গাড়ি কিনতে ঋণ

কারা পাবেন? কীভাবে পাবেন? জেনে নিন।

মামুনুর রশীদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2017, 08:05 AM
Updated : 18 Oct 2017, 08:22 AM

মাসে লাখ টাকা বেতন পান আবেদিন সাহেব। পাড়া-প্রতিবেশি, আত্নীয়-স্বজন বলে, গাড়িটা এবার একটা নিয়েই ফেলেন। ছেলেটা আজ এই গাড়ি তো কাল ওই গাড়ির ছবি দেখায়, দামদরের হিসেব শোনায়। কিন্তু বাড়ি ভাড়া, সংসারের খরচ, ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ ইত্যাদি সেরে যে কটা টাকা জমে তা দিয়ে গাড়ি কেনার শক্ত হিসেবটা কষতে হিমশিম খান আবেদিন সাহেব। মনে হয় দিল্লি বহুত দূর।

কল্পিত এই গল্পের সঙ্গে নিজের মিল খুঁজে পাবেন অনেকেই। তাদের জন্য সমাধান হল ব্যাংক ঋণ। গাড়ি কেনার জন্য ব্যাংকগুলো বিশেষভাবে সাজানো ‘কার লোন’ সুবিধা দেয়। আবার গাড়ি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোও ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়।

বনানির এমনই গাড়ি বিক্রির প্রতিষ্ঠান প্রোগ্রেস মটরস’য়ের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোসিউল আওয়াল জানালেন ঋণের প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে।

তিনি বলেন, “নতুন এবং রিকন্ডিশন গাড়িগুলো কেনার ক্ষেত্রে ঋণের সুবিধা পাওয়া যায়, ব্যবহৃত গাড়ির কিনতে পুরো দাম নগদ পরিশোধ করতে হবে। ব্যাংক থেকে গাড়ির দামের ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ মিলবে।”

“যদি ‘স্যালারি অ্যাকাউন্ট’য়ের ভিত্তিতে ঋণ নিতে হয় তবে নুন্যতম বেতন হতে হবে ৫০ হাজার টাকা। ঋণের মেয়াদ হবে তিন থেকে চার বছর, আর সুদ দিতে হবে ১০ থেকে ১১ শতাংশ। তবে গাড়ি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঋণ নিতে সুদের হার কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে।”

“আমরা ব্র্যাক এবং পুবালি ব্যাংক থেকে ঋণ দিয়ে থাকি। এজন্য ক্রেতার প্রয়োজন হবে ক্রেতার স্যালারি অ্যকাউন্টের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ভোটার আইডি কার্ডের কপি, ছবি ও একজন গ্যারান্টর।”

তিনি আরও বলেন, “গাড়ির মূল্যের সমপরিমাণ ঋণ সাধারণত পাওয়া যায় না। কিছুটা কম পাওয়া যায়। তাই ঋণ পাওয়ার পর যতটুকু বাকি থাকবে সেই পরিমাণ টাকা ক্রেতাকে নগদ দিতে হবে। এরপর ব্যাংক পে অর্ডারের মাধ্যমে বিক্রেতাকে গাড়ির দাম পরিশোধ করবে। এই পর্যায়ে গাড়ির নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হবে।”

ক্রেতা এবং ব্যাংক উভয়ের নামে গাড়ির নিবন্ধন করা হবে। বর্তমানে ১ হাজার সিসি পর্যন্ত নিবন্ধন খরচ ৫৫ হাজার টাকা, ১৫শ’ সিসি পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং ২ হাজার সিসি পর্যন্ত খরচ ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। সঙ্গে প্রয়োজন হবে ‘ফার্স্ট পার্টি ইন্সুরেন্স” যার খরচ নির্ভর করবে গাড়ির দামের উপর। সেটা ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা হতে পারে।

আওয়াল বলেন, “নিবন্ধন করতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ দুদিন। এখানেই আমাদের কাজ শেষ।”

