আত্মহনন কোনো সমাধান নয়

বেঁচে থাকলেই আশা থাকে। নিজেকে ধ্বংস করার মধ্যে কোনো সমাধান নেই। কষ্ট, হতাশা, না পাওয়ার বেদনা- এসব টপকিয়ে জয় করার চেষ্টা করে যাওয়াই জীবন।

তৃপ্তি গমেজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Nov 2017, 11:51 AM
Updated : 2 Nov 2017, 11:51 AM

তারপরও অনেক মানুষ হতাশা, ব্যক্তিত্বের বৈকল্য এনমকি অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করার আগ্রহ থেকে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

কেনো মানুষ নিজেকে আঘাত করে, শারীরিক বা মানসিকভাবে নিজের উপর অত্যাচার করে? এর পেছনে মানুষের কী ধরনের মানসিক অবস্থা কাজ করতে পারে তার সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে জানান জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট’য়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দীন।  

“না খেয়ে থাকা, না ঘুমানো অথবা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমানো, নিজেকে আঘাত করা যেমন- হাত-পা কাটা, দেয়ালে আঘাত করা অথবা আত্মহননের চেষ্টা করা এক ধরনের মানসিক বৈকল্যতা যা হতাশা, অবসাদ ও মানসিক চাপ থেকে সৃষ্টি হয়।”

“অনেকে আবার অন্য মানুষের মনোযোগ আকর্ষণের উপায় হিসেবেও নিজেকে আঘাত করার পথ বেছে নেয়।” বললেন এই মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ।

নিজেকে আঘাত করার পেছনে যে কারণই থাকুক না কেনো এর চালিকা হিসেবে কাজ করে মানসিক চাপ, অবসাদ বা হতাশা। অনেকে আবার নিজের অনুভূতি সহভাগিতা করতে না পারার কারণেও এই ধরণের পথ বেছে নিয়ে থাকেন। নিজের এই খারাপ অনুভূতিগুলোকে দূর করার জন্য কিছু কিছু মানুষ এই রকমের ভুল পথ বেছে নেয়।

তবে নিজেকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টা কখনও এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে না বরং তা সমাজের চোখে নিজেকে আরও ছোট করে।

একটা সময় ছিল যখন মানুষ কেবল সম্পর্ক বা পারিবারিক অশান্তির কারণে  আত্মহননের পথ বেছে নিত। তবে বর্তমানে এইসব কারণের পাশাপাশি পড়াশুনার চাপ, হিংসা, অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র করেও এই ভুল পথ বেছে নেয়।

সম্প্রতি দেখা গেছে ছোট ছোট শিশুরা পড়াশুনার চাপ সামলাতে না পেরে বা পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়ার কারণে মানসিক চাপে ভোগে এবং অনেকে তার চাপ সামলাতে না পেরে এমন ভুল পথ বেছে নেয়। অভিভাবকরা সন্তানের জ্ঞান আহরণের চেয়ে পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাচ্ছে কিনা সেদিকে বেশি মনোযোগ দেয় যা শিশুদের বিকাশে বাধা দেয় এবং জ্ঞান অর্জনের আগ্রহ শেষ করে দেয়।

অভিভাবকদের এমন প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের কারণে অনেক ছোট শিশু মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে নানা রকম ভুল পথ বেছে নেয়। পড়াশুনার চাপ নিতে গিয়ে শিশুরা সামাজিক দক্ষতা অর্জন থেকে বিরত থাকে ফলে তারা কখনই সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনা যা জাতির জন্যই আত্নঘাতী বলে মনে করেন ডা. হেলাল।

তিনি বলেন ‘‘আমাদের দেশে বর্তমানে জ্ঞানমুখী শিক্ষার বদলে সার্টিফিকেটমুখী শিক্ষার প্রচলন বেশি তাই সুস্থ চিন্তার ও সঠিক মানসিক বিকাশ সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা কম। শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই দেশের বাইরে চলে যায় ফলে সুনাগরিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই দেশ।”

এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সন্তানকে কেবল ভালো ফলাফলের প্রতি উৎসাহিত না করে তাকে সামাজিকভাবে দক্ষতা অর্জনে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করার শিক্ষা, বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলানোর শিক্ষা অর্জনে সন্তানকে উৎসাহিত করার পরামর্শ দেন ডা.হেলাল।

তিনি বলেন, “ছোট থেকে যদি সন্তানকে এই ধরণের শিক্ষা দেওয়া হয় তাহলে কখনই সে আত্মহননের মতো ভুল পথ বেছে নেবে না। সে জীবনে অর্থ খুঁজে পাবে যা তাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।”

সন্তানকে কেবল ভালো ফলাফলের প্রতি উৎসাহিত না করে তাকে সামাজিকভাবে দক্ষতা অর্জনে উৎসাহিত করা প্রয়োজন।

পড়াশুনা ছাড়াও যারা পারিবারিক বা সামাজিক সমস্যার কারণে এই ধরনের ভুল পথ বেছে নেয় তারা কেবল ক্ষণিকের কষ্টকেই বড় করে দেখে সামনে যে একটা ভালো ভবিষ্যত আছে সেদিকে তারা মনোযোগ দেয় না। এই ধরনের ভুল আসলে হতাশা আর আবেগপ্রবণতার কারণে হয়ে থাকে। নিজেকে কষ্ট দেওয়া কোনো সমাধান নয় বরং এটা মানসিক বৈকল্য।

তাই এখান থেকে বের হয়ে আসার জন্য চেষ্টা করতে হবে। যতটা সম্ভব নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা ও সব কিছুই ইতিবাচক দিক বিবেচনা করার চেষ্টা করতে হবে।

ডা. হেলাল জানান, অনেকে মনোযোগ আকর্ষণের জন্য নিজেকে আঘাত করে থাকেন, এটা সম্পূর্ণ ভুল পদক্ষেপ। এতে বরং সামাজিক অবস্থান নষ্ট হয়।

তাছাড়া নতুন প্রজন্মের এই ধরনের ভুল পদক্ষেপের কারণ অনেক সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা মিডিয়া। অনেক ভুল বা মিথ্যা সংবাদ প্রচার, আবার অনেক আত্মহত্যা বা নির্মম ঘটনাকে খুব বেশি ফলাও করে প্রকাশ করে থাকে। ফলে অন্যান্য মানুষরাও এদিকে উৎসাহিত হতে পারে।

তাই যে কোনো খবর প্রচারের আগে তার সত্যতা যাচাই করে নেওয়া এবং সংবাদ প্রকাশের নীতিমালা মেনে তা প্রকাশ করা উচিত। যাতে এই ধরনের খবর অন্যরা উৎসাহিত না হন।

ডা. হেলালের পরামর্শ হল, হতাশা কাটিয়ে জীবনের নেতিবাচক দিকগুলো জয় করার চেষ্টা করে যেতে হবে। নিজেকে ধ্বংস নয়, সৃষ্টির মাধ্যমে পাওয়া যায় মানসিক শান্তি। যা একটা ভালো সুন্দর ভবিষ্যত গড়তেও সাহায্য করে।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন