বৈশাখের বিশেষ রান্না ১

মতি কাবাব খিচুড়ি, সরষে আচারি মাংস, সরষে কৈ, আনারসের ঠাণ্ডাই এবং ক্ষীরসা পাতি মিষ্টির রেসিপি দিয়েছেন আসমা ওয়াহিদ।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 April 2017, 02:00 PM
Updated : 10 April 2017, 02:00 PM

ফেইসবুকে রাঁধুনিদের নিয়ে সমন্বয় করা ‘দি টেইল অফ টেস্ট’ পেইজ বাংলা নতুনবর্ষ উপলক্ষ্যে রন্ধনশিল্পীদের নিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। দেশের ও প্রবাসী প্রায় ৩০ জন রাঁধুনী প্রতিযোগীদের মধ্যে ১০ জনের রন্ধন পদ্ধতি প্রাথামিকভাবে বাছাই করা হয়। এরপর সেখানে থেকে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে সেরা তিনজকে নির্বাচন করা হয়।

এই প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে ছিলেন ‘দি টেইল অফ টেস্ট’য়ের পরিচালক গন রোয়েনা মাহজাবিন, জেএনতোরা, দিনা, মুনমুন মাহমুদ এবং আফরিনা নাজনিন। সহযোগিতায় ছিলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম’য়ের প্রতিনিধি ইশরাত জে. মৌরি।

বৈশাখের বিশেষ রান্নায় আজকের প্রকাশিত হল প্রতিযোগিতায় প্রথমস্থান করা রন্ধনশিল্পী আসমা ওয়াহিদ।

মতি কাবাব খিচুড়ি

কাবাবের জন্য:
গরুর মাংসের কিমা আধা কেজি। বুটের ডাল ১২৫ গ্রাম। আদাকুচি ১ টেবিল-চামচ। রসুন ১টি। শুকনা মরিচ ৮,১০ টি। ধনেগুঁড়া ১ চা-চামচ। জিরাবাটা ১ চা-চামচ। দারুচিনি ও এলাচ ৩ টুকরা করে। তেজপাতা ২টি। ডিম ২টি। কাবাব-মসলা  ১ চা-চামচ। পুদিনা-পাতা ২ টেবিল-চামচ। পেঁয়াজ বেরেস্তা  চার ভাগের এক কাপ। লবণ স্বাদ মতো। তেল ভাজার জন্য।

খিচুড়ির জন্য: পোলাওয়ের চাল আধা কেজি। মুগডাল ১২৫ গ্রাম। আদাবাটা ১ টেবিল-চামচ। রসুনবাটা  ১ টেবিল-চামচ। হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ। মরিচগুঁড়া ২ চা-চামচ। ধনেগুঁড়া ১ টেবিল-চামচ। জিরাবাটা ১ টেবিল-চামচ। পেঁয়াজকুচি ১ কাপ। দারুচিনি ও এলাচ ৪ টুকরা করে। তেজপাতা ২,৩ টি। তেল ১ কাপ ( সরিষা ও সয়াবিন)। ১টি রসুনের আস্ত কোঁয়া। কাঁচামরিচ ১০,১২ টি।

কিমার জন্য: আধা কেজি মুরগির মাংস কিমা করে, মাংসের মসলা অল্প করে দিয়ে রান্না করে নিন।

পদ্ধতি: কাবাবের জন্য ডিম, কাবাব মসলা, পুদিনা পাতা ও বেরেস্তা বাদে সব উপকরণ সিদ্ধ করে পাটায় বেটে নিতে হবে। এবার বাকি উপকরণ কাবাবের মিশ্রণে ভালো ভাবে মিশিয়ে ছোট ছোট গোল বল তৈরি করে ডুবো তেলে সোনালি করে ভেজে তুলে রাখুন ।

মুগডাল সোনালি করে ভেজে চাল ও ডাল মিশিয়ে ধুয়ে রাখতে হবে।

ছড়ানো হাঁড়িতে তেল দিয়ে পেঁয়াজ হালকা ভেজে সব মসলা দিয়ে কষিয়ে চাল-ডালের মিশ্রণ দিয়ে ভালো করে ভেজে নিন।

