কারণ এই যুগে যারা অফিসের চেয়ার-টেবিলে কাজের জন্য আটকে থাকেন, তাদের অন্তত মানসিক প্রশান্তির জায়গা অনেকটাই কম থাকে।
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে গবেষণার ফলাফল থেকে জানানো হয়, যারা মানসিক চাপের মধ্যে কাজ করেন এবং কর্মক্ষেত্রে কাজ নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো হাত থাকে না, তাদের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রায় ২২ শতাংশ।
সেবাসংক্রান্ত কাজ যেমন রেস্তোরাঁর ওয়েইটার বা পরিবেশক কিংবা নার্সের কাজের চাপ প্রকৃতি-বিজ্ঞানী কিংবা স্থপতিদের তুলনায় বেশি। কারণ বিজ্ঞানি বা স্থাপতিরা নির্দেশনা দিতে পারে, বেশি সম্মান পায় এবং কাজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
তাই যাদের হাতে কাজ নিয়ন্ত্রণের কোনো ‘রিমোটকন্ট্রল’ নেই, তারা অন্তত ছুটির দিনগুলোতে কোনো কাজ না রেখে, আশপাশে কোথাও ঘুরে আসুন। কিংবা শুধুই ঘরে শুয়ে বসে অলস সময় কাটান বা হালকা পাতলা ব্যায়াম করুন। এতে অন্তত সামনের সপ্তাহে কাজের স্পৃহা ফিরে আসবে।
তবে মানসিক চাপের কাজ কিংবা চাকরি হারানোর শঙ্কায় বয়স বেড়ে যেতে পারে। আবার বিপরিত দিকও আছে।
মস্তিষ্কের বার্ধক্য: বিবাহ বিচ্ছেদ, সন্তানের ব্যাধি কিংবা মৃত্যু, চাকরি হারানো ইত্যাদি ঘটনা মস্তিষ্কের বয়স বাড়িয়ে দেয় কয়েক বছর। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে এমন ১ হাজার ৩২০ জন মানুষের মস্তিষ্কের চিন্তা ও স্মৃতিশক্তির জন্য দায়ী অংশ পরীক্ষা করেন গবেষকরা।
জানা যায়, প্রতিটি অভিজ্ঞতা মস্তিষ্কের বয়স বাড়িয়ে দেয় চার বছর পর্যন্ত।
সাইকেল চালানো: সাইকেল চালিয়ে অফিস যাওয়ার অভ্যাস পরিবেশ দূষণের হার ও শরীরের ওজন কমানোর পাশাপাশি মানসিক চাপ কমাতে এবং কাজের দক্ষতা বাড়াতে কার্যকর।
বিপরীত চিন্তা: মানসিক চাপযুক্ত কাজের আবার সুফলও আছে। বেশি মানসিক চাপগ্রস্ত কাজ আপনার দক্ষতা বাড়াবে।
কারণ গবেষকরা বলেন, “এমন কাজ আপনাকে সমস্যা সমাধানে আরও দক্ষ করে তুলবে, বাড়াবে কাজের স্পৃহা।”
কাজের চাপ কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়ায়, সতর্ক রাখে, দক্ষতা বাড়ায়।
ঘরে থেকে কাজ: ল্যাপটপ আর স্মার্টফোনের যুগে অনেকেই অফিসের কাজ বাসায় করার সুবিধা ভোগ করেন। তবে এই পন্থাতেও মানসিক চাপ অনুভূত হতে পারে।
১৫টি দেশে ইউনাইটেড নেশনস’য়ের করা গবেষণা মতে, ঘরে বসে কাজ করার কারণে রাস্তার যানজট থেকে হয়ত বেঁচে গেলেন, তবে তার বিনিময়ে কাজ করতে হবে দীর্ঘসময়, বাড়বে মানিসক চাপ ও ঘুমের সমস্যা।
দীর্ঘসময় অফিস করা: বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য দায়ী এই অভ্যাস। এতে চোখের সমস্যা হয়, হতে পারে ক্যান্সারও।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘসময় কাজ করার কারণে হৃদস্পন্দনের তাল অনিয়মিত হতে পারে।
ডাক্তরি ভাষায় একে বলা হয় ‘আট্রিয়াল ফিব্রিলেইশন’। পাশাপাশি স্ট্রোক ও হৃদযন্ত্রের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনেও এর ভূমিকা থাকতে পারে।
গবেষণা আরও জানায়, যারা সপ্তাহে ৩৫ থেকে ৪০ ঘণ্টা কাজ করেন তাদের তুলনায় যারা সপ্তাহে ৫৫ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় কাজ করেন তাদের ‘আট্রিয়াল ফিব্রিলেইশন’ হওয়ার সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ বেশি।
তাই উপরের বিষয়গুলো মাথায় রেখে অন্তত ছুটির দিনে সময় কাটান নির্ভাবনায়।
ছবি: রয়টার্স।