পূর্ণিমায় জ্যোৎস্নাবাড়ি

চারপাশে পাহাড় মাঝের উপত্যকায় ছোট্ট কুটির। সেখানে জোছনা কিংবা অমাবস্যায় রাত কাটাতে হলে যেতে হবে চট্টগ্রাম হয়ে মাটিরাঙ্গায়।

সমির মল্লিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2017, 12:28 PM
Updated : 12 June 2017, 12:21 PM

জোছনা না থাকলে বোধহয় পৃথিবী তার অর্ধেক সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হত।

নিস্তব্ধ পাহাড়ি কুটিরে একটা রাত কাটানোর স্বপ্ন দেখছিলাম অনেকদিন থেকে। মে মাসের ঝাঁঝালো একদুপুরে এমন সুযোগ পেয়ে গেলাম। ওই সময়ে পাহাড়ে বৃষ্টিবাহী মেঘের আনাগোনাও শুরু হওয়াতে এই সময়টাকেই বেছে নিলাম।

শান্তি পরিবহনে শান্তির ভাতঘুম দিতে দিতে যাত্রা শুরুর প্রস্তুতি নিলাম। খরতাপে ক্লান্ত শহর পেরিয়ে গেলাম দ্রুত। সূর্য তখন পাটে যেতে বসেছে। গোধূলির সোনারঙা রোদে উজ্জ্বল পথের দুপাশের বিস্তৃত ধানক্ষেত। এরকম গোধূলিতে বাসের চাকা নষ্ট! ঠিক করার জন্য দাঁড় করালো পথের পাশে। শাপে বর হল যেন!
বাস থেকে নেমে অপূর্ব প্রকৃতি দেখে প্রাণ ভরে শ্বাস নিলাম। তারপর গোগ্রাসে চোখে মেখে নিলাম গোধূলির সোনালি মায়া। অদূরে গ্রাম্য ঝুপড়িতে চা খেয়ে আবার যাত্রা শুরু। মাটিরাঙা পৌঁছালাম প্রায় রাত আটটায়। এখান থেকে এরপরের বাহন সিএনজি চালিত অটোরিক্সা। অটোরিক্সার হেডলাইটের আলোতে দেখছি সবুজ বনানী কেটে কেটে প্রবেশ করছি গহীনে।
ত্রিশ মিনিটের যাত্রা শেষ হলো যখন তখন প্রকৃতির মোহনীয় অভ্যর্থনা দেখে মুগ্দ্ধ হলাম। দেখি ঘাসের বুকে আলোর পাখি জোনাকি তারার চাদর বিছিয়ে রেখেছে। চোখ তুলে তাকালাম পাহাড়ের দিকে। অসংখ্য তারকাখচিত আকাশে যেন নক্ষত্রের রাত। এমন ভয়াবহ সৌন্দর্যের সামনে দাঁড়ালে বুকে ধাক্কা লাগে। আমি তারার আলোয় উঠতে লাগলাম পাহাড়ি পথ বেয়ে। এ যেন পথ নয়, এ পথ যেন ছায়াপথের, যেন মহাকাশের-মহাকালেরও।
জ্যোৎস্না কুটিরে পা রাখলাম। কত বিচিত্র সব পোকামাকড়ের শব্দ। আমি যেন অন্য কোনো পৃথিবীতে এলাম। এত রকম শব্দ, এত রকম বিচিত্র গন্ধ! আকাশে মেঘের খেলা। কখনও ঢেকে দেয় নক্ষত্ররাজিকে আবার পরক্ষণেই তারা জোর করে উঁকি দেয়।

এই অদ্ভুত নিস্তব্ধ রাত্রিতে শিশিরের গন্ধ, আরও নানান বৃক্ষরাজির গন্ধ নিচ্ছিলাম প্রাণভরে। দীর্ঘ রাত বসে থাকলাম মন্ত্রমুগ্ধের মতো।

সতর্কীকরণ:
এখানে মিলবেনা বিদ্যুতের সুবিধা, এসির ঠাণ্ডা হাওয়া, ফ্রিজের শীতল পানি। বরং মিলবে সৌর বিদ্যুত, কুয়ার ঠাণ্ডা জল, সারিবদ্ধ বৃক্ষের ছায়া আর শরীর জুড়ানো বাতাস, পাখিদের গান, লেকের তাজা মাছ, বাগানের ফল-সবজি। নাগরিক জীবন এখানে বেমানান। প্রকৃতি এখানে তার আপন মহিমায় উপস্থিত।
প্রয়োজনীয় তথ্য:
চট্টগ্রাম থেকে মাটিরাঙ্গা বাজার। সেখান থেকে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা অথবা মোটরসাইকেল। অবশ্যই প্রকৃতিকে বিরক্ত করা চলবে না। নিজে কিংবা প্রকৃতিকে খুঁজে পেতে হলে নীরবতা অপরিহার্য। জ্যোৎস্নাবাড়িতে রাতযাপন করতে জনপ্রতি খরচ হবে তিনবেলা খাবারসহ প্রায় ১ হাজার ৫শ’ টাকা। যোগাযোগ: ০১৮১৫-৮৫৬৪৯৭।

ছবি: লেখক ও দীপু।