আপনি কি ‘খেলার পুতুল’ !

প্রেমের সম্পর্কে যদি মনে হয় ‘বিষাক্ত সঙ্গী’র হাত থেকে নিস্তার পাওয়ার উপায় কী? তাহলে বুঝতে হবে সে হয়ত আপনার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2017, 08:52 AM
Updated : 3 May 2017, 08:52 AM

সম্পর্কবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রেম-ভালোবাসায় দেখাভাল করার বিষয়টা যেমন আত্মতৃপ্তি দেয় তেমনি অতিরিক্ত খবরদারি সম্পর্কে নিয়ে আসে তিক্ততা। আর একজন যদি অন্যকে সবসময় নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টায় থাকে তবে সেই সঙ্গী হয়ে ওঠে বিষের পাত্র।

এই ধরনের সঙ্গীকে চিনে নিতে আটটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।

১. ভালোবাসায় শর্ত: সঙ্গী যদি বলে দেয় ‘তুমি এইটা করতে পারলে আমি তোমাকে গ্রহণ করবো’- এর মানে সে ভালোবাসায় একটা সীমারেখা টেনে দিল।

সুস্থ সম্পর্কের প্রধান চাবিকাঠি হল একে অন্যকে বুঝতে পারা। অন্যের সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়ে সুন্দরভাবে এগিয়ে চলা। এর মাঝে যতটুকু সম্ভব ততটুকু ছাড় দেওয়ার চেষ্টা করা। তবে একজন যদি সবময় বলতে থাকে, ‘তুমি নিজেকে পরিবর্তন কর’ তাহলে সে কোনোভাবেই সুস্থ-সঙ্গী হতে পারে না।

২. অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখায় নিয়ন্ত্রণ: সঙ্গী যদি নির্বাচন করে দেয় কার সঙ্গে কথা বলবেন আর কার সঙ্গে বলতে পারবেন না- তার মানে সে অসুস্থ পন্থায় আপনাকে নিয়ন্ত্রিত করতে চাচ্ছে।

সামাজিকভাবে স্বাধীনভাবে কোনো রকম অপরাধবোধ ছাড়া যে কারও সঙ্গে মেলামেশা করার অধিকার সবারই আছে।

সুস্থ সম্পর্ক একে অন্যকে সম্মান ও বিশ্বাসের সঙ্গে সামাজিকভাবে জীবনযাপন করতে দেয়। তবে সামাজিক মেলামেশায় সঙ্গীর বিধিনিষেধ আরোপ করা মানে হল, সে আপনার জীবনও নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে। 

৩. ছলচাতুরী: সঙ্গী যদি আপনাকে দোষী, উদ্বিগ্ন, ঈর্ষাকাত, ভয় বা বিষণ্ন করে রাখার চেষ্টায় থাকে তাহলে বুঝতে হবে সে সবসময় আপনাকে তার হাতে মুঠোয় রাখতে চাইছে। যদিও অন্যের আচরণ বা কথায় আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আপনার হাতেই রয়েছে।

চতুর-সঙ্গী এমন আচরণ করবে যাতে মনে করেন আপনি দোষী, সে নয়। এই ধরনের মানুষ নিজেদের দোষ লুকিয়ে রাখতে ওস্তাদ। তাই এদের থেকে সাবধান থাকুন।

৪. অবিশ্বাস: দম্পতি এবং জুটিদের ওপর করা বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সম্পর্কের মাঝে নিরাপত্তা খুঁজে পায় না তারাই সন্দেহে ভোগে। একজন অনিশ্চয়তায় ভোগা সঙ্গী যেকোনো বিষয়ে দ্রুত বিতর্কে জড়ায়।

কোনো দোষ না থাকার পরও সঙ্গী যদি গোয়েন্দাগিরি ফলায়, গোপনে আপনার ফোন বা কম্পিউটার ঘাটায়, তাহলে বুঝতে সে আপনারকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। এটা এক ধরনের মানসিক রোগ।

বিশ্বাস ও ন্যায়পরায়ণতা না থাকলে সেই সম্পর্ক আর সুস্থ থাকে না। আপনি নিশ্চয় সারাজীবন অসুস্থ হয়ে কাটাতে চান না!

৫. সে আপনাকে বিষাদগ্রস্ত করে তুলবে: অপমানজনক কথা বা গালাগালি করে সে যদি সময় আপনাকে খাটো করে রাখে তাহলে অবশ্যই সেটা ভালো লক্ষণ নয়।

মতো-ভেদ থাকতেই পারে। আর সেটা সঙ্গীর সঙ্গে প্রকাশের ক্ষেত্রে সুস্থ উপায়ও আছে। তবে যন্ত্রণাদায়ক কথা বলে যদি সঙ্গী আপনাকে ব্যথা দিতে চায় তাহলে বুঝতে হবে, সে আপনাকে নেতিবাচক অবস্থায় নিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে।

৬. মারমুখী: প্রচণ্ড রাগ, মারামারি, জুলুম বা শাস্তি দেওয়ার হুমকি এমনকি শারীরিক সম্পর্কের মধ্যেও হিংস্রভাব প্রকাশ- এসব খুবই বিপজ্জনক। নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাড়াতাড়ি এই ধরনের সঙ্গীর কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্বে চলে যান।

যে ব্যক্তি শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় সে শুধু প্রেম-ভালোবাসায় নয় সমাজের জন্যও ক্ষতিকর।

৭. নিঃশেষিত: বিষাদগ্রস্ত, বিষণ্ণতা বা এই ধরনের বিষয়গুলো যদি সম্পর্কের মাঝে আপনাকে ঘিরে থাকে তাহলে বুঝতে হবে এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার সময় হয়ে গিয়েছে।

যে কোনো সুস্থ সম্পর্ক আপনাকে নিরাপদ, সুখী এবং মানসিকভাবে পরিপূর্ণ থাকার স্বাদ দেবে। সব দম্পতির মাঝেই দুঃখ বা তর্কবিতর্ক আসে। তবে এসবের পরিমাণ অবশ্যই কম হবে।

৮. আত্মমর্যাদার অভাব: যদি সঙ্গীর কথায় ও আচরণে ভাবতে শুরু করেন আপনার গুরুত্ব কম, তাহলে বুঝতে হবে সঙ্গী আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। আর সেটা যদি সম্পর্ক শুরু করা আগে যেমন ছিলেন তার চেয়েও বেশি হয়, তাহলে অবশ্যই নিজের ভালোর জন্য দূরে চলে যান।

‘দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো’- যে সম্পর্কে কোনো বিশ্বাস কাজ করে না, নিরাপত্তা দেয় না, সুস্থ ও ভালো বোধ আসে না, নিজেকে বিকিয়ে দিতে হয়, স্বকীয়তা ছাড়তে হয়- সেই ধরনের সম্পর্ক কখনও সুস্থ হতে পারে না। আর এই ধরনের সম্পর্কে কোনো ভালোবাসাও থাকে না। আপনি হয়ে যান খেলার পুতুল।

তাই নিজের ভালো চাইলে অবশ্যই নিজের জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসুন।

ছবি: রয়টার্স।