ছয়দিন নেপাল ছিলাম। বারবারই মনে হয়েছে ছোট্ট, অসাধারণ, কিন্তু ছিমছাম খুব সুন্দর।
কথা ছিল অনার্সে ভালো রেজাল্ট করলে দেশের বাইরে ঘুরতে যেতে দেবে। তবে অনার্সের রেজাল্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সব মিলে ভুলে বসেছিলাম নেপাল ভ্রমণের কথা। এ বছরের মে মাসে কথায় কথায় মা নিজেই আমার নেপাল ভ্রমণের কথা মনে করিয়ে দিলেন। শর্ত একটাই ছোটবোন হাসবুন তালুকদার বুশরাকেও সঙ্গে নিতে হবে।
একদিন টিকিট কাটা হল, তারপর উড়াল।
কাঠমান্ডুর থামেল দারুণ জমজমাট এলাকা। বাজার, দোকান, ইন্টারনেট ক্যাফে, এটিএম, রেস্তোরাঁ- কি নেই এখানে। পরদিন পোখরা যাওয়ার পরিকল্পনা করে ব্যাকপ্যাক হোটেল কক্ষে রেখে থামেলের আশপাশটা ঘুরে দেখতে বের হই।
সেটা এই মাসের ১১ তারিখের কথা। পরদিন ১২ জুন সকালে গেস্ট হাউজের গাড়ি আমাদের বিমান বন্দর পৌঁছে দেয়। এবার আমি আর বুশরা পোখরার উদ্দেশ্যে উড়াল দেই।
আমরাও পোখরা এসেছি প্যারাগ্লাইডিং’য়ের উদ্দেশ্যে। পোখরা আমরা দুইদিন ছিলাম। পোখরার পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ, বিশাল সব ঝাউবন আর চিকন সড়ক অসাধারণ। প্রথমদিন আমাদের কেটেছে এভারেস্ট মিউজিয়াম, ডেভিড ফলস, গুপ্তেস্বর মহাদেব গুহা আর বুদ্ধাস্তুপ দেখে।
তবে বুশরা অলসতায় বুদ্ধাস্তুপের চারশ সিঁড়ি পাড়ি দিতে পারিনি এই মনোকষ্ট পোড়াবে অনেকদিন। ঠিক একইভাবে পরদিন ভোরে ‘মাচ্ছেপুছরে’ বা ‘ফিশটেইল’ থেকে সূর্যোদয় দেখার আনন্দ আমৃত্যু আমাদের উচ্ছ্বাসে ভাসাবে।
এবার প্যারাগ্লাইডিং। সকাল সাড়ে ৯টা, ১১টা ও দুপুর ২টা প্যারাগ্লাইডিং’য়ের সময়। সূর্যোদয় দেখে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে সকাল দশটায় হই প্যারাগ্লাইডিং জন্য। বুশরাতো শুরতেই বমি করে বসে, সে বমি তার আকাশে উড়েও থামেনি। আর আমার কেমন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল।
যখন আকাশে উড়লাম তখন কেমন নেশায় পেয়ে বসল। মেঘেদের সঙ্গে উড়ে বেড়ানো ছিল অসাধারণ অভিজ্ঞতা। হিমালয়, অন্নপূর্না মাউন্টেন রেঞ্জ সব উড়ে উড়ে দেখছিলাম। নিচে নামার ইচ্ছে ছিল না একদম। তবে এক সময় নামতে হয়, নেমে আসি আকাশে ওড়ার আনন্দ নিয়ে।
শুরুতেই চলে যাই গৌরিঘাট। এখানে পশুবতি মন্দির দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। বেশি ভালোলেগেছিল এখানে বসানো পিতলের তৈরি ‘নাদিয়া’ নামের গরুটি। মন্দির ঘুরে দেখি। সেখান থেকে আমাদের গন্তব্য নাগরকোট। তারপর ভক্তপুর।
এখানকার রাজবাড়ি, দরবার স্কয়ার, পুরানো দালানকোঠা অতীতে টেনে নিয়ে যায়। বিশাল সব পাথরের মূর্তি অসাধারণ।
এরপর পাটান দরবার স্কয়ার। যার পুরোটাই দেখতে অনেকটা ভক্তপুর স্কয়ারের মতোই। তার সয়াম্ভুনাথ স্তুপ। থামেল ফিরে আসি বিকেল চারটায়। সেই বিকেলে হোটেলে আল-মদীনাতে দুপুরের খাবার খেয়ে আবার কাঠমান্ডু গেস্ট হাউজে আশ্রয় নেই!
প্রয়োজনীয় তথ্য
ত্রিভুবন বিমান বন্দর থেকে বের হয়েই থাকার জন্য মোটামুটি মানের হোটেল পাওয়া যায়। অন্যতম এভারেস্ট ভিউ এবং হোটেল হিমালয়। খরচ প্রতি রাত ৮শ’ থেকে ১ হাজার ভারতীয় রুপি।
থামেলে কাঠমান্ডু গেস্ট হাউস বেশ ভালো। পাশাপাশি আরও অনেক হোটেল আছে। খরচ ২ হাজার ৫শ’ থেকে ৫ হাজার ভারতীয় রূপি।
আমরা কাঠমান্ডু থেকে বিমানে পোখরা গিয়েছিলাম। চাইলে গাড়ি ভাড়া করেও যাওয়া যায়। ভাড়া ৭ হাজার থেকে ১২ হাজার নেপালি রুপিয়া।
পোখারায় অনেক হোটেল। পছন্দ মতো একটায় উঠে যান। ফ্লাইট খরচ ৫০ ডলার প্রতিজন।
প্যারাগ্লাইডিং’য়ের সময় সকাল ৯টা, সকাল ১১টা ও দুপুর ১টা। খরচ প্রতিজন ১২ হাজার নেপালি রুপি। যা কিনা মে মাস পর্যন্ত ৫ হাজার নেপালি রুপি ছিল। কেউ ভারতীয় রুপি দিতে চাইলে প্যারাগ্লাইডিং’য়ের খরচ পড়বে ৭ হাজার ভারতীয় রুপি।
এখনই নেপাল বেড়ানোর মোক্ষম সময়। যদিও সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি সময়টুকু নেপালিরা মনে করে বেড়ানোর পিক সিজন। তবে ঠাণ্ডা থাকে অতিরিক্ত। আমাদের জন্য এই সময়ই ভালো।