রান্না করা কিমা ও কিছু কাঁচামরিচ দিয়ে ভুনে চালের দ্বিগুন পরিমাণ পানি দিন। স্বাদ মতো লবণ ও আস্ত রসুনের কোয়াগুলো দিয়ে ঢেকে দিন।

পানি শুকিয়ে চাল সিদ্ধ হয়ে আসলে কিছুটা খিচুড়ি সরিয়ে কাবাবগুলো দিয়ে দিন। উপরে নিচে কাবাবগুলো ভালো করে দিয়ে কিছু কাঁচামরিচ ও বেরেস্তা ছড়িয়ে দমে রাখতে হবে আরও কিছুক্ষণ।

তারপর উপভোগ করুন মতি কাবাব খিচুড়ি।

সরষে আচারি মাংস

উপকরণ:
গরুর মাংস ১ কেজি। আদাবাটা ২ টেবিল-চামচ। রসুনবাটা ২ টেবিল-চামচ। মরিচগুঁড়া ২ টেবিল-চামচ। হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ। ধনেগুঁড়া ২ চা-চামচ। জিরাবাটা ১ টেবিল-চামচ। পেঁয়াজকুচি ১ কাপ। মোটা করে কাটা পেঁয়াজ আধা কাপ। আস্ত রসুনের কোঁয়া ২টি রসুন। সরিষাবাটা ১ টেবিল-চামচ। দারুচিনি ৪ টুকরা। এলাচ ৪,৫টি। পাঁচফোঁড়নের গুঁড়া ১ চা-চামচ। তেজপাতা ২,৩টি। আস্ত শুকনামরিচ ৫,৬টি। লবণ স্বাদ মতো। তেল ১ কাপ (সরিষা + সয়াবিন)।

পদ্ধতি: মাংস ধুয়ে পেঁয়াজ, তেল, আস্তরসুন, শুকনামরিচ, পাঁচফোঁড়নের গুঁড়া বাদে সব মসলা দিয়ে মাখিয়ে এক ঘণ্টা রেখে দিন।

হাঁড়িতে তেল গরম করে পেঁয়াজকুচি দিয়ে হালকা ভেজে মাংস দিন। অল্প জ্বালে মাংস ভালো করে কষাতে হবে। তারপর লবণ দিন। সময় নিয়ে মাংস ভালো করে অর্ধেক সিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত কষান।

এই সময়ের মধ্যে আস্ত রসুনের কোঁয়া, আস্ত শুকনা মরিচ, মোটা করে কাটা পেঁয়াজ, পাঁচফোঁড়নের গুঁড়া দিয়ে দিন। আরও একটু কষিয়ে পরিমাণ মতো পানি দিয়ে সিদ্ধ করে নিন। পানি শুকিয়ে মাংস ভুনা ভুনা হলে নামিয়ে ফেলুন।

ইচ্ছা হলে একটু জিরাও দেওয়া যায়।

সরষে কই

উপকরণ:
কই মাছ ৪টি মাঝারি আকারের। পেঁয়াজকুচি ১ কাপ। আদাবাটা আধা টেবিল-চামচ। রসুনবাটা ১ টেবিল-চামচ। হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ। শুকনা মরিচগুঁড়া ১ টেবিল-চামচ। ধনেগুঁড়া ১ চা-চামচ। জিরাবাটা ১ টেবিল-চামচ। সরিষাবাটা ৩ টেবিল-চামচ। তেল আধা কাপ (সরিষা ও সয়াবিন মেশানো)। লবণ স্বাদ মতো। কাঁচামরিচ ৮,১০টি।

পদ্ধতি: মাছ কেটে ধুয়ে সামান্য হলুদ-মরিচের গুঁড়া ও লবণ মাখিয়ে ভেজে নিন।

প্যানে তেল দিয়ে পেঁয়াজ একটু ভেজে একে একে সব মসলা ভালো করে কষিয়ে নিন। সরিষাবাটাও দিয়ে কষিয়ে ফেলুন। ভাজা মাছগুলো দিয়ে একটু কষিয়ে পরিমাণ মতো পানি ও কাঁচামরিচ দিতে হবে।