“ঋন পরিশোধের নিয়ম হল, যতগুলো কিস্তি থাকবে, ব্যাংককে ততগুলো খালি চেক সই করে জমা দিতে হবে গাড়ি কেনার সময়ই। ব্যাংক প্রতিমাসে তাতে কিস্তির অর্থের পরিমাণ বসিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা নিয়ে নেবে। টাকা কাটার সময় আকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না থাকলে ব্যাংক ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করবে। পরপর তিনটি কিস্তি অপরিশোধিত থাকলে এবং ঋণগ্রহীতার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলে ব্যাংক গাড়ির জব্দের প্রক্রিয়া শুরু করবে। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের কর্মীরা ওই গাড়িকে নজরদারিতে রাখবে এবং বিনা নোটিশে যে কোনো দিন গাড়ি মাঝ রাস্তা থেকেও জব্দ করে ফেলতে পারে।”

“কিস্তির টাকা পরিশোধে বিলম্ব হলে কিংবা আর্থিক সমস্যার ক্ষেত্রে ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, সময় চাইতে হবে। আবার গাড়ি জব্দ হয়ে গেলে দ্রুত ব্যাংকে গিয়ে কিস্তির বকেয়া টাকা ও জরিমানা পরিশোধ করলে গাড়ির আবার ফেরত পাওয়া যাবে। ঋণের টাকা পরিশোধ হয়ে গেলে ব্যাংক একটি ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ দেবে। এই কাগজ বিআরটিএ-তে জমা দিলে গাড়ি মালিকানা পুরোপুরি ক্রেতার নামে পরিবর্তীত হয়ে যাবে।” জানালেন এই গাড়ি বিক্রেতা।

ব্যাংক ছাড়াও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এমন একটি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন নিয়োজিত ছিলেন সাইফুল আনাম।

পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি জানান, “দেশে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদের মধ্যে যেগুলোর ‘রিটেইল ব্যাংকিং’ বা ‘কনজ্যুমার ব্যাংকিং’ বিভাগ রয়েছে, শুধু তারাই গাড়ি ঋণসহ অন্যান্য ব্যাক্তিগত ঋণ দিয়ে থাকেন। এদের মধ্যে লংকা বাংলা, আইডিএলসি, উত্তরা ফাইন্যান্স, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ইন্টারন্যাশনাল লিসিং, এফএএস ফাইন্যান্স, পিপলস লিসিং, ডেলটা ব্র্যাক হাউজিং ফাইন্যান্স ইত্যাদি শীর্ঘস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম।”

“এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ঋণ যোগ্যতার সীমাবদ্ধতা ব্যাংকের তুলনায় কিছুটা শিথিল। বেতনভুক্ত ঋণ প্রার্থীর নুন্যতম বেতন ২০ হাজার টাকা হলেই আবেদন করা যায়। ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে অনেক সময় প্রার্থীর চাকরির বয়স নুন্যতম দুতিন বছর হওয়া আবশ্যক থাকে, তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এক বছর হলেও আবেদন করা যাবে। ঋণের মেয়াদের ক্ষেত্রেও বাড়তি সুবিধা মিলতে পারে।”

“তবে এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নিতে হলে সুদ গুনতে হবে বেশি। আর যেখান থেকেই ঋণ নেওয়া হোক না কেনো, মেয়াদের প্রথম ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত ঋণ গ্রহীতা চাইলেও কিস্তির নির্ধারিত অর্থের বেশি অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন না।”

মনে রাখতে হবে ‘সেকেন্ড হ্যান্ড’ পুরাত গাড়ি কেনার জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ প্রদান করে না। আর কিনলেই তো হবে না, গাড়ির পালতেও রয়েছে খরচ।

তাই গাড়ির জন্য ঋণ নেওয়ার আগে সবদিক বিবেচনা করে নিন।

আরও পড়ুন