জমিদারির শহরে

ময়মনসিং শহর থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে মুক্তাগাছা রাজবাড়ি। ছুটিছাটায় কোথাও বেড়াতে মন চাইলে একদিনের জন্য বেড়ানোর সুযোগ থাকলে চলে যেতে পারেন।

ফারুখ আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2017, 05:53 AM
Updated : 1 July 2017, 09:40 AM

ময়নমনসিং শহর থেকে সময় লাগে মাত্র আধা ঘণ্টার মতো। আর ঢাকা থেকে সাকুল্যে চার ঘণ্টা। দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসা সম্ভব।

মুক্তাগাছার জমিদারির বিশাল অংশ ময়মনসিংহ শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এসব নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শশী লজ (বর্তমান মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ), লোহার কুঠির বা আলেকজান্ডার ক্যাসেল (বর্তমান টিচার্স ট্রেনিং কলেজ), সূর্যকান্ত হাসপাতাল( এসকে হাসপাতাল), রাজ রাজেশ্বরী পানির ট্যাংক, শিবমন্দির, বিদ্যাময়ী স্কুল ও ময়মনসিংহ টাউনহল।

তাছাড়া ময়মনসিংহ শহরের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালা, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ যাদুঘর, নজরুল স্মৃতি কেন্দ্র এবং ব্রহ্মপুত্র নদ।

একসঙ্গে এতগুলো অসাধারণ নিদর্শন ময়মনসিংহ ছাড়া দেশের আর কোথাও নাই। চলুন তাহলে ঘুরে আসি বৃহত্তর ময়মনসিংহ শহর তথা মুক্তাগাছার জমিদারি থেকে।

যাত্রা শুরু

ঢাকা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত যানজটে সবকিছু কেমন অস্থির মনে হবে।

ন্যাশনালপার্ক শুরু হতেই অনুভূতি অন্য রকম। এখানকার সবুজ মনে অদ্ভূদ অনুভূতি তৈরি করবে। আগের সেই বিরম্বনা নেই, রাস্তা-ঘাট মাঝেমধ্যেই না, প্রায় পুরোটাই ভাঙাচোড়া ছিল এক সময়। দীর্ঘদিন রাস্তা সম্প্রসারিত করার কাজ চলেছে এখানে, এখন চকচকে ঝকঝকে রাস্তা।

ঢাকা থেকে রওনা হয়ে গাজীপুর চৌরাস্তার যানজটে না আটকালে ময়মনসিং শহরে চলে আসতে তিন ঘন্টার বেশি সময় লাগার কথা না, আমাদেরও লাগেনি।

ময়মনসিং শহরে একটু যাত্রা বিরতি দিয়ে চলুন চলে যাই মুক্তাগাছা। মুক্তাগাছার পথে নামতেই আবার সেই অদ্ভূদ অনুভূতি। এখানকার রাস্তাঘাট দারুণ। পথের দুপাশেই সবুজ। মোটেই অচেনা কোনও দৃশ্য নয়। এ যেন একখণ্ড বাংলাদেশ।

এভাবেই পুকুর ডোবা, ধানক্ষেত আর খোলা প্রান্তরের সবুজে চোখ মেলে দেখে দেখে এক সময় চলে আসবেন মুক্তাগাছা। তারপর ডান-বাম করে পেয়ে যাবেন মুক্তাগাছা রাজবাড়ি। 

মুক্তাগাছা রাজবাড়ি

মুক্তাগাছার জমিদারির মোট অংশ ১৬টি। অর্থাৎ ১৬জন জমিদার এখানে শাসন করতেন। জমিদারা আচার্য্য চৌধুরী যার গোড়াপত্তন করেন।

জমিদার আচার্য্য চৌধুরীর প্রথম সন্তান হচ্ছেন জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য্য। যিনি মুক্তাগাছা রাজবাড়িটি নির্মাণ করেন।

বাড়ির বেশ মুখে রয়েছে বিশাল ফটক। ফটক পেরিয়ে ভেতরে গেলে জীর্ন প্রায় বাড়িটির পরতে পরতে সৌন্দর্যে চোখে জুড়িয়ে যাবে।

প্রায় ১০০ একর জায়গার ওপর নির্মিত এই রাজবাড়ি প্রাচীন স্থাপনা শৈলীর অনন্য নিদর্শন। বর্তমানে রাজবাড়িটি প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের অধীন।

বাড়িরটি ভেতরে গেলে দেখা পাবেন একতলা একটি ভবনের। লোহার পাত আর কাঠের পাটাতন দিয়ে করা ছাদ- চমৎকার। তাছাড়া লোহার পাতের নানা রকম নকশা এ বাড়ির চারপাশে দৃষ্টি এড়াবেনা। এখানে রয়েছে একটি রঙ্গমঞ্চ।

দৃষ্টিনন্দন রাজ রাজেশ্বরী মন্দিরটির দেখা পাবেন রাজবাড়ি প্রবেশ মুখেই। রাজকোষাগার, টিন আর কাঠের নির্মিত অসাধারণ এক দুইতলা রাজপ্রাসাদ, রানীর অন্দরমহল।

এখানকার লম্বা লম্বা করিডোরেও আছে ভীষণ মুগ্ধতা। তাছাড়া আরও আছে লাইব্রেরি, দরবার হল, কাচারিঘর, লক্ষীপূজা আর দূর্গাপূজার ঘর।

রাজবাড়ির পেছনে রয়েছে একটি গোপন সূরঙ্গ। মুক্তাগাছা রাজবাড়ির পাশেই আরও দুটি রাজবাড়ি আছে। শহীদ স্মৃতি ডিগ্রী কলেজ- এর মধ্যে একটি, অন্য বাড়িটি ছিল সে সময়কার হাতিশালা। বর্তমানে যা আমর্ড ব্যাটেলিয়ান পুলিশ হেডকোয়ার্টার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

দেখা শেষ হল মুক্তাগাছা রাজবাড়ি। এবার মুক্তাগাছার প্রসিদ্ধ গোপাল পালের মণ্ডার দোকান ঘুরে সঙ্গে মণ্ডা খেয়ে আর বাড়ির জন্য মণ্ডা নিয়ে চলুন ময়মনসিংহ অভিমূখে যাত্রা করি। 

ময়মনসিংহ শহরে

ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুক্তাগাছা জমিদারির অন্যতম নিদর্শনগুলোর কথা আগেই বলেছি। শশীলজের কথা আলাদা করে বলতেই হয়।

শশীলজে প্রয়াত নাট্যকার ও লেখক হুমায়ূন আহমেদ রচিত ধারাবাহিক নাটক অয়োম
য়’য়ে
র শুটিং হয়েছিল। তাছাড়া এখানে রয়েছে স্থানীয়দের কাছে পরিচিত লোহার কুঠির বা আলেকজান্ডার ক্যাসেল।
কথিত আছে কবিগুরু জমিদার শশীকান্ত চৌধুরীর আমন্ত্রণে ময়মনসিংহ এসে সূর্যকান্ত চৌধুরীর বিখ্যাত বাগান বাড়ি আলেকজান্ডার ক্যাসেলে অবস্থান করেছিলেন। এখানে আরও আছে সূর্যকান্ত হাসপাতাল, রাজ রাজেশ্বরী পানির ট্যাংক, শিবমন্দির, মহাকালি স্কুল আর বিদ্যাময়ি বিদ্যালয়, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালা এবং ব্রহ্মপুত্র নদ।
ব্রহ্মপুত্র নদ নদে নৌকা ভ্রমণ দারুণ আনন্দের। সুতরাং তাড়াহুড়া না করে একদিন সময় নিয়ে এসব স্থাপনা বা প্রাচীন নিদর্শন দেখে তবেই ফিরতি পথ ধরুন।

একটা শহরে একসঙ্গে এত্তগুলো প্রাচীন স্থাপনা ভাবতেই অবাক হতে হয়!

প্রয়োজনীয় তথ্য

ঢাকা থেকে সরাসরি ময়মনসিংহ বাস সার্ভিস সারাদিন চলাচল। মহাখালি থেকে চলা সেসব বাসের মধ্যে অন্যতম হল নিরাপদ, আলম এশিয়া, শামীম এন্টারপ্রাইজ, এনা এবং সৌখিন।

ভাড়া এসি ৩৭০ টাকা, নন এসি ২৫০টাকা।

ময়মনসিংহ থেকে মুক্তাগাছা বাস সার্ভিস রয়েছে। চাইলে মুমিনুন্নেসা মহিলা কলেজ মোড় থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় চড়েও মুক্তাগাছা যেতে পারেন। মাথা পিছু ভাড়া পড়বে ২০ টাকার মতো।

ময়মনসিংহ-মুক্তাগাছা একদিনে ভ্রমণ সারতে চাইলে নিজস্ব বাহন ভালো। আর সময় নিয়ে গেলে ময়মনসিংহ শহরে থাকার ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমির ইন্টারন্যাশনাল এবং হোটেল মুস্তাফিজ’য়ের ওপর ভরসা রাখা যায়।

খাবার নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। প্রেসক্লাব ক্যান্টিনের মোরগ পোলাওয়ের খুব নামডাক। আর আছে হোটেল ধানসিঁড়ি ও হোটেল সারিন্দা।

ময়মনসিংহ শহরে যাবেন আর বিখ্যাত মুকুল ভাইয়ের চায়ের দোকান ঢুঁ মারবেন না তাকি করে হয়। মুকুল ভাইয়ের চা, সিঙ্গারা আর পুরি দারুণ মুখরোচক।

সেদিক থেকে মুক্তাগাছা অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও মুক্তাগাছার মণ্ডার সুখ্যাতি সারা দেশজুড়ে। পেট পুরে খেয়ে আসুন সঙ্গে নিয়েও আসুন!