপনি সঠিক: নিজে ভুল করা পছন্দ করে না। তবে এটা কখনও সম্ভব না। তারপরও আপপি দাঁতমুখ খিঁচে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন আপনি-ই ‘ঠিক’।

এই ধরনের পাগলামো মনোভাব একটাই বিষয় নির্দেশ করে, সঙ্গী আপনার জন্য ‘বোঝা’ হয়ে গিয়েছে।

গ্লাস অর্ধেক খালি: নেতিবাচক মনোভাব সম্পর্ক নষ্ট করতে বাধ্য। যদি সবসময় মনে হয় ‘গ্লাস অর্ধেক খালি’ আর সঙ্গী সবসময় আপনার মন ভালো করার চেষ্টায় রত, তাহলে নিশ্চিত থাকেন আপনার ভালোবাসা একসময় না একসময় আপনাকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে।

হুমকি দেওয়া: মাঝে মধ্যেই কি বলে বসেন, ‘আমি কিন্তু ব্রেক আপ করব’; ‘তুমি বরং আমাকে ছাড়াই থাক’; ‘আমি কিন্তু চলে যাব’- সাবধান আপনি কিন্তু সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে গিয়ে হুমকি দিচ্ছেন।

একটু ভাবুন, এটা কি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার কোনো ভালো উপায়? আপনার সঙ্গী এই ধরনের ব্যবহার সবসময় গ্রহণ করবে না। - তাই পরিবর্তন করুন নিজেকে।

সবার সঙ্গে ঝগড়া: বন্ধু, প্রতিবেশি, সহকর্মী, পরিবারের সদস্যা এবং অবশ্যই আপনার সঙ্গীর সঙ্গে কোনো না কোনো সময় ঝগাড়া করে যাচ্ছেন!

এই ধরনের সমস্যা থাকলে বুঝতে হবে আপনি হয়ত খুবই জটিল কিসিমের মানুষ। এটার পরিবর্তন করার চেষ্টা করেতে হবে। সম্পর্কে এই স্বভাব ভাঙনের সুর বাজায়।

কখনও আপোসে না যাওয়া: সব কিছুই সাদা-কালো নয়। মাঝে ধূসর এলাকাও রয়েছে, বিশেষ করে সম্পর্কের মধ্যে। জানতে হবে কীভাবে আপোস করতে হয়।

আপোস বা ‘কম্প্রোমাইজ’ হচ্ছে এমন একটি পন্থা যেখানে মনে হবে দুজনই জয়ী। যদি কখনও এই কাজ না করেন তবে সম্পর্কে জটিলতা বিদ্যমান।

সঙ্গীকে প্রাধান্য না দেওয়া: সুন্দর সম্পর্ক কখনও একমুখী হতে পারে না। নিজে কিছু না করে সবসময় সঙ্গীর কাছ থেকে ভালো ব্যবহার পেয়ে যাবেন, সেটা মোটেই ঠিক কাজ না।

আসলে কে কয়টা ভালো কাজ করলো সেটা গণনার প্রশ্ন নয়, সদিচ্ছাই আসল।

 ‘আই লাভ ইউ’ কীভাবে বলতে হয় জানেন না: আপনি কি নিজের আবেগ থেকে দূরে থাকেন? তারচেয়ে বড় কথা সঙ্গীকে ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বলতে কি আপনার কষ্ট হয়! মনে কি হয়- এই তিনটি শব্দ বলা মানেই অতিরিক্ত নেকামো করা!

যদি তাই হয় তাহলে বরং ভাবুন আপনি কেনো সম্পর্কে জড়াচ্ছেন!

আরও পড়ুন