কালো বার্গারের সন্ধানে

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কালো মেয়ের কালো চোখের প্রশংসা করেছেন। আর এই দেশের তরুণ সমাজ এখন কালো বার্গারের স্বাদে হারাচ্ছেন।

মামুনুর রশীদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2017, 12:00 PM
Updated : 3 Oct 2017, 12:04 PM

কৃষ্ণকলি খাওয়া যায় না, চোখে দেখে সৌন্দর্য উপভোগ করতে হয়। আর কালো বার্গার চোখে দেখে চেখেও দেখা যায়।

এই বিশ্বে কালো বার্গার প্রথম ভূমিষ্ঠ হয় জাপানে। তবে সেটা তাদের ঐতিহ্যবাহী কোনো খাবার নয়। কালো বার্গারের আতুরঘর ছিল জাপানে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের ফাস্ট ফুড চেইন ‘বার্গার কিং’য়ের রান্নাঘর।

এই বিষয়ের উপর দি ডেইলি মেইল’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাপানে ‘বার্গার কিং’ কালো বার্গারের নাম দিয়েছে ‘কুরো’ বার্গার। জাপানি ভাষায় ‘কুরো’ মানে কালো। আর এই বার্গারের বান বা রুটি তারা তৈরি করেছে বাঁশ পোড়ানো কয়লার গুঁড়া ও ‘স্কু্ইড ইংক’ দিয়ে।

আমাদের দেশে বার্গার কিং’য়ে চারকোল বার্গার বিক্রি না হলেও থেমে থাকেননি স্থানীয় রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা। তবে ‘কুরো বার্গার’য়ের চিজ ও পেঁয়াজ কালো হলেও দেশের কালো বার্গারের রুটি বা বান শুধু কালো করেছেন তারা। আর ভোজনরসিক বাঙালিও সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়েছে পুরানো খাবারের নতুন রূপকে।

বার্গার কুইন: দেশে প্রথম কালো পাউরুটির বার্গার নিয়ে আসে এই রেস্তোরাঁট। কর্ণধার মোহাম্মদ মেহেদি সাজিদ চৌধুরী বলেন, “মালয়শিয়ায় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে এই চারকোল বার্গার চোখে পড়ে। সেখান থেকে চারকোল পাউডার কিনে এনে শুরু হয় চারকোল বার্গার তৈরির চেষ্টা। সেই চেষ্টার ফলাফল হিসেবেই চলতি বছরের জুন মাসে চালু করি বার্গার কুইন বাংলাদেশ।”

“বর্তমানে মোট চার ধরনের বার্গার তৈরি করছি আমরা, প্রতিটিরই আছে ছোট এবং বড় আকার। বার্গারের পাউরুটি আমরা নিজেরাই তৈরি করি। চারকোল বার্গারের দাম ৯৫ টাকা ও ১৯০ টাকা। এছাড়াও আছে ভেঙ্গাবয়েজ বার্গার ৫০ টাকা ও ১০০ টাকা, স্পাইস গার্লস বার্গার ৬০ টাকা ও ১২০ টাকা এবং বার্বি গার্লস বার্গার ৭০ টাকা ও ১৪০ টাকা।”

“এছাড়াও আছে কোল্ড কফি, দাম ৩০ টাকা ও ৫০ টাকা। এগুলোতে প্রচলিত রংয়ের রুটিই ব্যবহার করা হয়।”

বেইলি রোডে সিদ্ধেশ্বরী কালি মন্দিরের উল্টা দিকের গলিতে ইস্টার্ন প্যালেসের সামনে এই রেস্তোরাঁ খোলা থাকে দুপুর ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। বসার ব্যবস্থা আছে সর্বোচ্চ ১০ জনের, ওয়াইফাই নেই। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রচণ্ড ভিড় হয়। তাই লাইন ধরার মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে।

দ্য মিরোর: ধানমণ্ডি ৮ নম্বরের ব্রিজ পেরিয়ে শেখ জামাল মাঠের দিকে গেলে হাতের ডানে পড়বে এই রেস্তোরাঁ। এখানকার কালো বার্গারটির নাম ‘দ্য চারকোল বার্গার’, চিকেন প্যাটির এই বার্গারের দাম ২৪০ টাকা।

রেস্তোরাঁর একমাত্র কর্ণধার রাকিব আহমেদ বলেন, “এ বছরের ১০ জুন রেস্তোরাঁটি চালু করেছি। দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খাবার পরিবেশন করি আমরা। বসার ব্যবস্থা আছে ৭০ জনের। দুপুর ও রাতে ভিড় বেশি হয়। চারকোল বার্গার ছাড়াও আরও ছয় ধরনের বার্গার আছে এখানে, দাম ১৮০ টাকা থেকে ৩৮০ টাকা।”

“এছাড়াও আছে বিভিন্ন ধরনের স্যান্ডউইচ, সুপ, সালাদ, পিৎজা, পাস্তা, চপ সুই, পাদথাই ইত্যাদি। সেট মিল আছে ১০ ধরনের, যার মধ্যে আছে স্টেক, বার-বি-কিউ চিকেন, পেরি-পেরি চিকেন, ফিস অ্যান্ড চিপস ইত্যাদি। দাম ১৮০ টাকা থেকে ৪৮০ টাকা পর্যন্ত।”

ইন্সটাবাইট: খিলগাঁও তালতলাতে ইনফিটিনি শোরুমের উল্টোপাশের গলিতে ঢুকে হাতের ডানে পড়বে এই রেস্তোরাঁ।

অন্যতম কর্ণধার সালমান রিফাদ বলেন, “আমাদের রেস্তোরাঁর বয়স প্রায় এক বছর। দুপুর ১২টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত খাবার পরিবেশন করি আমরা। বসার ব্যবস্থা আছে ১৮ জনের, ওয়াইফাই আছে। বিকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভিড় থাকে।”

তিনি আরও বলেন, “চারকোল বার্গার পরিবেশন করছি ২৫ জুলাই থেকে। মুরগির মাংসের পুর দিয়ে তৈরি চারকোল বার্গারের দাম ১৮০ টাকা। আর গরুর মাংসের দুইটি প্যাটি দেওয়া চারকোল বার্গারের দাম ২৫০ টাকা। বার্গারের রুটি নেওয়া হয় কুইন্স বেকারি থেকে। এটি ছাড়া আরও ১২ ধরনের বার্গার বিক্রি করছি আমরা, দাম ১২০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত।”

কফি মেনিয়া:
রেস্তোরাঁটি মিরপুরের আইডিয়াল স্কুলের পাশে। এখানে চারকোল বার্গারের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডার্ক ডেভিল বার্গার’, দাম ১৩০ টাকা।

চাংক: ধানমণ্ডি ৫ নম্বর রোডে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সামনে এই রেস্তোরাঁ। এখানে মুরগির মাংসের চারকোল বার্গার পাবেন ২৪০ টাকায়।

পানা’স পানিনি: ধানমণ্ডির সীমান্ত স্কয়ারের ফুড কোর্টের একটি কার্ট এটি। এখানে চারকোল বার্গারের মূল্য ১৯৯ টাকা, নাম ব্ল্যাক হট চারকোল বার্গার।

আমেরিকান বার্গার: মোট ছয় ধরনের চারকোল বার্গার মিলবে এই রেস্তোরাঁয়। ‘বারকোনেটর’, ‘মাশরুম সুইস’ ও ‘পেপেরোনি ডিলাক্স’ নামের বার্গারগুলোর দাম ৩৫০ টাকা, ‘ডাবল বাইপাস’য়ের ৩১৫ টাকা, ‘নাগা চ্যালেঞ্জ’য়ের দাম ৩২০ টাকা এবং ‘বিফ সুপ্রিম ডিলাইট’য়ের দাম ৩৪৫ টাকা।

ব্ল্যাক বির্চ কিচেন অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট: নারায়নগঞ্জ চাসাড়ায় বাপ্পি চত্বরের রনদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ নম্বর উল্টোপাশে এই রেস্তোরাঁ। এখানে চারকোল বার্গারের দাম ১৫০ টাকা। চারকোল সাব স্যান্ডউইচও পাওয়া যায়।

কেউ রবীন্দ্রনাথকে পছন্দ করেন কেউ করেন না। তাই রবীঠাকুরের কালো হরিণ চোখে প্রশংসা অনেকের পছন্দ, কারো কাছে বেশি মিনমিনে লাগতেই পারে। তবে মুখে যদি বার্গারের ভিন্নস্বাদ নিতেই চান তাহলে একবার হলেও কালো বার্গার মুখে পুরে দেখুন। তারপর ভালোলাগা না লাগা পরের ব্যাপার।

ছবি: ফেইসবুক থেকে।