অতি প্রোটিনের বিড়ম্বনা

‘দুধ না খেলে হবে না ভালো ছেলে’ সঠিক কথা সুরে সুরে বলা হলেও মনে রাখতে হবে- ‘অতি সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট’। মানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রোটিন হতে পারে হিতে বিপরীত।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2017, 09:09 AM
Updated : 7 July 2017, 09:09 AM

বিশেষ করে আমিষজাতীয় খাবার থেকে পাওয়া প্রোটিন দেহে অতিরিক্তি হলে, সমস্যা করতে পারে।

খাদ্য ও পুষ্টিবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে, যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক সংগঠন ‘দি ন্যাশনাল একাডেমি অফ মেডিসিন’য়ের পরামর্শে তৈরি ‘ডায়েটারি রেফারেন্স ইনটেক (ডিআরআই)’ অনুযায়ী জানানো হয়, শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য চাই ০.৮ গ্রাম প্রোটিন।

এই হিসেব অনুসারে একজন গড়পড়তা পুরুষের চাই প্রায় ৫৬ গ্রাম আর একজন গড়পড়তা নারীর চাই প্রায় ৪৬ গ্রাম প্রোটিন। এর বেশি প্রোটিন গ্রহণ করলে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতায় বাধা পড়তে পারে।

এবার জেনে নিন শরীরে অতিরিক্ত প্রোটিনের ফলে কী কী সমস্যা হতে পারে।

বৃক্কের ঝুঁকি: আমিষ খেলে প্রোটিনের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে নাইট্রোজেনভিত্তিক উপজাত। যা শরীর থেকে বের করার কাজটি করে বৃক্ক। শারীরিক ওজন অনুযায়ী আমিষ খাওয়া হলে তার সঙ্গে আসা উপজাত মুত্রের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। তবে অতিরিক্ত আমিষ বৃক্কে উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে বৃক্ক নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

অন্ত্রের ঝুঁকি: খাদ্যাভ্যাসে যাদের কার্বোহাইড্রেইট বা শর্করার পরিমাণ কম তবে আমিষ বেশি- তাদের বেশিরভাগেরই পেট ফোলা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন। কারণ হল- শরীরে পর্যাপ্ত আঁশ না থাকায় হজমক্রিয়া ব্যাহত হয়ে অন্ত্রে রোগের সৃষ্টি হচ্ছে।

ওজন বৃদ্ধি: ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে উচ্চ-প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শের কথা শোনা যায়। তবে মনে রাখতে হবে, মাত্রাতিরিক্ত প্রতিটি জিনিসই ক্ষতিকর।

আমিষে ভরপুর খাদ্যাভ্যাসে ওজন সাময়িক কমলেও পরে ওজন বেড়ে যায়। সাত হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারীর উপর করা এক জরিপে দেখা যায়, আমিষ বেশি খায় এমন একজন মানুষের স্থূলাকার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আমিষ কম খায় এমন একজন তুলনায় ৯০ শতাংশ বেশি।

মুখে দুর্গন্ধ: কার্বোহাইড্রেইট কম আর আমিষ বেশি খেতে থাকলে শরীর এমন একটি পর্যায় চলে যায় যাকে বলে ‘কেটোসিস’। এই পরিস্থিতিতে শরীর চর্বি ভেঙে কর্মশক্তি উৎপাদন করে। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এটি উপকারী, তবে শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য নয়।

কারণ শরীর যখন চর্বি পোড়ায় তখন ‘কেটোনেস’ নামক রাসায়নিক উপাদান তৈরি হয়। যেকারণে যতই ব্রাশ, ফ্লস আর মাউথওয়াস ব্যবহার করা হোক না কেনো মুখের দুর্গন্ধ থাকবেই।

মন-মেজাজ খারাপ: মন ভালো করার হরমোনগুলো খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। এমন এক হরমোন হল ‘সেরোটনিন’, যা তৈরি করতে মস্তিষ্কের চাই কার্বোহাইড্রিইট।  তাই খাদ্যাভ্যাসে কার্বোহাইড্রেট কম থাকলে মন-মেজাজ হবে খিটখিটে, রগচটা ও হতাশাগ্রস্ত।

অস্ট্রেলিয়ান এক গবেষণায়, বাড়তি ওজনের প্রাপ্তবয়স্কের এক বছর ধরে নিম্ন কার্বোহাইড্রেট মাত্রার খ্যাদ্যাভ্যাস ধরে রেখে দেখা যায়, যারা বেশি কার্বোহাইড্রেইট খেয়েছে তাদের তুলনায় মেজাজ এদের বেশি রগচটা, যদিও তাদের ওজন কমেছে প্রায় একই পরিমাণ।  

তৃষ্ণা: উচ্চ আমিষযুক্ত খাবার তৃষ্ণা বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত আমিষের কারণে মৃদু পানিশূন্যতাও হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত আমিষ খেলে বা প্রোটিন শরীরে গেলে বৃক্ক প্রতিনিয়ত বাড়তি আমিষ ও নাইট্রোজেনজাত বর্জ্য অপসারণে ব্যস্ত থাকে। ফলে আমাদের ঘন ঘন প্রসাব হয় এবং পানি তৃষ্ণা লেগেই থাকে।

ছবি: রয়টার্স।