কৃত্রিম চিনি কি নিরাপদ?

‘সুইটেনার’, ‘সুইট অ্যান্ড লো’, ‘সুগার ফ্রি’ ইত্যাদি বিভিন্ন নামে ডাকা হয় এই পণ্যকে। তবে প্রশ্ন হলো এগুলো কতটা নিরাপদ? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়বেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য এগুলো নিরাপদ। তবে খেতে হবে পরিমাণ মতো।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2017, 11:55 AM
Updated : 14 Nov 2017, 11:55 AM

ক্যালরি ও কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমানোর পাশাপাশি মিষ্টি খাওয়ার আকাঙক্ষা কমাতেও কার্যকরী কৃত্রিম চিনি।

‘সুগার ফ্রি’ লেখা ডায়েট ড্রিংকস, বেইক করা খাবার, ফ্রিজে রাখা ডেজার্ট, লজেন্স, দই, চুইং গাম সবকিছুতেই দেখা মিলবে এই কৃত্রিম চিনির। চা, কফি ইত্যাদি পানীয়তে মেশানোর জন্য প্যাকেটজাত তো আছেই, রান্নায় কিংবা বেইক করতে ব্যবহারযোগ্য কৃত্রিম চিনিও মেলে বাজারে।

তবে মনে রাখতে পরিমাণে কম ব্যবহারের বিষয়টি। সাধারণ চিনির তুলনায় কৃত্রিম চিনিতে মিষ্টির মাত্রা একশ গুণ বেশি হয়ে থাকে।

স্বাস্ব্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে এই বিষয়ের উপর প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (এফডিএ) এজিন্সির ‘জেনারেলি এক্সেপ্টেড অ্যাজ সেইভ (জিআরএএস) তালিকায় পরীক্ষিত এবং স্বীকৃত কৃত্রিম চিনি আছে ছয়টি। অসংখ্য গবেষণা চালানোর প্রেক্ষিতে নিরাপদ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে পণ্যগুলোকে।

এসব পণ্য দিনে কতটুকু পর্যন্ত গ্রহণ করা যাবে তার মাত্রা প্রকাশ করা হয়েছে ‘একসেপ্টেবল ডেইলি ইনটেক (এডিআই)’য়ের তালিকায়।

এসিজালফেম-পটাশিয়াম (এস-কে): ‘সানেট’ ও ‘সুইট ওয়ান’ ব্র্যান্ডের কৃত্রিম চিনিগুলো এধরনের। সাধারণত অন্য আরেকটি ক্যালরি কম এমন কৃত্রিম চিনির সঙ্গে মিশিয়ে এগুলো তৈরি করা হয়। তাপ ও মৃদু অম্লীয় কিংবা ক্ষারীয় পরিবেশেও এগুলো নিজের গুণাগুণ ধরে রাখতে পারে। ফলে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায় এবং পানীয়তে মেশানোর পাশাপাশি রান্নায়ও ব্যবহার কররা যায়। বেশিরভাগ কার্বোনেইটেড পানীয় তৈরিতে এটি ব্যবহার করা হয়, তবে আরেকটি কৃত্রিম চিনির সঙ্গে মিশিয়ে।

অ্যাসপাটেম বা দ্য ব্লু প্যাকেট: এই পণ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দুই শতাধিক গবেষণা। ‘ফিনাইলালাইন’ নামক রাসায়নিক উপাদানের উৎস এটি, যা ‘ফিনাইলকিটোনুরিয়া’য় আক্রান্ত ব্যক্তিদের এড়িয়ে চলতে হবে। তাপে এই পণ্য দ্রুত নষ্ট হয়, তাই রান্নায় ব্যবহার করা যাবে না। ‘নিউট্রাসুইট’, ‘ইকুয়াল’ ব্যান্ডের কৃত্রিম চিনিগুলো এই ধরনের।

নিওটেম: এই কৃত্রিম চিনির মিষ্টির মাত্রা সাধারণ চিনি থেকে ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার পরিমাণ বেশি। এতেও ‘ফিনাইলালাইন’ থাকে, তবে যেহেতু পরিমাণে খুবেই কম লাগে তাই উপদানটির মাত্রা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। পণ্যটি এই নামেই বিক্রি হয়। বড়মাপের খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করে এটি। 

স্যাকারিন বা দ্য পিঙ্ক প্যাকেট: একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে তরল এই বিকল্প চিনি। স্যাকারিন থেকে মুত্রথলিতে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে বলা হয় ১৯৭০ সালের এক গবেষণায়। তবে গবেষণাটি মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় বলে বাতিল করে দেয় এফডিএ। এটি তাপ সহনশীল, তাই রান্নায় ব্যবহারের জন্য আদর্শ। ‘সুইট অ্যান্ড লো’, ‘সুইট টুইন’ ও ‘সুগার টুইন’ ব্র্যান্ডের কৃত্রিম চিনিগুলো আসলে স্যাকারিন।

স্টেভিয়া বা দ্য গ্রিন প্যাকেট: ‘স্টেভোসাইড’, ‘রেবাউডিসাইড এ, বি, সি, ডি, এফ’, ‘ডালকোসাইড এ’, ‘রুবাসোসাইড’ এবং ‘স্টেভিওলবায়োসাইড’ নামেও পরিচিত এই কৃত্রিম চিনি। ব্র্যান্ডের নামগুলো হলো ‘সুইট লিফ’, ‘সান ক্রিস্টাল’, ‘স্টোভিয়া’, ‘ট্রুভিয়া’ এবং ‘পিউরভায়া’। এটি তরল এবং দ্রবণীয় ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়। কিছু ‘স্টেভিয়া’ পণ্য ‘জিআরএএস’ স্বীকৃতি পায়নি। তাই ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট হিসেবে বিক্রি করতে হয়, চিনির বিকল্প হিসেবে নয়। পানীয় তৈরিতে ব্যবহার হয় এটি। বেইক করতেও ব্যবহার করা যাবে। নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবহার করা আবশ্যক।

সুক্রালোজ বা দ্য ইয়েলো প্যাকেট: তাপ সহনশীল- রান্নায় ও বেইক করতে সবচাইতে সহজে ব্যবহারযোগ্য। পানি দ্রবণীয় ট্যাবলেট, দানাদার ট্যাবলেট এবং বেইকিং ব্লেন্ড হিসেবে পাওয়া যায় এটি। ব্র্যান্ডের নাম হলো ‘এন’জয়’ এবং ‘স্প্লেন্ডা’।

রান্নায় কৃত্রিম চিনি ব্যবহার: রান্নায় কৃত্রিম চিনি ব্যবহারের আগে প্যাকেটের গায়ের নির্দেশাবলী ভালোভাবে পড়ে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বেইক করা খাবারে চিনির পরিবর্তে কৃত্রিম চিনি ব্যবহার করলে রং হালকা হতে পারে। কারণ প্রাকৃতিক চিনির তুলনায় কৃত্রিম চিনির খাবারে বাদামি রং আনার ক্ষমতা কম থাকে। কেক, মাফিন, পাউরুটি বানানোর ক্ষেত্রে কৃত্রিম চিনি ব্যবহার করলে ফোলাভাব কমতে পারে। ভিন্ন হতে পারে খাবারের ‘টেক্সচার’।

রান্না কিংবা বেইক করার সময়ে তারতম্য হতে পারে। কৃত্রিম চিনি দিয়ে তৈরি খাবার খাওয়ার পর মুখে ভিন্ন স্বাদ লেগে থাকতে পারে। খাবারটির স্থায়িত্বও কমতে পারে।

আরও পড়ুন