পানি শুকিয়ে, মাছ তেলের উপর উঠলে আরও কিছু কাঁচামরিচ দিয়ে একটু ঢেকে রেখে নামাতে হবে।

আনারসের ঠাণ্ডাই

উপকরণ:
আনারস ১টি। পুদিনাপাতা ২ টেবিল-চামচ। কাঁচামরিচ ৩টি। চিনি ২,৩ টেবিল-চামচ। লবণ ১ চা-চামচ। ঠাণ্ডা পানি আধা লিটার। বিট লবণ ১ চা-চামচ। বরফ প্রয়োজন মতো।

পদ্ধতি: আনারস ছিলে টুকরা করে কেটে নিন। এবার সব উপকরণ ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। মিশ্রণটা মোটা ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে পরিবেশন করুন।

একটু অন্যরকমভাবে পরিবেশন করতে চাইলে, একটা আনারসের মুখ কেটে ছুরি ও চামচ দিয়ে আনারসের শাঁস  বের করে তাতে ঢেলে পরিবেশন করতে পারেন।

ক্ষীরসা পাতি মিষ্টি

এই মিষ্টিতে প্রথমে লম্বা করে স্পঞ্জ রসগোল্লা বানিয়ে, ভেতরে ক্ষীরসা দিয়ে মাওয়ায় গড়িয়ে নিতে হবে।

স্পঞ্জ রসগোল্লার জন্য: দুধ ১ লিটার। ভিনিগার অথবা ছানার পানি আধা কাপ। ভিনিগার নিলে আধা কাপ পানি ও ভিনিগার সমান করে মিলিয়ে নিতে হবে।

সিরার জন্য: চিনি দেড় কাপ। পানি ৪ কাপ।

ছানা তৈরি: দুধ জ্বাল দিন। ফুটে উঠলে চুলা বন্ধ করে ছানার পানি বা ভিনিগার অল্প অল্প করে দিতে হবে। এবং চামচ দিয়ে নেড়ে দেখতে হবে।

সবুজ পানি ছাড়লে পাঁচ মিনিট পর ছানা পাতলা কাপড়ে ঢেলে পানিটা ঝরিয়ে নিন। এভাবে এক ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এক ঘণ্টা পর বাড়তি পানি চেপে বের করে নিন। এবার ছানাটা ভালো করে মথে নেবেন। হাতে তেল উঠলে বুঝতে হবে মথা হয়ে গেছে।

ছানার সঙ্গে ১ চা-চামচ ময়দা ও ১ চা-চামচ চিনি মিশিয়ে দিতে পারেন মথার সময়।

সিরা চুলায় দিন। ফুটে উঠলে ছানা দিয়ে লম্বা করে মিষ্টি বানিয়ে সিরায় ছেড়ে ঢেকে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে নেবেন। চুলা বন্ধ করে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা এভাবে সিরায় রাখতে হবে।

ক্ষীরসা তৈরি: দুধ ১ লিটার। চিনি তিন ভাগের এক কাপ। ময়দা ১ চা-চামচ (ইচ্ছা)।

দুধ ও চিনি চুলায় দিয়ে নেড়ে নেড়ে জ্বাল দিয়ে ঘন করতে হবে। প্রয়োজন হলে অল্প ময়দা বা গুঁড়া দুধ দেওয়া যায়। একদম ঘন হলে নামিয়ে ফেলুন।

আসমা ওয়াহিদ।

মাওয়া তৈরি:
গুঁড়া দুধ আধা কাপ। ঘি আধা চা-চামচ। গোলাপ পানি ১,২ ফোঁটা। সব উপকরণ মিশিয়ে নিলেই হয়ে যাবে।

মিষ্টি তৈরির পদ্ধতি: স্পঞ্জ রসগোল্লার রস হালকা চিপে ছুরি দিয়ে মাঝে কেটে ক্ষীরসা ঢুকিয়ে দিতে হবে। এবার মিষ্টিগুলো মাওয়ায় গড়িয়ে নিন একটা একটা করে। উপর দিয়ে পেস্তা বাদাম কুচি ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।