নুনেশাক দিয়ে গরুর মাংস রান্না

নুনেশাক মোটেই নোনতা না, টক-স্বাদের এই শাক দিয়ে গরুর মাংস রান্নার প্রচলন পুরান ঢাকায় থাকলেও নতুন ঢাকার অনেকেই জানেন না।  মাংস রান্নায় ভিন্ন স্বাদ আনতে রেসেপি জেনে নিন।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2017, 08:44 AM
Updated : 10 Nov 2017, 09:51 AM

রান্নার পদ্ধতি ও নুনেশাকের গল্প শোনাচ্ছেন পুরান ঢাকার বাসিন্দা, পরিব্রাজক, খাদ্যরসিক ফারুখ আহমেদ।

গরুর মাংসের সঙ্গে নুনেশাক আদি ঢাকাইয়াদের মধ্যে কেউ খায়নি- এমন হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। ঢাকার অনেক ঐতিহ্যের মতো নুনেশাকের ঐতিহ্য যুগ যুগ ধরে লালন করে চলেছে ঢাকাইয়ারা।

এখন নুনেশাকের মৌসুম। পুরান ঢাকার অলিতে-গলিতে এই সময় নুনেশাক বিক্রি হতে দেখা যায়। বিশেষ করে নাজিরা বাজার চৌরাস্তা, কলতাবাজার আল-মঈন মাদ্রাসা ও রায়সাহেব বাজার এলাকায় নুনেশাকের খোঁজ পাবেন।

এই শাকের একজন বিক্রেতা সিরাজ মিয়ার সঙ্গে কথা বলে নুনেশাক বিক্রি ও চাষের নানান তথ্য জানা গেল। তারপর ফোন করি প্রকৃতিবিদ মৃত্যুঞ্জয় রায়কে।

তিনি জানান, টক টক স্বাদের এই শাক স্যাঁতসেতে ভেজা মাটিতে হয়। সুতরাং চাষ করার কোনো প্রশ্ন ওঠেনা। টিউবয়েলের আশপাশে, বাড়ির পাশের নিচু জমিতে এই শাক আগাছার মতো এমনিতেই হয়।

তবু কৌতূহল বলে কথা। কারণ পুরান ঢাকাবাসির চাহিদা মতো এত নুনেশাকের যোগান হয় কোত্থেকে?

একদিন ভোরে বের হয়ে রমনা উদ্যানে না যেয়ে কেরানীগঞ্জের হযরতপুরের পথে মটরবাইক চালু করি। চলতি পথে রামের কান্দার কাছে বেল্লাবাজার এসে নুনেশাকের খোঁজ পাই। এখানে হেলাল উদ্দিন একজন নুনেশাকের কৃষক। তার কাছ থেকে জানা গেল, তিনিসহ অনেকেই নুনেশাকের চাষ করেন। কেজি প্রতি দাম ৮০ থেকে ১২০ টাকা।

দুই কেজি নুনেশাক কিনে ঢাকার পথে পা বাড়াই। তখন কেবল মৃত্যুঞ্জয় রায় দাদার কথা মনে হচ্ছিল। তিনি বলেছিলেন, নুনেশাকের চাষ করার প্রশ্নই ওঠেনা। কিন্তু দাদা বোধহয় জানেন না মানুষের প্রয়োজন অসম্ভবকেও সম্ভব করে!

বেল্লাবাজার থেকে কেনা নুনেশাক থেকে এক কেজি শাকের সঙ্গে গরুর মাংস রান্না করে সেটার রেসিপি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পাঠকদের জন্য দেওয়া হল।

ঢাকাই ঐতিহ্য গরুর মাংসের এই রান্নার রেসিপি দিয়েছেন পুরান ঢাকার কলতাবাজারের বাসিন্দা হাজী ফরিদা বেগম!

উপকরণ: নুনেশাক ১ কেজি। গরুর মাংস ১ কেজি (পায়ের উপরের মাংস হলে খুব ভালো হয়, দোকানে ক্যারেলির মাংস বলে চেনে। না হলে হাঁড় যুক্ত মাংস নেবেন। গরু ছাড়াও খাসি দিয়েও রান্না করা যায় তবে স্বাদ অত ভালো হবে না)। এলাচ ২টি। দারুচিনি ২ টুকরা। তেজপাতা ২টি। হলুদগুঁড়া ১ চামচ। মরিচগুঁড়া ২ চামচ। আদা ও রশুন বাটা আধা কাপ করে। পেঁয়াজ ২৫০ গ্রাম। সায়াবিন তেল ২৫০ গ্রাম। লবণ পরিমাণ মতো। কাঁচামরিচ ৮টি। লেবুর রস ১ চা-চামচ। জিরাগুঁড়া পরিমাণ মতো।

পদ্ধতি: শুরুর আগে নুনেশাক বাছতে হবে ভালো করে। তারপর একটা গামলায় নিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে পাঁচ মিনিট। কয়েকবার ভালো করে শাক ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে যাতে কোনো রকম ময়লা না থাকে।

মাংস ভালো করে ধুয়ে কেটে নিন।

এবার আদা ও রশুন বাটা, পেঁয়াজকুচি, মরিচ ও হলুদ গুঁড়া, এলাচ, দারুচিনি, তেজপাতা, লেবুর রস ও তেল ভালোভাবে মাখিয়ে হালকা আঁচে রান্না করে মাংস ছেড়ে দিন।

ভাজা ভাজা করে সিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর পরিষ্কার করা নুনেশাক মাংসের ওপর ঢেলে দিন।

১৫ থেকে ২০ মিনিট হালকা আঁচে রান্না করে চুলা থেকে নামানোর আগে আস্ত মরিচ দিয়ে তিন-চার মিনিটি হালকা ভাবে নেড়ে জিরার গুঁড়া ছিটিয়ে নামিয়ে নিন।

ব্যস প্রস্তুত স্পেশাল ঢাকাইয়া ব্যঞ্জন  নুনেশাক দিয়ে গরুর মাংস। এবার গরম গরম পরিবেশন করুন। মনে রাখবেন রান্না যত বাসী বা পুরান হবে, স্বাদ ততই বাড়বে!