স্তন্যদান মা ও শিশু দুজনের জন্যই উপকারী

লাইফস্টাইলডেস্ক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম মায়ের বুকের দুধ শিশুর জন্য যেমন উপকারী তেমনি স্তন্যদান সন্তান হওয়ার পর মায়ের শারীরিক ও মানসিক যে পরিবর্তন হয় সেটা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।  

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2017, 06:08 AM
Updated : 26 Oct 2017, 06:09 AM

কথায় বলে, শিশুর জন্য 'মায়ের দুধ সর্বোত্তম'। সন্তানকে বুকের দুধ পান করালে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শিশুকে সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করে।

আবার সন্তানকে স্তন্যদান করলে নারী ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কাও কমে।

চিকিৎসাস্ত্রের এসব প্রতিষ্ঠিত বিষয়গুলো এখন প্রায় অনেকেরই জানা। এছাড়াও রয়েছে আরও অনেক উপকার।

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে এই বিষয়ের উপর প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতের মহিলা ও শিশুবিষয়ক চিকিৎসক এবং ‘ফার্টিলিটি’ বিশেষজ্ঞ ডা. নন্দিতা পালশেতকার বলেন, “শিশুর জন্য মায়ের দুধের উপকারিতা সম্পর্কে অনেক কিছু বলা হয়ে থাকে। তবে এটাও সত্য যে, স্তন্যদান মায়ের জন্যও উপকারী। নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে মায়ের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পায় এবং শিশুর পরিচর্যা করার মধ্য দিয়ে মায়ের ওজন কমাতেও সাহায্য করে।”

মাতৃত্বের প্রথম পর্যায়ে হরমোনের নানান পরিবর্তন হয়। এবং গর্ভাবস্থার পরবর্তী সময়ে তা একটি নির্দিষ্ট রুটিনে চলে আসে। এই সময় নবজাতককে বারবার স্তন্যদানের জন্য মায়ের দুর্বলতা অনুভব করা, খিটমিটে মেজাজ, ঘুমের স্বল্পতা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেওয়া খুব স্বাভাবিক।

তারপরও এটা বুঝতে হবে যে, শিশুকে স্তন্যদান করা স্তন ক্যান্সারের  ঝুঁকি কমায় এবং মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তন অতিক্রম করতে সাহায্য করে। 

শিশুর জন্মের পরের প্রথম কয়েকদিনের দুধকে 'প্রথম দুধ/কোলেস্ট্রাম' বা শালদুধ বলা হয়। হলুদাভ, ঘন এ তরল শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান সরবারহ করে। কোলোস্ট্রাম শিশুর হজমক্রিয়া উন্নত করে ও দুধ হজম হতে সাহায্য করে। ফলে কেবল শিশু নয় মাও উপকৃত হয়।

অনেকে নারীই মনে করেন সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানো হলে তার শরীরের বাহ্যিক গঠনে প্রভাব পড়বে। তবে সত্যি হল, এরমধ্য দিয়ে নারীরাও উপকৃত হয়। যেমন-

* গবেষণায় দেখা গেছে যে, যেসব নারী সন্তানকে নিয়মিত বুকের দুধ পান করান তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। যত বেশি সন্তানকে স্তন্যদান করা হয় নারীদের ক্যান্সারের ঝুঁকি তত বেশি হ্রাস পায়। তাছাড়া নিয়মিত স্তন্যদান করা হলে তা জরায়ু ও ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার দূরে রাখতে সাহায্য করে।

* সন্তানকে বুকের দুধ পান করানো পরিবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও ‍ভূমিকা রাখে। এটা প্রোল্যাক্টিন উৎপাদন করে ডিম্বস্ফোটনে বাধা দেয়। প্রোল্যাক্টিন এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের উৎপাদনে বাধা দেয় যা ডিম্বস্ফোটন নিয়ন্ত্রণ করে। এভাবে শিশুকে স্তন্যদান করা মায়ের জন্যও উপকারী।

* গবেষণা থেকে জানা যায়, শিশু-পরিচর্যা মধ্য দিয়ে মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। যে সকল মা শিশুকে নিয়মিত বুকের দুধ পান করান তাদের মধ্যে প্রসব পরবর্তী ভীতি ও অবসাদ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে এবং মা ও শিশুর মধ্যকার সম্পর্ক জোরালো হয়।

* গবেষনা থেকে আরও জানা যায়, যেসকল মা দিনে অন্তত চার বার স্তন্যদান করেন না তাদের অস্টিওপোরোসিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। আর মেনোপজের পরবর্তী সময়ে কোমড়ের হারের ফাটল জনিত সমস্যায় ভোগেন।

শুধু তাই নয়, স্তন্যদান মায়ের গর্ভপরবর্তী ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করে। শিশুর পরিচর্যার জন্য মায়ের দৈনিক ৫০০ ক্যালরি খরচ হয়। ফলে মায়ের কোমড়ের পরিধি ও অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে। শিশু পরিচর্যায় অক্সিটসিন উৎপাদনে সাহায্য করে। যা সন্তান জন্মের পরে মায়ের জরায়ু সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। তাছাড়া এটা মায়ের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণও সাহায্য করে।

* গর্ভকালীন অবস্থায় গ্লুকোজের সহনশীলতা কমে যায় ও ইন্সুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বাড়ে। এছাড়াও গর্ভকালীন ওজন বৃদ্ধির কারণে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে।

গবেষণায় দেখা গেছে, সন্তানকে স্তন্যদানের মধ্য দিয়ে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

আরও জানা গেছে, যে মায়েরা নিয়মিত সন্তানকে স্তন্যদান করেন তাদের টাইপ-টু ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা উল্ল্যেখযোগ্য হারে কম থাকে।

* স্তন্যদান কেবল শরীরের জন্যই উপকারী নয় বরং এটা ব্যয় সাপেক্ষও। বাজার থেকে কেনা দুধের ব্রান্ড, ধরণ, খাওয়ার পরিমাণ, প্রস্তুত প্রণালী ইত্যাদি মেনে চলা বেশ ঝামেলাকর। আর বাড়তি খরচ তো আছেই। তাছাড়া এটা তেমন কোনো স্বাস্থ্যউপকারিতাও দান করে না যা মায়ের দুধ থেকে পাওয়া সম্ভব।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন