ভগ্ন হৃদয় জোড়া দিন

হৃদয় কাদামাটির কোনো মূর্তি নয় আঘাত দিলে ভেঙে যাবে, মন উড়ন্ত কোনো বেলুন নয় হুল ফোটালেই চুপসে যাবে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 June 2017, 10:51 AM
Updated : 12 June 2017, 12:03 PM

সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া, মনের মানুষ ছেড়ে চলে যাওয়া, ভঙ্গ হৃদয়- এরকম ঘটনা প্রায় সবার জীবনেই ঘটে। আর তখন মনে হয় ‘নিঃস্ব’, পৃথিবীটা আমার নয়।

মানসিকস্বাস্থ্য-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে কানাডার অনলাইন বাজারজাতকরণ বিষয়ক লেখক লোরেন কোউটুরিয়ের নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ‘সম্পর্ক ভেঙে’ যাওয়ার সময়ে করণীয় বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, “আমি মার্কেটিংয়ের ছাত্র হলেও মানুষের মন বোঝা ও নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে অনেক কিছু শিখেছি। এবং এখন আমি ভালো আছি। ‘সম্পর্ক’ ভেঙে যাওয়ার সময়ে মনে হয় ‘এই পৃথিবীতে আমি একা। আমার কেউ নেই।’ সত্যি বলতে অন্ধকার গুহার শেষ প্রান্তে যেমন আলোর রেখা দেখা যায়, মেঘের পরে যেমন সূর্যের হাসি হাসে, তেমনে জীবনের কোনো না কোনো বাঁকে এক বা একাধীক মানুষ পাশে এসে দাঁড়ায়।”

তাই তাড়াহুড়া না করে নিজেকে গুছিয়ে নিন। আর এজন্য নিচের বিষয়গুলো মাথায় রাখুন।

সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করুন: সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরপর যে কোনো প্রকার মোবাইল মেসেজ, ই-মেইল, কারও সঙ্গে দেখা করা থেকে বিরত থাকুন। এমনকি কয়েকদিনের জন্য ফেইসবুক বন্ধ করে দিন। কারণ এইরকম আঘাতের সময় কোনো রকম ভালো কথা হয়ত ভালো লাগবে না। এমনকি সুন্দর কথা থেকেও হতে পারে মেজাজ খারাপ। হতে পারে ঝগড়া। যা বাড়াতে পারে মনের চাপ।

যা করতে পারেন- প্রিয় বন্ধু যারা সত্যি আপনাকে চেনে তাদের ফোন নম্বরের তালিকা করে রাখুন। যখন ‘প্রাক্তন’কে ফোন বা মেসেজ করে পুনরায় সম্পর্ক করার জন্য অনুরোধ করার ইচ্ছে জাগবে, তখন বন্ধুদের ফোন দিয়ে কথা বলুন।

‘প্রাক্তন’য়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার ইচ্ছা অবদমন করতে পারে এরকম কিছু করুন। যেমন- পছন্দের ছবি দেখতে পারেন। বা ঘুরতে পারেন মার্কেটে।

আবেগ বের করে দিন: চেপে রাখার দরকার নেই। বরং ‘হাউমাউ’ করে কাঁদুন। যতক্ষণ না মনের ভার হালকা হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত চোখের পানি নাকের পানি এক করে ফেলুন।

যা করতে পারেন- মন খারাপ করা গান শুনতে পারেন। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে এই ধরনের সংগীত উল্টা মন ভালো করে। নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নেতিবাচক মনোভাব।

বাস্তবতা মেনে নিন: অন্তত এই সময়ের জন্য! ‘সম্পর্ক শেষ’ বিষয়টির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সময় লাগে। ‘প্রাক্তন’ থেকে যত দূরে থাকবেন তত তাড়াতাড়ি নিজেকে পরিস্থিতি মেনে নিতে পারবেন। নিজের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করুন। তারপরও যদি সম্পর্ক ভাঙায় মন সায় না দেয় তো বেশি ভাবতে যাবেন না।

যা করতে পারেন- নিজেকে বোঝান এই সম্পর্ক শেষ। এখন সময় সামনে বাড়ার।

‘প্রাক্তন’য়ের দেওয়া সমস্ত উপহার বা সামগ্রী বা ছবি ফেলে দিন। বা চোখের সামনে থেকে সরিয়ে ফেলুন, যাতে সেগুলো দেখলে মনে না পড়ে।

পরিবার বা বন্ধুর সঙ্গে আলাপ করুন। এই অবস্থায় মুদ্রার অন্য পিঠ দেখার মতো মানসিকতা থাকে না।

নিজেকে খুঁজুন: সম্পর্কের মধ্যে থাকলে নিজের অনেক জিনিস, অনেক শখ পূরণ করা হয় না। এই সুযোগে নিজের আনন্দের কাজগুলো করে ফেলুন।

যা করতে পারেন- ‍নিজেকে প্রশ্ন করুন। গভীরভাবে ভেবে বের করুন আপনি সত্যি কী করতে ভালোবাসেন?

যেসব প্রশ্ন করতে পারেন- ১. যদি নিজেকে ভালোবাসা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হয়, তবে এখন যা করছি তা কি ঠিক? ২. নিজের ক্ষেত্রে বেশি মূল্যায়ন করি কোনটা? ৩. ‘সম্পর্ক’ হওয়ার আগে আমার জীবন কেমন ছিল? ৪. জীবনে কী পেতে চাই এবং কীভাবে? ৫. আমার কোনো বিষয়টা সবচেয়ে বেশি উন্নত করা প্রয়োজন।

নিজেকে খুঁজে বের করা সত্যি কঠিন। কারণ বেশিরভাগ সময় আমরা নিজেদের নিয়ে ভাবনাচিন্তা কম করি। তাই ধৈর্য্য নিয়ে কাজটা করতে হবে।

মজা করুন: যখন খাঁটিভাবেই আবিষ্কার করবেন আগের মতো মজা করা সম্ভব তখন বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। বেড়াতে যান তাদের সঙ্গে। অথবা আড্ডা দেওয়া শুরু করুন।

যা করতে পারেন- একা করতে চেয়েছেন এরকম নতুন এবং রোমাঞ্চকর কিছু করুন।

পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে ভালো সময় কাটান।

পুরানো হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

ভালো কোনো অভ্যাস গড়ে তুলুন। সবচেয়ে ভালো হয় নতুন কোনো ভাষা শিখলে।

নিজের ভাবনাচিন্তায় মনোযোগ দিন: যখন ভাবছেন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন তখন হয়ত মাঝেমধ্যে প্রাক্তনের কথা মনে পড়ে যাবে। বা আনন্দঘন কোনো আড্ডায় হঠাৎ ভেসে উঠতে পারে প্রাক্তনের সঙ্গে কাটানো কোনো ঘটনা। - এরকম হলে মস্তিষ্ককে তার কাজ করতে দিন। সে এগুলো মুছে ফেলায় ব্যস্ত। তাই মাঝে মাঝে টুকরা ঘটনা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। জোর করে এই সংশ্লিষ্ট কোনো ঘটনা ভাবতে যাবেন না।

যা করতে পারেন- উত্তেজনা বাড়াতে পারে এরকম বিষয় মাথা থেকে ঝেরে ফেলুন।

নিজের অনুভূতি থেকে পালানোর চেষ্টা করবেন না। বরং মুখোমুখি হন। চিন্তাভাবনা-গুলো লিখে রাখুন। যত বেশি লিখবেন ততবেশি আবেগের গতি ধরতে পারবেন এবং সেই হিসেবে নিয়ন্ত্রণও বাড়াতে পারবেন।

একাকিত্বের সৌন্দর্য বুঝুন: এবং শিগগিরই কোনো সম্পর্কে জড়ানো থেকে দূরে থাকুন। কারণ হঠাৎ করে কোনো সম্পর্ক তৈরি হলে সেটাও ভেঙে যেতে পারে। কিংবা ‘প্রাক্তন’য়ের ঘটনার সঙ্গে বর্তমান মিলিয়ে ফেলতে পারেন। বরং একা থেকে আনন্দ উপভোগ করুন। তারপর অনেক পরে যদি মনে হয় সম্পর্ক করতে পারেন তখন এই ব্যাপারে বাড়তি পদক্ষেপ নিন।

যা করতে পারেন- নিজেকে জিজ্ঞেস করুন কী ধরনের সম্পর্ক চান? কোনো সম্পর্কে জড়ানোর আগে নিজের চাহিদাগুলো বোঝার চেষ্টা করুন। এগুলো আপনার পুনরায় ‘হার্ট ব্রেক’ হওয়া থেকে রক্ষা করবে।

যখন নিজেকে তৈরি মনে হবে তখন নতুন মানুষের সঙ্গে মিশুন। যদি মনে হয় পছন্দ হচ্ছে তাবে তাদের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটান। তারপর ভেবে চিন্তে সম্পর্কে জড়ান।

সচেতন জীবন গড়ুন: ধীরে ধীরে নিজের জীবন গড়ে তুলুন। যত জটিলতাই আসুক না কেনো মন যাতে শান্ত রাখতে পারেন সেই চেষ্টা করে যান।

যা করতে পারেন- ঘুমাতে যাওয়ার আগে ধ্যান করুন। চুপচাপ বসে চোখ বন্ধ করে ধীরে শ্বাসপ্রস্বাস নিন। আর মন থেকে সমস্ত ভাবনা দূরে করে দিতে থাকুন। এতে অন্তত ঘুমটা ভালো হবে।

ছবি: রয়টার্স।