ময়নমনসিং শহর থেকে সময় লাগে মাত্র আধা ঘণ্টার মতো। আর ঢাকা থেকে সাকুল্যে চার ঘণ্টা। দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসা সম্ভব।
মুক্তাগাছার জমিদারির বিশাল অংশ ময়মনসিংহ শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এসব নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শশী লজ (বর্তমান মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ), লোহার কুঠির বা আলেকজান্ডার ক্যাসেল (বর্তমান টিচার্স ট্রেনিং কলেজ), সূর্যকান্ত হাসপাতাল( এসকে হাসপাতাল), রাজ রাজেশ্বরী পানির ট্যাংক, শিবমন্দির, বিদ্যাময়ী স্কুল ও ময়মনসিংহ টাউনহল।
একসঙ্গে এতগুলো অসাধারণ নিদর্শন ময়মনসিংহ ছাড়া দেশের আর কোথাও নাই। চলুন তাহলে ঘুরে আসি বৃহত্তর ময়মনসিংহ শহর তথা মুক্তাগাছার জমিদারি থেকে।
ঢাকা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত যানজটে সবকিছু কেমন অস্থির মনে হবে।
ন্যাশনালপার্ক শুরু হতেই অনুভূতি অন্য রকম। এখানকার সবুজ মনে অদ্ভূদ অনুভূতি তৈরি করবে। আগের সেই বিরম্বনা নেই, রাস্তা-ঘাট মাঝেমধ্যেই না, প্রায় পুরোটাই ভাঙাচোড়া ছিল এক সময়। দীর্ঘদিন রাস্তা সম্প্রসারিত করার কাজ চলেছে এখানে, এখন চকচকে ঝকঝকে রাস্তা।
ঢাকা থেকে রওনা হয়ে গাজীপুর চৌরাস্তার যানজটে না আটকালে ময়মনসিং শহরে চলে আসতে তিন ঘন্টার বেশি সময় লাগার কথা না, আমাদেরও লাগেনি।
এভাবেই পুকুর ডোবা, ধানক্ষেত আর খোলা প্রান্তরের সবুজে চোখ মেলে দেখে দেখে এক সময় চলে আসবেন মুক্তাগাছা। তারপর ডান-বাম করে পেয়ে যাবেন মুক্তাগাছা রাজবাড়ি।
মুক্তাগাছার জমিদারির মোট অংশ ১৬টি। অর্থাৎ ১৬জন জমিদার এখানে শাসন করতেন। জমিদারা আচার্য্য চৌধুরী যার গোড়াপত্তন করেন।
জমিদার আচার্য্য চৌধুরীর প্রথম সন্তান হচ্ছেন জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য্য। যিনি মুক্তাগাছা রাজবাড়িটি নির্মাণ করেন।
প্রায় ১০০ একর জায়গার ওপর নির্মিত এই রাজবাড়ি প্রাচীন স্থাপনা শৈলীর অনন্য নিদর্শন। বর্তমানে রাজবাড়িটি প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের অধীন।
দৃষ্টিনন্দন রাজ রাজেশ্বরী মন্দিরটির দেখা পাবেন রাজবাড়ি প্রবেশ মুখেই। রাজকোষাগার, টিন আর কাঠের নির্মিত অসাধারণ এক দুইতলা রাজপ্রাসাদ, রানীর অন্দরমহল।
রাজবাড়ির পেছনে রয়েছে একটি গোপন সূরঙ্গ। মুক্তাগাছা রাজবাড়ির পাশেই আরও দুটি রাজবাড়ি আছে। শহীদ স্মৃতি ডিগ্রী কলেজ- এর মধ্যে একটি, অন্য বাড়িটি ছিল সে সময়কার হাতিশালা। বর্তমানে যা আমর্ড ব্যাটেলিয়ান পুলিশ হেডকোয়ার্টার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ময়মনসিংহ শহরে
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুক্তাগাছা জমিদারির অন্যতম নিদর্শনগুলোর কথা আগেই বলেছি। শশীলজের কথা আলাদা করে বলতেই হয়।
একটা শহরে একসঙ্গে এত্তগুলো প্রাচীন স্থাপনা ভাবতেই অবাক হতে হয়!
প্রয়োজনীয় তথ্য
ঢাকা থেকে সরাসরি ময়মনসিংহ বাস সার্ভিস সারাদিন চলাচল। মহাখালি থেকে চলা সেসব বাসের মধ্যে অন্যতম হল নিরাপদ, আলম এশিয়া, শামীম এন্টারপ্রাইজ, এনা এবং সৌখিন।
ময়মনসিংহ থেকে মুক্তাগাছা বাস সার্ভিস রয়েছে। চাইলে মুমিনুন্নেসা মহিলা কলেজ মোড় থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় চড়েও মুক্তাগাছা যেতে পারেন। মাথা পিছু ভাড়া পড়বে ২০ টাকার মতো।
খাবার নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। প্রেসক্লাব ক্যান্টিনের মোরগ পোলাওয়ের খুব নামডাক। আর আছে হোটেল ধানসিঁড়ি ও হোটেল সারিন্দা।
সেদিক থেকে মুক্তাগাছা অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও মুক্তাগাছার মণ্ডার সুখ্যাতি সারা দেশজুড়ে। পেট পুরে খেয়ে আসুন সঙ্গে নিয়েও আসুন!